গত শুক্রবার, মার্কিন রাষ্ট্রপতি করোন ভাইরাস মহামারীটির জন্য চীনকে দোষারোপ করেছেন এবং ব্যাখ্যা করেছেন যে গত বছরের শেষের দিকে চীনা কর্তৃপক্ষ তাদের দেশে সংক্রমণের কেন্দ্রবিন্দু থেকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছ প্রতিটি সম্ভাব্য উপায়ে লুকিয়ে রেখেছে। অবশ্যই, এই গুরুতর অভিযোগ বিশ্বব্যাপী শেয়ার বাজারগুলোতে হ্রাস, প্রতিরক্ষামূলক সম্পদের চাহিদা বৃদ্ধি এবং মার্কিন ডলার মানের বৃদ্ধির কারণ হয়েছিল।
আমেরিকানরা বরাবরের মতো, কোভিড-১৯ মহামারীতে তাদের ভয়াবহ বিপর্যয়ের জন্য কে দায়ী তা খুঁজে বের করার চেষা করে। স্বাভাবিকভাবেই দায়ভার তারা চীনের উপর চাপিয়ে দেয়। সুতরাং, প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে দ্বিধা করায় এই মহামারীতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু এবং আক্রান্তের সংখ্যা দেখেছে যুক্তরাষ্ট্র, কিন্তু তারা ইচ্ছা করলে রাশিয়া, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া এবং অন্যান্য বেশ কয়েকটি দেশ শীতকালে যে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েছিলো তা গ্রহণ করতে পারত। এখন বেইজিংকে সব কিছুর জন্য দোষারোপ করে ওয়াশিংটন নিজের দায়িত্ববোধের অবহেলা থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করছে, ফলে দেশ দুটির মধ্যে অতিরিক্ত উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, যা কোনো সহজ বিষয় নয়।
চীনের প্রতি ওয়াশিংটনের আক্রমণ দেশগুলির মধ্যে উত্তেজনা বাড়ার আশঙ্কা জাগিয়ে তুলেছে, আমেরিকা যদি কেবল অযুহাত দেখিয়ে দোষারোপের সিদ্ধান্ত নেয়, তবে আরও গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং এখন সবকিছুই ঠিক তেমনি হতে চলেছে। আসলে, বেইজিং চীনের ক্রয় করা ট্রেজারির জন্য সুদ দিতে অস্বীকার করছে এবং সাধারণত এই তহবিল ফেরতের সম্ভাবনাও কম। অন্যদিকে, ট্রাম্পের সাথে সমমনা রাষ্ট্রগুলো বলেছে যে তারা পিআরসি থেকে ক্ষতিপূরণ পেতে চায়।
অবশ্যই, এই ধরনের সম্ভাবনা বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত করেছে। এর ফলে ডলার শক্তিশালীকরণ ও বাজারগুলিতে ঝুঁকি হ্রাস করার দিকে পরিচালিত করে।
প্রশ্ন উঠেছে: এই সমস্যাটি কী রূপ লাভ করবে এবং বাজারে কীভাবে প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে?
আমরা বিশ্বাস করি যে এ পর্যন্ত ট্রাম্পের বক্তব্যগুলো মহামারী শুরু হওয়ার বিষয়ে ট্রাম্পের আগাম ধারণার অভাব এবং সে জন্য প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য করেছেন। যদি এটি হয় এবং সবকিছু কেবল বাক্য এবং শব্দের স্তরে থাকে তবে পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তিত হবে এবং সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। বিনিয়োগকারীরা এক্ষেত্রে গিলিয়েড সায়েন্সেস থেকে সিওভিড -১৯ থেকে এর ঔষধ এর সম্ভাবনার দিকে মনোনিবেশ করবে, যা এই সপ্তাহে বিক্রি হবে বলে জানা গেছে। এছাড়াও, বাজারগুলো আবার তাদের বিনিয়োগের মডেলগুলো ফেডারেল রিজার্ভ এবং মার্কিন ট্রেজারি থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিস্তৃত সমর্থন এবং মহামারীর সমাপ্তির সম্ভাবনাগুলিকে বিবেচনায় নিয়ে করবে।
আমরা বিশ্বাস করি যে চীনের দায়িত্ববোধের বিষয় যে প্রশ্ন উঠেছে সে সম্পর্কিত নেতিবাচক মনোভাব দুর্বল হলে ডলারের উপর পুনরায় চাপ বাড়বে। তবে যদি এই পরিস্থিতি চলমান থাকে ঘটে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ ও অ্যাংলো-স্যাকসন কমনওয়েলথ ভুক্ত দেশগুলো, যেমন - কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড চীনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করায় তাহলে ডলারের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে এবং বাজারে ঝুঁকি গ্রহণের সম্ভাবনা কমে আসবে। তবে, এই পরিস্থিতি অস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাই সারা বিশ্ব ডলার থেকে সরে আসবে। এক্ষেত্রে আমরা মার্কিন মুদ্রার কিছু বিকল্প হিসাবে ইউরো, ইয়েন, পাউন্ড এবং সুইস ফ্র্যাঙ্কের চাহিদা বাড়ার প্রত্যাশা করি।
দিনের মধ্যে ঘটতে পারে এমন আগাম তথ্য:
EUR / USD কারেন্সি পেয়ার নিম্নমুখী কারেকশনে রয়েছে, কারণ ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের চাহিদা বাড়ছে। এই পরিস্থিতি চলমান থাকলে এই কারেনিস পেয়ার 1.0905 লেভেলের পর ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে। একইসাথে, 1.0940 স্তরের উপরে উঠলে তা 1.1000 স্তরের দিকে চলমান থাকবে।
চীনকে দোষারোপের পরিপ্রেক্ষিতে AUD/USD জুটি চাপে রয়েছে। যদি উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে কারেন্সি পেয়ার 0.6375 এর স্তরের নিচে নেমে যেতে পারে এবং তা নিম্নমুখী হয়ে 0.6250 এর দিকে চলমান থাকবে । অন্যদিকে, উত্তেজনা হ্রাসের ফলে এই কারেন্সি পেয়ার বিপরীত প্রবণতা তৈরি করতে পারে এবং তা 0.6570 লেভেল পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।