মার্কিন স্টক মার্কেটের ধারাবাহিক দরপতনের মধ্যে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ নেতৃস্থানীয় কোম্পানিগুলোর নির্বাহীদের সাথে বৈঠক করবেন, কারণ এই শিল্প খাতের নেতারা ব্যাপক শুল্ক আরোপ এবং অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কাজনিত কারণে মার্কেটে ব্যাপকভাবে স্টক বিক্রির প্রবণতার মধ্যে দিকনির্দেশনা খুঁজছেন। ট্রাম্প অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা এবং আসন্ন মাসগুলোতে বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশদ বিবরণ জানতে চাইবেন, যার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করার পাশাপাশি জনগণের মধ্যে আস্থা বাড়ানো হবে।
হোয়াইট হাউস আশা করছে যে এই বৈঠকটি প্রশাসনের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রতি আস্থার বার্তা দেবে, যদিও স্টক মার্কেটে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসন জোর দিয়ে জানিয়েছে যে কর্মসংস্থান ও ভোক্তা ব্যয় এখনো শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।
তবে, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে চীনের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধ এবং তার বৈশ্বিক অর্থনীতির উপর সম্ভাব্য প্রভাব বিনিয়োগকারীদের আস্থাকে দুর্বল করছে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় ইক্যুইটি মার্কেট থেকে মূলধন সরে হচ্ছে, যা সাম্প্রতিক স্টক মার্কেটের তীব্র দরপতনে ভূমিকা রাখছে।
ব্যবসায়িক নেতাদের সাথে ট্রাম্পের এই বৈঠক স্টক মার্কেটে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় হবে, যেখানে ট্রাম্প প্রশাসন বিনিয়োগকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করবে যে মার্কিন অর্থনীতি বহিরাগত চাপ সামলানোর সক্ষমতা রাখে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ওয়াশিংটন-ভিত্তিক বিজনেস রাউন্ডটেবিল সংস্থার এই বৈঠকে দেশব্যাপী নেতৃস্থানীয় কোম্পানিগুলোর প্রধান নির্বাহীরা অংশ নেবেন, যার মধ্যে ওয়াল স্ট্রিটের বৃহৎ ক্রেডিট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কর্তাব্যক্তিরাও উপস্থিত থাকবেন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের বিজয় ব্যাংক নির্বাহীদের মধ্যে প্রাথমিকভাবে আশাবাদ তৈরি করেছিল। তবে, সাম্প্রতিক বাজার পরিস্থিতি তার নীতিমালা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। শুল্ক আরোপ এবং অর্থনৈতিক মন্থরতার আশঙ্কা বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। গত সপ্তাহে, ট্রাম্প নিজেই বলেছিলেন যে মার্কেটে অবশ্যম্ভাবীভাবে কারেকশন দেখা যেতে পারে, বিশেষ করে যখন শুল্ক কার্যকর হবে।
ব্যাংকিং খাতের অনিশ্চয়তা এবং স্টক মার্কেটের অস্থিরতা
স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের উপর নির্ভরশীল ব্যাংকিং খাত এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। এর ফলে ইক্যুইটি মার্কেটে অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বিনিয়োগকারীরা বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব ও বৈশ্বিক অর্থনীতির অনিশ্চয়তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। ফলে, বৃহৎ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পূর্ববর্তী পূর্বাভাস সংশোধন করছে এবং মুনাফা হ্রাসের সম্ভাবনা বিবেচনায় নিচ্ছে।
ট্রাম্পের মার্কেটে কারেকশন সংক্রান্ত মন্তব্য বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আরও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ক্ষতির আশঙ্কায়, তারা ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ থেকে বিনিয়োগ কমিয়ে আনছে, যা ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দরপতনের অন্যতম কারণ।
এই বৈঠকে সিসকো সিস্টেম ইনকর্পোরেটেডের সিইও চাক রবিন্স, জেপিমরগ্যান চেজ অ্যান্ড কোং-এর সিইও জেমি ডিমন, সিটিগ্রুপ ইনকর্পোরেটেডের সিইও জেন ফ্রেজার এবং ওয়াল স্ট্রিটের অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় নির্বাহীগণ উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এই বৈঠক কি স্টক মার্কেটে ব্যাপক বিক্রির প্রবণতা ঠেকাতে পারবে?
এটি সম্ভব। তবে, মূল প্রশ্ন হলো—এই সমর্থন কতদিন স্থায়ী হবে? নতুন করে স্টক সূচকের দরপতন শুরু হতে কতটা সময় লাগবে?
S&P 500-এর টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ
S&P 500 সূচকের নিম্নমুখী প্রবণতা বিরাজ করছে। ক্রেতাদের জন্য আজকের প্রধান লক্ষ্য হলো $5,645 লেভেলের নিকটবর্তী রেজিস্ট্যান্স লেভেল ব্রেক করা। এটি সফলভাবে সম্পন্ন হলে এই সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বজায় থাকবে এবং সূচকটির দর পরবর্তী টার্গেট $5,670 লেভেল স্পর্শ করতে পারে।
ক্রেতাদেরদের জন্য $5,692 লেভেল সুরক্ষিত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি তাদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।
তবে, যদি মার্কেটে ঝুঁকি হ্রাসের প্রবণতা বিরাজ করে এবং ক্রেতারা সক্রিয় না হয়, তাহলে $5,617 লেভেল রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ হবে। যদি এই লেভেল ব্রেক করে মূল্য নিচের দিকে যায়, তাহলে সূচকটি দ্রুত $5,594 লেভেলে পৌঁছাতে পারে এবং সেখান থেকে $5,567 পর্যন্ত দরপতন ঘটতে পারে।