বৃহস্পতিবার ট্রেডিং শেষ হওয়ার সময়, তিনটি প্রধান ইউরোপীয় স্টক এক্সচেঞ্জই ৩%-এর বেশি পতনের মধ্যমে ট্রেড বন্ধ করেছে। পশ্চিম ইউরোপে ক্রমবর্ধমান সামরিক সংঘাতের মধ্যে বিনিয়োগকারীরা সক্রিয়ভাবে ঝুঁকির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল।
ফলস্বরূপ, ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলোর স্টকস ইউরোপ ৬০০ সূচক 3.3% কমে 438.99 পয়েন্টে নেমে এসেছে। স্টক সূচকের উপাদানগুলোর প্রধান ক্ষতিগ্রস্থরা ছিল রাশিয়ার শীর্ষস্থানীয় রৌপ্য উৎপাদক পলিমেটাল ইন্টারন্যাশনালের সিকিউরিটিজ, যা তার মূল্যের 37.8% হারিয়েছে। রাইফিসেন ব্যাংক ইন্টারন্যাশনাল এজি -এর শেয়ার 23.1% কমেছে, ব্যাংক পোলস্কা কাসা ওপেকি এস.এ. হারিয়েছে 14.5%, এবং কমার্সব্যাংক এজি এর শেয়ারমূল্য 13.1% কমেছে৷
বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ FTSE 100 এর সূচক 3.9% হ্রাস পেয়ে 7,207.01 পয়েন্টে, ফ্রেঞ্চ CAC 40 এর সূচক 3.83% কমে 6,521.05 পয়েন্টে এবং জার্মান DAX সূচক 4% কমে 1,4052.1 পয়েন্টে ছিল।
ফিনিশ টায়ার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নোকিয়ান রেংকাত ওয়িজের শেয়ার মূল্য 15% কমেছে। জার্মান শক্তিউৎপতপাদক প্রতিষ্ঠান ইউনিপার এসই 14% এবং পোলিশ অনলাইন খুচরা বিক্রেতা অ্যালেগ্রো.ইইউ এসএ হারিয়েছে 13.8% মূল্য হারিয়েছে।
জার্মানির বৃহত্তম আর্থিক সংস্থা ডয়েচে ব্যাংক এজি, এর শেয়ার মুল্য 12.5% কমেছে,
জার্মান টায়ার এবং গাড়ির প্রস্তুতকারক কন্টিনেন্টাল এজি –এর শেয়ার 7.5% ডুবেছে, এবং বৃহত্তম গাড়ি তৈরিকারক বিএমডাব্লিউ এবং পোর্শে 7.2% মূল্য হারিয়েছে। ধাতব এবং খননকারী কোম্পানি, এভরাজ পাব্লিক লিমিটেড কোম্পানির শেয়ারমূল্য 30.4% হ্রাস পেয়েছে এবং রাশিয়ান সোনার খনির অধিকারী পেট্রোপাভলভস্কের শেয়ারমূল্য কমেছে 27%।
ইউরোপের ব্যাংকিং এবং স্বয়ংচালিত পরিবহন খাতগুলো বৃহস্পতিবার সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এবং যথাক্রমে 8.2% এবং 6% হ্রাস পেয়েছে। এদিকে, তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রে মূল্য কমেছে মাত্র 0.3% কারণ তেলের বিশ্বব্যাপী মূল্য ২০১৪ সালের পর সর্বোচ্চ পরিমাণ বেড়েছে।
আগের দিন পররাষ্ট্র নীতির বিষয়টি ইউরোপীয় শেয়ার বাজারে অংশগ্রহণকারীদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। বৃহস্পতিবার সকালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন।
জবাবে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়াকে কঠোর নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছে। ইউক্রেন সামরিক আইন জারি করেছে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান আরসুলা ভন দের লেয়ানের মতে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার নতুন প্যাকেজের লক্ষ্য হবে পুঁজিবাজারে তার প্রবেশাধিকার কঠোরভাবে সীমিত করা।
এছাড়াও, বৃহস্পতিবার, বেশ কয়েকটি বড় ইউরোপীয় কোম্পানি পূর্ববর্তী সময়ের জন্য তাদের আর্থিক ফলাফল প্রকাশ করেছে।
যেমন, ব্রিটিশ বিলাসবহুল গাড়ি নির্মাতা রোলস-রয়েস গত বছর তার প্রাক-কর ক্ষতি কমাতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও, রোলস-রয়েসের ব্যবস্থাপনা কমিটি ২০২২ সালের শেষে সিইও ওয়ারেন ইস্টের পদত্যাগ করার পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। কোম্পানিটির শেয়ারের মূল্য এ পর্যন্ত 13% কমেছে।
২০২১ সালে কোম্পানির নিট মুনাফা 7.5 গুণ বৃদ্ধি করা সত্ত্বেও ইতালীয় গাড়ির টায়ার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পিরেলি এবং সি স্পা -এর শেয়ারমূল্য 10.4% কমেছে।
টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি ডয়েচে টেলিকম এজি চতুর্থ ত্রৈমাসিকে মূল্য হারিয়েছে 5.4%। এবং চতুর্থ ত্রৈমাসিকে কোম্পানির নিট মুনাফা 72% কমেছে। এই পরিসংখ্যান প্রাথমিক বাজার পূর্বাভাসের চেয়েও খারাপ ছিল।
আন্তর্জাতিক পানীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, অ্যানহাইজার-বুশ ইনবেভ আগের ত্রৈমাসিকে শক্তিশালী উপার্জন সত্ত্বেও, তার বাজার মূলধনের 1.4% হারিয়েছে৷ তবে অ্যানহাইজার-বুশ ইনবেভ -এর নেট আয় এবং রাজস্ব বিশ্লেষকদের প্রাথমিক পূর্বাভাসের চেয়ে ভাল অবস্থানে উঠে এসেছে।