ডোনাল্ড ট্রাম্প কৌশলগত রিজার্ভ গঠনের ঘোষণা দেয়ার পর বিটকয়েন নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে বলে মনে হয়েছিল। তবে বাস্তবে, মার্চের শুরুতে পরিলক্ষিত BTC/USD-এর মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুধুমাত্র একটি 'ডেড ক্যাট বাউন্স' হিসেবেই রয়ে গেছে। ক্রেতাদের বুলিশ প্রবণতা পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, কারণ এই রিজার্ভে বিনিয়োগকারীরা অন্যান্য টোকেনের সংযুক্তির সম্ভাব্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
ক্রিপ্টো মার্কেটে পুনরায় নিম্নমুখী প্রবণতা ফিরে এসেছে। ২০২২ সালের পর থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিটকয়েন সবচেয়ে বাজে পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেছে, উল্লেখ্য যে ২০২২ সালে বিটকয়েনের মূল্যের গভীর মন্দার পরিলক্ষিত হয়েছিল। তবে, ক্রিপ্টো ইটিএফ চালু হওয়া এবং ট্রাম্পের পক্ষ থেকে ক্রিপ্টো ইন্ডাস্ট্রির প্রতি আরও নমনীয় নীতিমালার প্রতিশ্রুতি ও কৌশলগত রিজার্ভ গঠনের ঘোষণা BTC/USD-এর মূল্যকে রেকর্ড উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল।
মাসিক ভিত্তিতে বিটকয়েনের মূল্যের গতিশীলতা
সেই রেকর্ড উচ্চতার পর থেকে, সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের অবনতি, বিনিয়োগ ঝুঁকির প্রতি বিশ্বব্যাপী আগ্রহ হ্রাস, বিশেষায়িত এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ড থেকে মূলধন অপসারণ, ক্রিপ্টো ইতিহাসের বৃহত্তম হ্যাকের ঘটনা, এবং ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতিতে বিনিয়োগকারীদের হতাশা—এসব কারণে বিটকয়েনের মূল্য প্রায় এক-তৃতীয়াংশ হ্রাস পেয়েছে।
২০২৪ সালের শেষের দিকে, বিনিয়োগকারীরা আশা করছিলেন যে আর্থিক উদ্দীপনা ও নিয়ন্ত্রণ শিথিলকরণ মার্কিন অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে। কিন্তু ২০২৫ সালের শুরুতে, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি দ্রুত পরিবর্তিত হয়েছে। এখন সবচেয়ে সম্ভাব্য পরিস্থিতি হচ্ছে 'স্ট্যাগফ্লেশন'—যেখানে জিডিপি প্রায় স্থবির অবস্থায় রয়েছে, কিন্তু মুদ্রাস্ফীতি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এই ধরনের পরিস্থিতি মার্কিন স্টক মার্কেটের জন্য অত্যন্ত প্রতিকূল। স্টক মার্কেটের দরপতন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঝুঁকির প্রতি আগ্রহ কমিয়ে দেয়, যা BTC/USD-এর মূল্যের ওপরও চাপ সৃষ্টি করছে।
এটা অবাক করার মতো নয় যে, ফেব্রুয়ারিতে বিটকয়েন-ভিত্তিক ইটিএফগুলো থেকে রেকর্ড $৩.৩ বিলিয়ন মূলধন অপসারণ হয়েছে, যা এই ফান্ডগুলোর ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
বিটকয়েনের ইটিএফের মূলধন প্রবাহের গতিশীলতা
বাইবিট এক্সচেঞ্জ হ্যাক এবং $১.৫ বিলিয়ন মূল্যের ইথার হ্যাকের ঘটনা মার্কেটে আরও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। নিম্নমানের নিরাপত্তার কারণে বিনিয়োগকারীরা তাদের তহবিল সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন, যা BTC/USD-এর দরপতনকে আরও ত্বরান্বিত করেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট দেওয়ার পরেই মার্কেটে কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরে আসে, যেখানে বলা হয়েছিল যে কৌশলগত রিজার্ভে শুধু বিটকয়েন ও ইথেরিয়াম নয়, বরং XRP, SOL, এবং ADA-ও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। বিনিয়োগকারীরা ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি প্রায় ভুলতেই বসেছিলেন, আর ঠিক তখনই এই ঘোষণা এলো!
তবে, BTC/USD-এর ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা স্থায়ী হয়নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল যে, কৌশলগত রিজার্ভে শুধুমাত্র সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত বিটকয়েন অন্তর্ভুক্ত করা হবে। অন্যসব ডিজিটাল অ্যাসেট সরকারকে কিনতে হবে, তবে কংগ্রেস ইতোমধ্যে এই ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছে। সম্ভাবনা রয়েছে যে, ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি শেষ পর্যন্ত নিছকই রাজনৈতিক বক্তব্য হিসেবেই থেকে যাবে। যদি তাই হয়, তাহলে ক্রিপ্টো মার্কেটে আরও বড় ধরনের বিক্রির প্রবণতা সৃষ্টি হতে পারে।
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ
দৈনিক চার্টে, বর্তমানে BTC/USD-এর মূল্যের বুলিশ প্রবণতার সমাপ্তি ঘটেছে এবং কারেকশন শুরু হয়েছে, যা সম্পূর্ণরূপে বিয়ারিশ প্রবণতায় রূপান্তরিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করছে। শুধুমাত্র বিটকয়েনের মূল্য ৯১,৩০০ লেভেলের ওপরে স্থায়ীভাবে উঠতে পারলেই পরিস্থিতি বদলাতে পারে। তাই মূল্য এই লেভেলের নিচে থাকা পর্যন্ত শর্ট পজিশন (বিক্রির কৌশল) ওপেন করাই বেশি উপযুক্ত কৌশল হিসেবে বিবেচিত হবে।