মার্কিন ডলার ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত রেখে ইতিবাচকভাবে নতুন সপ্তাহ শুরু করেছে। মার্কিন ডলার বা গ্রিনব্যাকের অবিচলিত বৃদ্ধির পটভূমির বিপরীতে, ইউরোর অবস্থান উল্লেখযোগ্যভাবে নড়বড়ে হয়ে গেছে। বাজারে এই আশঙ্কা বিদ্যমান যে ইউরোর শুধুমাত্র পতনই হবে, অনির্দিষ্টকালের জন্য নিম্নস্তরে অবস্থান করবে।
ইতপূর্বে, বিশেষজ্ঞরা ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক প্রাথমিকভাবে সুদের হার বৃদ্ধিকে ইউরোর সংকট উত্তোরণের হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন। ইসিবিকে দৃঢ়ভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পথ অনুসরণ করার এবং প্রায় প্রতিটি বৈঠকে সুদের হার বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তবে, ইউক্রেনকে ঘিরে সামরিক সংঘাত বৃদ্ধির ফলে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক অন্য কাজে ব্যস্ত। এই মুহুর্তে, ইউরোপীয় নেতারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে আসন্ন নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে নিযুক্ত রয়েছেন। উল্লেখ্য, ব্যাঙ্ক অফ রাশিয়ার আন্তর্জাতিক সম্পদ বিপদের মুখে পড়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে মার্কিন ডলার বা গ্রিনব্যাক শক্তিশালী বৃদ্ধির দিক দিয়ে চালকের অবস্থানে উঠে এসেছে এবং ইউরোর অবস্থানকে দুর্বল করেছে। সোমবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি সকালে, বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ঝুঁকি না গ্রহণ করার প্রবণতার মধ্যেই মার্কিন মুদ্রা ইউরোপীয় মুদ্রার বিপরীতে বেড়েছে। এর কারণ হচ্ছে ইউক্রেনকে ঘিরে ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির জটিলতা এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক বিধিনিষেধ আরোপ। শেষ সেশনের শেষ সময়ে EUR/USD পেয়ারের মূল্য 1.1162 স্তরের কাছাকাছি ছিল যা 1.1267 স্তর থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে নিচে নেমে গেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইউরোর বিপরীতে গ্রিনব্যাকের বৃদ্ধি শুধুমাত্র ঝুঁকিগ্রহণ থেকে বিনিয়োগকারীদের ব্যাপকভাবে প্রত্যাহারই করবে না, মার্কিন স্টক ফিউচারের পতনের কারণও। ফেব্রুয়ারির শেষ দিনে, ইউরোর সাথে আমেরিকান সিকিউরিটিজের ফিউচারে পতন দেখা গিয়েছে। বাজারে চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে ডলার এবং ইয়েন সবার পছন্দের মুদ্রা হয়ে উঠেছে।
ভূ-রাজনীতির "ব্ল্যাক সোয়ান" বাজারে ফেডারেল রিজার্ভ এবং ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের হার বৃদ্ধির প্রত্যাশায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে। এই মুহুর্তে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক এই পদক্ষেপসমূহ পর্দার আড়ালে চলে গেছে, যদিও মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইউক্রেনীয় সংঘাতের কারণে কঠোর আর্থিক নীতিমালার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে চায় না। মুদ্রানীতিমালার পরিবর্তন গ্রিনব্যাকের বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে, তবে মার্কিন স্টক মার্কেট এবং বৈশ্বিক স্টক মার্কেটের একযোগে পতন পরিস্থিতি 180 ডিগ্রি ঘুরিয়ে দেবে। মুদ্রানীতিমালায় কঠোরতা আরোপের ফলে, বিনিয়োগকারীরা ব্যাপকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লং ডেবট সিকিউরিটিজ থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করবে এবং মার্কিন স্টক মার্কেটে বর্তমান পরিস্থিতি বহাল থাকবে। এই ধরনের একটি অস্পষ্ট পরিস্থিতি মার্কিন ডলারের অবস্থানকে নাড়িয়ে দিতে পারে।
বর্তমানে, মার্কিন মুদ্রা রাশিয়া বিরোধী নিষেধাজ্ঞার সম্ভাব্য নেতিবাচক পরিণতির আশংকায় রয়েছে। অনেক বিশ্লেষক বিধিনিষেধ আরোপের কারণে বিশ্ব অর্থনীতির সম্ভাব্য পতনের আশংকা করছে । মার্কিন মুদ্রার বুলিশ প্রবণতা বাজারের প্রধান ট্রেডারদের নজর কেড়েছে এবং বৃহৎ বিনিয়োগ তহবিল টানা দ্বিতীয় সপ্তাহে মার্কিন ডলারের বৃদ্ধির মধ্যেই তাদের অবস্থান বাড়াচ্ছে। গত সপ্তাহে, বিভিন্ন বিনিয়োগ তহবিল গ্রিনব্যাকের ক্রয় 3% বৃদ্ধি করেছে। বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন এই প্রবণতা মার্কিন মুদ্রার আরও শক্তিশালী বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।