গতকাল বিটকয়েন এবং ইথেরিয়ামের মূল্য ৩%-৫% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোর তীব্র কারেকশনের সমাপ্তি ঘটতে পারে।
চীনের আর্থিক ও মুদ্রানীতির মাধ্যমে অর্থনৈতিক উদ্দীপনার বৃদ্ধি এবং ভোক্তা ব্যয় বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চলমান বাণিজ্য উত্তেজনার প্রভাব কমাতে সহায়ক হতে পারে, যা এই ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের চাহিদাকে আরও শক্তিশালী করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক নীতিমালা সংক্রান্ত পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী লিকুইডিটি বৃদ্ধি পেতে পারে, যে প্রবণতাটি বিটকয়েন সহ অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাসেটগুলোর মার্কেটেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
চীনের বিশেষ ট্রেজারি বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে ৩০০ বিলিয়ন ইউয়ান ব্যয় বাড়ানোর পরিকল্পনা, সুদের হার কমানো, এবং রিজার্ভের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস করার মতো নীতিমালা ভোগ্যপণ্যের বাজারকে উৎসাহিত করবে। ইতিহাস অনুযায়ী, বড় আকারের উদ্দীপনামূলক নীতিমালা এবং নমনীয় মুদ্রানীতির ফলে ক্রিপ্টো মার্কেটে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে।
যদিও চীনে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিষিদ্ধ, তথাপি সেখানকার অর্থনৈতিক উদ্দীপনার ফলে মার্কেটে সেই প্রভাব অনুভূত হয়।কেননা, যখন দেশটির সরকার অর্থনীতিতে নতুন মূলধন প্রবাহিত করবে, তখন এর একটি অংশ উচ্চ রিটার্নের সন্ধানে বিকল্প মার্কেটে প্রবাহিত হতে পারে, যার মধ্যে ক্রিপ্টো মার্কেটও অন্তর্ভুক্ত। সুদের হার হ্রাস পেলে, ঐতিহ্যবাহী বিনিয়োগগুলোর আকর্ষণ কমে যায়, যা বিনিয়োগকারীদের অন্যান্য সুযোগ সন্ধান করতে উৎসাহিত করে।
তবে, এটি সরাসরি সম্পর্কযুক্ত নয়, কারণ ক্রিপ্টো মার্কেটের গতিবিধি নির্ধারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, এবং বিনিয়োগকারীদের মনোভাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৭ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য ট্রাম্পের ক্রিপ্টো কনফারেন্স মার্কেটে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে
সংক্ষিপ্ত-মেয়াদে, মার্কেটের দিকনির্দেশনা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার উপর নির্ভর করবে, যিনি ৭ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য একটি ক্রিপ্টো কনফারেন্সে বক্তব্য রাখবেন। মার্কেটের বেশিরভাগ ট্রেডার মার্কিন ক্রিপ্টো রিজার্ভ ফান্ড গঠনের বিষয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা নিয়ে স্পষ্ট সংকেতের আশা করছেন।
বিনিয়োগকারীরা আশাবাদী যে, ট্রাম্প ক্রিপ্টো রিজার্ভ সংক্রান্ত কৌশল সম্পর্কে আলোকপাত করবেন এবং শিল্প-বান্ধব আইনগত পদক্ষেপের প্রতি সমর্থন জানাতে পারেন, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে এবং বাজারে নতুন মূলধন প্রবাহিত করতে সাহায্য করতে পারে।
তবে, এ নিয়ে অনেকেই সংশয়ে রয়েছেন। কিছু বিশ্লেষক মনে করেন যে, ট্রাম্পের বক্তব্য জনপ্রিয়তা অর্জনের কৌশল হতে পারে, এটি বাস্তব কোনো পরিকল্পনার অংশ নয়। তারা আশঙ্কা করছেন যে, যদি ট্রাম্পের বক্তব্য বাস্তবসম্মত না হয় বা সুস্পষ্ট কৌশল না থাকে, তাহলে বিনিয়োগকারীরা হতাশ হতে পারে এবং এটি মার্কেটে আরেকবার ক্রিপ্টো বিক্রির প্রবণতা সৃষ্টি করতে পারে।
বিটকয়েনের টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ
বর্তমানে, ক্রেতারা মূল্যকে $92,200 এর লেভেলে পুনরুদ্ধার করতে চাইছে, যা বিটকয়েনের মূল্যের $94,000 এবং পরে $96,400-এর দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা উন্মুক্ত করতে পারে। চূড়ান্ত লক্ষ্যমাত্রা $98,000 এর লেভেল, যা ব্রেক করা হলে মার্কেটে পুনরায় মাঝারি-মেয়াদে বিটকয়েনের মূল্যের বুলিশ প্রবণতা ফিরে আসবে।
যদি বিটকয়েনের মূল্য কারেকশনের সম্মুখীন হয়, তাহলে $89,900 লেভেলে ক্রেতাদের সক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিটকয়েনের মূল্য এই লেভেলের নিচে নেমে গেলে, মূল্য দ্রুত $87,700-এ নেমে যেতে পারে, যেখানে চূড়ান্ত সাপোর্ট $85,600-এ অবস্থিত।
ইথেরিয়ামের টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ
ইথেরিয়ামের মূল্য $2,313-এর লেভেল শক্তিশালীভাবে ব্রেকআউট করে উপরের দিকে গেলে মূল্য $2,395 পর্যন্ত যেতে পারে, যেখানে চূড়ান্ত লক্ষ্যমাত্রা $2,489-এ অবস্থিত। মূল্য এই লেভেলের ওপরে চলে গেলে মার্কেটে পুনরায় মাঝারি-মেয়াদে ইথেরিয়ামের মূল্যের বুলিশ প্রবণতা শুরু হবে।
যদি ইথেরিয়ামের মূল্য কমে যায়, তাহলে $2,223 লেভেলে ক্রেতাদের সক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মূল্য এই লেভেলের নিচে নেমে গেলে, মূল্য $2,138 পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে, যেখানে চূড়ান্ত সাপোর্ট $2,055-এ অবস্থিত।