যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বিশ্বব্যাপী শুল্ক আরোপের সরাসরি ঘোষণায় যে বিশ্ববাজারে যে বিপর্যয় শুরু হয়েছে, তা এশিয়ান ট্রেডিং সেশনেও অব্যাহত রয়েছে। যদিও দরপতনের গতি কিছুটা কমেছে, তবে এখনো এই নিম্নমুখী প্রবণতা দুর্বল হওয়ার কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। আগের কয়েক মাসে স্বর্ণের মূল্যের প্রবণতা অস্বাভাবিক ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়েছে। এর কারণ কী?
বেশিরভাগ দেশে মার্কেট এবং রাজনৈতিক অঙ্গনের মনোভাব এক কথায় "আতঙ্ক ও বিস্ময়জনক" বলেই বর্ণনা করা যায়। যুক্তরাষ্ট্র এবং প্রায় গোটা বিশ্বের মধ্যে শুরু হওয়া বাণিজ্য যুদ্ধ আমেরিকার প্রকৃত অবস্থানকে আবারও সামনে এনেছে — যেটি অভ্যন্তরীণ বিভাজন সত্ত্বেও বৈশ্বিক ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বিবেচিত হয়। বিশ্বের সব প্রধান মার্কেট — স্টক, মুদ্রা, ক্রিপ্টোকারেন্সি, এবং কমোডিটি — তথাকথিত "মুক্তির দিন"-এ নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে এবং উল্লেখযোগ্য দরপতন ঘটেছে। ডলারের মূল্যও তীব্রভাবে হ্রাস পেয়েছে।
কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে অন্তত একটি অ্যাসেটের দর তো বাড়ার কথা ছিল। তাহলে বিনিয়োগের অর্থ কোথায় গেছে — অন্তত সাময়িকভাবে?
বর্তমানে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে সরকারি বন্ড মার্কেট। নিরাপদ বিনিয়োগের খোঁজে বিনিয়োগকারীরা মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের দিকে ছুটছে, যার ফলে বন্ডের দর বেড়েছে এবং ইয়েল্ড কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বন্ডের ইয়েল্ড বা লভ্যাংশ ৪% এর নিচে নেমে গেছে। জার্মানি, ব্রিটেন, ফ্রান্সসহ অন্যান্য উন্নত দেশের বন্ড মার্কেটেও একই ধারাবাহিকতা পরিলক্ষিত হয়েছে। উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর সরকারি বন্ডের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায়, এসব বন্ডের ইয়েল্ড বা লভ্যাংশ হ্রাস পেয়েছে। কারণ, বন্ড মার্কেটে মূল্য ও লভ্যাংশের সম্পর্ক বিপরীতমুখী — মূল্য বাড়লে লভ্যাংশ কমে, এবং মূল্য কমলে লভ্যাংশ বাড়ে।
তবে স্বর্ণের কী অবস্থা? এটির মূল্য কোথায় পৌঁছেছে, এবং কেন এটি ঐতিহ্য অনুযায়ী নিরাপদ বিনিয়োগের ভূমিকা পালন করছে না?
বস্তুত, স্বর্ণের লেনদেন হয় মার্কিন ডলারে। ডলারের তীব্র দরপতন ঘটায় স্বর্ণের দর লাফিয়ে বাড়ার কথা — কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। ঐতিহাসিকভাবে, মার্কেটে বিশৃঙ্খলা ও ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার সময় স্বর্ণের চাহিদা বাড়ে। কিন্তু এবার সেটি দেখা যায়নি। এর ব্যাখ্যা কী? প্রথমত, স্বর্ণের দাম ইতিমধ্যেই অনেক উচ্চ রয়েছে — যদিও এটিই মূল কারণ নয়।
দ্বিতীয়ত, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের COMEX ওয়্যারহাউজে স্বর্ণের রিজার্ভ তীব্রভাবে বেড়েছে, যেটা আংশিকভাবে ভবিষ্যৎ শুল্কের কারণে সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থেকে উৎসারিত। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা দেওয়ার পর যে মূল্যবান ধাতুতে কোনো শুল্ক আরোপ করা হবে না, এই খাতে চাহিদা কমে গেছে। তবে, স্বর্ণের বড় ধরনের দরপতনের সম্ভাবনাও কম। সম্ভবত, স্বর্ণের মূল্য সাম্প্রতিক সর্বোচ্চ লেভেলের আশেপাশে কনসোলিডেট করবে। বৈশ্বিকভাবে শুল্ক থেকে উদ্ভূত মুদ্রাস্ফীতির চাপ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণ ক্রয় এবং স্বর্ণ-ভিত্তিক ইটিএফ গুলোর শক্তিশালী চাহিদা স্বর্ণের মূল্যের নিম্নমুখী প্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।
তাহলে এখন স্বর্ণের মূল্য কোথায় পৌঁছাতে পারে?
আমার মতে, খুব বেশি কিছু নয়। মার্কেটে স্বর্ণের ব্যাপক বিক্রির সম্ভাবনা কম। আগামীকাল — ৫ এপ্রিল — এই নাটকের "দ্বিতীয় পর্ব" দেখা যেতে পারে, যেখানে ট্রাম্প নতুন করে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিতে পারেন। যেহেতু এই শুল্কগুলোর প্রকৃত পরিধি এখনো স্পষ্ট নয়, তাই আজকের মার্কেটে নেতিবাচক প্রবণতা কিছুটা প্রশমিত হতে পারে। আমরা এমনকি স্বল্পমেয়াদি রিবাউন্ডও দেখতে পারি, যেহেতু অনেকেই তাদের পজিশন আংশিকভাবে ক্লোজ করতে পারে।
আজ যুক্তরাষ্ট্রের ননফার্ম পেরোলস প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে, তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে যেমন হয়েছে, তেমনই আজও মার্কেটে এই প্রতিবেদনের প্রভাবে খুব একটা প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এখনো ট্রেডারদের দৃষ্টি ট্রাম্পের শুল্ক, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার হুমকি, এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ের উপর নিবদ্ধ রয়েছে।
দৈনিক পূর্বাভাস:
#SPX
আগামীকাল ট্রাম্পের সম্ভাব্য নতুন শুল্ক ঘোষণার আগেই S&P 500 ফিউচারসের CFD কনট্র্যাক্টের দরপতন থেমেছে। এই ওয়েভে, শর্ট পজিশন ক্লোজ করার কারণে এখানে ঊর্ধ্বমুখী কারেকশন দেখা যেতে পারে। যদি সূচকটির দর 5407.00 এর ওপরে যায়, তাহলে সীমিত বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। সম্ভাব্য এন্ট্রি পয়েন্ট হতে পারে 5416.62 এর লেভেল।
বিটকয়েন
ক্রিপ্টোকারেন্সিটির মূল্য এখনও একটি প্রশস্ত সাইডওয়েজ রেঞ্জের মধ্যেই অবস্থান করছে। সাম্প্রতিক দরপতনের পর মার্কেটে অস্থিরতা কমে গেলে এটি স্থানীয়ভাবে 84,773.73 লেভেলের দিকে উঠে যেতে পারে। সম্ভাব্য এন্ট্রি পয়েন্ট হতে পারে 83,646.26 লেভেল।