খুব শীঘ্রই এটি জানা যাবে যে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ECB) আবারও আর্থিক নীতিমালার নমনীয়করণ অব্যাহত রাখতে চাইলে ইউরো তার জন্য কতটা প্রস্তুত।
আজ ইসিবি সপ্তমবারের মতো সুদের হার হ্রাসের ঘোষণা দিতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত শুল্ক নীতির কারণে মার্কেটে ব্যাপক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে এবং এর ফলে ইউরোজোন ও বৈশ্বিক অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। ডিপোজিট হার 2.5% থেকে 2.25%-এ নামিয়ে আনা হতে পারে এবং মূল সুদের হার 2.65% থেকে 2.4%-এ হ্রাস করার সম্ভাবনা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ব্যাপক শুল্ক আরোপের ঘোষণা এই সপ্তাহে ইসিবির সুদের হার হ্রাসের ধারাবাহিকতা স্থগিত করা হতে পারে এমন ধারণার অবসান ঘটেছে—যে প্রক্রিয়াটি গত বছরের জুন মাসে সূচনা হয়েছিল। এই পদক্ষেপগুলো এখন আর মূল্যস্ফীতি বাড়ানোর চেয়ে বরং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি করছে, যার ফলে আজই সুদের হার হ্রাস নিশ্চিত বলেই মার্কেটের ট্রেডাররা ধারণা করছে।
আজকের বৈঠকের পর, অনেক অর্থনীতিবিদ ও বিনিয়োগকারী আশা করছেন বছরের শেষ নাগাদ আরও অন্তত দুইবার সুদের হার হ্রাস করা হবে, কারণ শক্তিশালী ইউরো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হলেও সস্তা চীনা পণ্যের কারণে ইউরোপে প্রতিযোগিতা আরও বাড়বে।
যেহেতু বাণিজ্য আলোচনা এখনো অনিশ্চিত, তাই প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্দ ইসিবির ভবিষ্যৎ সুদের হার নীতির ব্যাপারে খুব একটা স্পষ্ট নির্দেশনা দেবেন না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। সুদের হারের সিদ্ধান্ত ঘোষণার ৩০ মিনিট পর তার প্রেস কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হবে।
মার্চে সুদের হার হ্রাসের পর থেকে খুব কম ইউরোপীয় নীতিনির্ধারকই সম্ভাব্য বিরতির বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। তবে জার্মানি ও অন্যান্য দেশের সরকারি ব্যয়ের পরিকল্পিত বৃদ্ধি কিছুটা সতর্ক মনোভাবকে সমর্থন করেছে। কিন্তু ট্রাম্পের "মুক্তি দিবস" ঘোষণার পর ইসিবির ভেতরে আরও সুদের হার হ্রাসের পক্ষে সমর্থন বেড়েছে, বিশেষ করে ফ্রান্সের ব্যাংক অফ ফ্রান্সের গভর্নর ফ্রাঁসোয়া ভিলারোয়া দে গালহাউ, ফিনল্যান্ডের ওলি রেহন এবং লিথুয়ানিয়ার গেদিমিনাস সিমকুসের মতো কর্মকর্তারা এই অবস্থান নিয়েছেন। তবে অস্ট্রিয়ার রবার্ট হোলজমান সতর্ক থাকার পক্ষে, তিনি বলেছেন, তিনি সুদের হার হ্রাসের পক্ষে নন, তবে গ্রহণযোগ্য যুক্তি থাকলে বিবেচনা করবেন।
পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, সুদের হার হ্রাসের মূল যুক্তি ইউরোজোনের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের ওপর নির্ভর করছে। জার্মানির শত শত বিলিয়ন ইউরোর অবকাঠামো ব্যয় এবং ইউরোপের সামরিক শক্তি বৃদ্ধির পরিকল্পনা নিয়ে যে আশাবাদ তৈরি হয়েছিল, শুল্ক বৃদ্ধির আশঙ্কায় তা আবারও দুর্বল হয়ে গেছে। ডাচ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান ক্লাস নট সম্প্রতি বলেছেন, এই পরিস্থিতির প্রভাব ধাপে ধাপে প্রকাশ পাবে এবং ইসিবির এই ব্যাপারে অতিরিক্ত সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
অনেক অর্থনীতিবিদ এখন জার্মানির নতুন রাজস্ব ব্যয়ের প্রভাব মূল্যস্ফীতির উপর কেমন পড়বে তা নিয়ে ভাবছেন। জার্মানির শীর্ষ অর্থনীতিবিদদের একটি দল তাদের মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস বাড়িয়েছে, যদিও তারা বলছেন এই নতুন অর্থনৈতিক নীতির পূর্ণ প্রভাব 2026 সালের আগে দেখা যাবে না।
EUR/USD পেয়ারের টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ:
বর্তমানে ক্রেতাদের লক্ষ্য হবে এই পেয়ারের মূল্য যাতে 1.1405 লেভেল ব্রেক করে উপরের দিকে যায়। তবেই 1.1467 এর লেভেল টেস্ট করার সুযোগ তৈরি হবে। সেখান থেকে 1.1525 পর্যন্ত মুভমেন্টের সম্ভাবনা রয়েছে, যদিও বড় ট্রেডারদের সমর্থন ছাড়া এটি অর্জন কঠিন হবে। চূড়ান্ত টার্গেট থাকবে 1.1545 লেভেলে। যদি এই পেয়ারের দরপতন ঘটে, তাহলে কেবল 1.1340 লেভেলের কাছাকাছি বড় ধরনের ক্রয়ের পদক্ষেপের আশা করা যায়। যদি সেখানেও সাপোর্ট না পাওয়া যায়, তবে 1.1260 এর নিম্ন বা 1.1165 লেভেল থেকে লং পজিশন বিবেচনা করা যুক্তিযুক্ত হবে।
GBP/USD পেয়ারের টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ:
পাউন্ডের ক্রেতাদের জন্য প্রথম লক্ষ্য হবে মূল্যকে 1.3240 এর রেজিস্ট্যান্স লেভেলে পুনরুদ্ধার করা। তবেই তারা 1.3290 এর টার্গেট নির্ধারণ করতে পারবে, যেটি ব্রেক করা কঠিন হতে পারে। চূড়ান্ত লক্ষ্য থাকবে 1.3340 এর জোনে। যদি এই পেয়ারের মূল্য নিম্নমুখী হয়, তাহলে বিক্রেতারা 1.3190 লেভেলে নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করবে। এই লেভেল ব্রেক করা হলে ক্রেতাদের ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি হবে এবং GBP/USD পেয়ারের মূল্য 1.3130 পর্যন্ত নামতে পারে, যেখানে আরও বিক্রয় হতে থাকলে 1.3080 পর্যন্ত দরপতন সম্প্রসারিত হতে পারে।