গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রধানত মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ কর্তৃক সুদের হার বৃদ্ধি এবং আর্থিক প্রণোদনা প্রদান কার্যক্রমের সমাপ্তির বিষয়দুটি আলোচনায় রয়েছে। ফরেক্স এবং মার্কিন ইক্যুইটি মার্কেট উভয় ক্ষেত্রেই এটি এখন আলোচনার প্রধান বিষয়। গত দুই সপ্তাহে লক্ষ্যণীয় যে শেষ পর্যন্ত ট্রেডাররা এই বিষয়গুলোর গুরুত্ব অনুধাবন করতে শুরু করেছে। চলতি বছর সুদের হার 4 বার বাড়ানো হতে পারে এবং মার্চ মাসেই প্রণোদনা কার্যক্রম QE প্রোগ্রামের সমাপ্তির ঘোষণা আসতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা মুদ্রা সংক্রান্ত নীতিমালায় হকিশ বা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। বিনিয়োগকারী এবং ট্রেডাররা গত দুই বছরে ফেডারেল রিজার্ভের নমনীয় বা ডাভিশ অবস্থানের সাথে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। সুতরাং, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিগত পরিবর্তন তাদের হতবাক করতে পারে। এছাড়া আসন্ন ভবিষ্যতের কঠোর নিয়ন্ত্রণ এখনও পর্যন্ত ইক্যুইটি বাজারের মূল্য কোন প্রভাব ফেলেনি। মার্কিন পুঁজিবাজারের প্রধান সূচকসমূহ দুই সপ্তাহ ধরে বিয়ারিশ বা মন্দার মধ্যে থাকলেও, সর্বকালের উচ্চতার আশেপাশেই রয়েছে। অতএব, ইক্যুইটি বাজার আরও ব্যাপক পতনের সম্মুখীন হতে পারে। অধিকন্তু, ফেডারেল রিজার্ভ এখনও কঠোর নীতিমালা আরোপ করতে শুরু করেনি। সর্বোপরি, প্রণোদনা কার্যক্রম QE প্রোগ্রাম এখনও কার্যকর আছে। সুতরাং আমেরিকান অর্থনীতিতে এখনও নগদ অর্থের প্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। তা সত্ত্বেও, পুঁজিবাজারের সূচকসমূহ ইতিমধ্যেই নিম্নমুখী হতে শুরু করেছে।
প্রযুক্তি কোম্পানির স্টক এবং যেসব কোম্পানির স্টক গত দুই বছরে সেরা ফলাফল দেখিয়েছে সেগুলো সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে কারণ এগুলোর সবচেয়ে বেশি দরপতন হতে পারে৷ স্পষ্টতই, নেতিবাচক প্রবণতার ফলে, বিনিয়োগকারীরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ থেকে তাদের মূলধন সরিয়ে নিতে শুরু করবে। টেসলা এবং অ্যাপলের স্টক মূল্য দর্শনীয় আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা নিয়মিত বৃদ্ধি, আয় বা উৎপাদনের পরিমাণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। অর্থাৎ, এই কোম্পানি দুটির স্টক অতিরিক্ত ক্রয় অঞ্চলে রয়েছে এবং দরপতনের ঝুঁকির মধ্যে আছে বলে বিবেচিত হবে। আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে, এগুলোর মূল্য কোকা-কোলার মতো কোম্পানির স্থিতিশীল স্টকের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে হ্রাস পেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা ধারনা করছেন যে এনভিডিয়ার মতো সংস্থাগুলোর স্টকের মূল্য প্রধানত ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিংয়ের আগ্রহ বৃদ্ধির কারণে বেড়েছে, সেগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷ সর্বোপরি, ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারে পতন অব্যাহত থাকতে পারে, ফলে মাইনিং কার্যক্রমের চাহিদাও হ্রাস পেতে পারে। পাশাপাশি, মুদ্রানীতির কঠোরতা সত্ত্বেও পর্যটন সংস্থাগুলোর স্টকের মূল্য বাড়তে পারে। পর্যটন শিল্প কঠিন সময় পাড়ি দিয়েছে এবং এখন পুনরায় আগের জায়গায় ফিরতে প্রস্তুত। অবশ্যই, কেবলমাত্র কোভিডের নতুন কোন ধরন আবির্ভূত না হলেই এটি সম্ভব হবে। এয়ারলাইন্স কোম্পানিগুলোর স্টক এবং অন্যান্য পরিবহন কোম্পানির শেয়ারের ভবিষ্যতও একই বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। ক্রমাগত লকডাউনের কারণে, পর্যটন ও পরিবহন খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট অনেক কোম্পানিই দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে চলে গেলেও সরকারী ভর্তুকি এবং ঋণের মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেয়া হয়েছিল। সামগ্রিকভাবে, আমরা আশা করছি যে 2022 সালে বড় কোম্পানিগুলোর স্টকের মূল্য পড়তির দিকে থাকবে।