সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেট কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেলেও, বিটকয়েনের মূল্যের $100,000 লেভেলে ফিরে আসার সম্ভাবনা এখনো বাস্তবসম্মত নয়। গ্লাসনোডের তথ্যানুযায়ী, বিটকয়েনের স্বল্পমেয়াদি হোল্ডারদের লোকসান এখনো এতটা বেশি নয় যে সেটি ব্যাপক আত্মসমর্পণ এবং মার্কেটে বিপরীতমুখী প্রবণতা কারণ হতে পারে। মার্কেটে পূর্ণাঙ্গ কারেকশন ঘটার জন্য আদর্শ পরিস্থিতি হলো— মূল্য আরও নিচে নামা, এবং তারপরই কেবল মধ্যমেয়াদে বুলিশ প্রবণতার ধারাবাহিকতা নিয়ে গুরুত্বসহকারে আলোচনা করা যেতে পারে।
অন্যদিকে, স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোনো আতঙ্ক না থাকাও একটি বিষয় নির্দেশ করে যে— তাদের বেশিরভাগই মূল্য আরও বাড়ার আশায় তাদের পজিশন হোল্ড করে রেখেছেন। এটি হঠাৎ ধাক্কার ক্ষেত্রে মার্কেটের ট্রেডারদের প্রতিক্রিয়া সীমিত করতে পারে। তবে, ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটকে প্রভাবিত করে এমন গুরুত্বপূর্ণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিষয়গুলোও বিবেচনায় নিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর উচ্চ সুদের হার দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার প্রত্যাশা ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাসেটে, বিশেষ করে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে, নতুন বিনিয়োগ প্রবাহকে সীমিত করে রাখতে পারে। পাশাপাশি, নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত ঝুঁকিও এখনো বড় একটি উদ্বেগের বিষয়। সরকার এবং আর্থিক নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কঠোর তদারকি ক্রিপ্টো মার্কেটের ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
সার্বিকভাবে, বর্তমানে ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটের পরিস্থিতি কিছুটা আশাবাদী, যার পেছনে প্রধান কারণ হলো স্বল্পমেয়াদি হোল্ডারদের দৃঢ়তা। তবে, মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার জন্য অনুকূল সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিবেশ এবং নিয়ন্ত্রণ ঝুঁকি হ্রাসের প্রয়োজন হবে।
ক্রিপ্টো উৎসাহী আর্থার হেইস তার সাম্প্রতিক এক প্রবন্ধে বলেন যে, বিটকয়েনের মূল্য প্রথমে $110,000 পর্যন্ত উঠতে পারে, তারপর আবারও $76,500 লেভেলে পৌঁছাতে পারে। এই প্রবৃদ্ধির মূল চালিকা শক্তি হবে— ফেডারেল রিজার্ভের ১ এপ্রিলের মধ্যে কঠোর নীতিমালা প্রণয়নের কার্যক্রম শেষ করে নমনীয় নীতিমালায় ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা। ফেডের ব্যালান্স শিট হ্রাস মার্কেট থেকে লিকুইডিটি বের করে নেয়, ফলে অ্যাসেটের দামে চাপ সৃষ্টি হয়। এই প্রক্রিয়া বন্ধ হলে এবং আর্থিক নীতিমালা নমনীয় করা শুরু হলে সেটি বিটকয়েন এবং সামগ্রিক ক্রিপ্টো মার্কেটে একটি শক্তিশালী বুলিশ প্রবণতার অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে।
হেইসের এই বিশ্লেষণ অবশ্যই ক্রিপ্টো কমিউনিটিতে আগ্রহ তৈরি করেছে, তবে মনে রাখতে হবে এটি কেবল একটি সম্ভাব্য দৃশ্যপট। ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেট অত্যন্ত অনিশ্চিত এবং এটি শুধুমাত্র ফেডের মুদ্রানীতির দ্বারা প্রভাবিত হয় না— আরও অনেক বিষয় এখানে কাজ করে।
বিটকয়েনের টেকনিক্যাল চিত্র অনুযায়ী, বর্তমানে ক্রেতারা মূল্যকে $87,500 লেভেলে ফিরে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য স্থির করেছে, যা মূল্যকে সরাসরি $89,500 এবং পরবর্তী পর্যায়ে $91,600 পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে। যদি বিটকয়েনের মূল্য আরও ওপরের দিকে গিয়ে $92,900 এর কাছাকাছি সর্বোচ্চ লেভেল ব্রেক করে ফেলে তাহলে মার্কেটে দীর্ঘমেয়াদে বুলিশ প্রবণতা ফিরে আসার সংকেত পাওয়া যাবে। তবে, যদি বিটকয়েন দরপতনের শিকার হয়, তাহলে প্রথমে $85,000 এরিয়াতে এটি ক্রয় করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। মূল্য এই লেভেলের নিচে নেমে গেলে BTC-এর মূল্য দ্রুত $83,200 পর্যন্ত নেমে যেতে পারে এবং সর্বশেষ লক্ষ্যমাত্রা থাকবে $81,500 এর লেভেল।
ইথেরিয়ামের টেকনিক্যাল চিত্র অনুসারে, $2,067 লেভেলের ওপরে স্থিরভাবে কনসোলিডেশন হলে এটির মূল্য $2,100 পর্যন্ত যেতে পারে। সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যমাত্রা হবে $2,143 — যা বার্ষিক সর্বোচ্চ লেভেল। মূল্য এই লেভেল ব্রেক করলে সেটি আবারও মধ্যমেয়াদে বুলিশ প্রবণতার সূচনা নির্দেশ করতে পারে। অন্যদিকে, যদি ETH এর দাম কমে, তাহলে প্রথম সাপোর্ট থাকবে $2,032 লেভেলে। মূল্য এই লেভেলের নিচে চলে গেলে ETH-এর মূল্য দ্রুত $2,000 পর্যন্ত নামতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদি সাপোর্ট $1,974 লেভেলে থাকবে।