গত সপ্তাহে টানা তিন দিনের দরপতনের পর সোমবার পাউন্ডের মূল্যের রিবাউন্ড দেখা যায়। স্থানীয় নির্বাচনের ফলাফলের প্রভাবে প্রাথমিকভাবে পাউন্ড দুর্বল হয়ে পড়ে, যেখানে নাইজেল ফারাজের রিফর্ম ইউকে পার্টি কনজারভেটিভ ও লেবার উভয় দলের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। একই সঙ্গে, মার্কিন ডলারের সামগ্রিক শক্তিশালী মুভমেন্টের মধ্যে GBP/USD পেয়ারেরও দরপতন ঘটে, যেখানে অর্থনৈতিক মন্দার ইঙ্গিত উপেক্ষা করে ডলার ঊর্ধ্বমুখী হয়। এপ্রিলের ননফার্ম পেরোল প্রতিবেদনের শক্তিশালী ফলাফল এবং চীনের প্রতি ট্রাম্পের অবস্থান নমনীয় করার ফলে GBP/USD পেয়ারের মূল্যের বিয়ারিশ প্রবণতা তৈরি হয় এবং মূল্য সাপ্তাহিক সর্বনিম্ন লেভেলে পৌঁছায়।
তবে সোমবার এই পেয়ারের ক্রেতারা পুনরায় মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং মূল্য 1.33 রেঞ্জের মধ্যে ফিরে আসে।
এই সপ্তাহে ট্রেডারদের দৃষ্টি ফেডারেল রিজার্ভের বৈঠক (যা ৭ মে শেষ হবে ) এবং ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের বৈঠকের (পরদিন সিদ্ধান্ত জানা যাবে) দিকেই থাকবে। বাইরের মৌলিক বিষয়গুলোর প্রভাবেও মার্কেটে ভোলাটিলিটি বা অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে—বিশেষ করে যদি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের কর্মকর্তারা পুনরায় আলোচনার টেবিলে বসেন।
দেখা যাচ্ছে, নাইজেল ফারাজের রাজনৈতিক সাফল্যের প্রভাব থেকে মার্কেট দ্রুত পুনরুদ্ধার করেছে। যদিও তিনি অনেক আসনে জয়ী হয়েছেন এবং যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে শতাব্দীপ্রাচীন দুই দলের আধিপত্যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন, তবুও ট্রেডারদের প্রতিক্রিয়া ছিল সীমিত। রিফর্ম ইউকে স্থানীয় কাউন্সিল নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন অর্জন করেছে। এই অপ্রত্যাশিত ফলাফল অনেক প্রভাবশালী গণ্যমাধ্যমের (যেমন পলিটিকো ও দ্য ইকোনোমিস্ট) দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং তারা বলেছে, ফারাজ ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রীও হতে পারেন—এখন এই সম্ভাবনাকে আর রাজনৈতিক কল্পকাহিনি হিসেবে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
তবে এইরকম শিরোনামের মাঝেও GBP/USD পেয়ার মাত্র কয়েক ডজন পিপস দরপতনের শিকার হয়েছে। মার্কেটের ট্রেডাররা দ্রুত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি—এবং সেটিই যথার্থই ছিল। প্রথমত, রিফর্ম ইউকে গত সপ্তাহে ছয়টি মেয়র নির্বাচনের মধ্যে মাত্র দুটি জিতেছে। দ্বিতীয়ত, পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন ২০২৯ সালের আগে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা নেই, তাই ফারাজের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা এখনো অনেক দূরের এবং অনুমাননির্ভর বিষয়। তৃতীয়ত, রিফর্ম ইউকে বাস্তব প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত; তাদের নেতারা যদি নতুন দায়িত্বে ব্যর্থ হন, তাহলে পুরো আন্দোলনের গ্রহণযোগ্যতাই প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।
অর্থাৎ, ফারাজের সাফল্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা যেতে পারে—বিশেষ করে বৈশ্বিকভাবে ডানপন্থী পপুলিজমের উত্থানকে (যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প, ফ্রান্সে লে পেন, অস্ট্রিয়ায় ফ্রিডম পার্টি, জার্মানিতে AfD) বিবেচনায় নিলে। তবে বর্তমানে যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে—বিশেষ করে সংসদীয় স্তরে—বড় কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।
এই কারণেই সোমবার পাউন্ড কিছুটা সমর্থন খুঁজে পায়, বিশেষ করে মার্কিন ডলারের দুর্বলতার মধ্যে। ডলার সূচক কমে 99.00 লেভেলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, যা মার্কিন অর্থনৈতিক প্রতিবেদন প্রকাশিত না হওয়ায় এবং বুধবারের ফেড সভার আগে ট্রেডারদের অপেক্ষার মনোভাবকে প্রতিফলিত করছে। ফেডের আর্থিক নীতিমালা অপরিবর্তিত থাকার সম্ভাবনা বেশি, এবং তারা হয়তো বর্ধিত মুদ্রাস্ফীতির প্রত্যাশা (যা ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের মতে 6.5%—যা ১৯৮১ সালের পর সর্বোচ্চ) তুলে ধরবে। অন্যদিকে, ব্যাংক অব ইংল্যান্ড বৃহস্পতিবার ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদের হার কমিয়ে নমনীয় নীতিমালার পথে আরও এক ধাপ এগোতে পারে।
এই দুটি পরিস্থিতিই মার্কেটে অনেকটাই মূল্যায়ন করা হয়েছে, তাই এখন ট্রেডাররা মূলত আগাম দিকনির্দেশনার দিকেই মনোযোগী। রয়টার্স পরিচালিত একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, অধিকাংশ অর্থনীতিবিদ মনে করছেন, ফেড সেপ্টেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে ২৫ পয়েন্টের হারে দুইবার সুদের হার কমাতে পারে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের ব্যাপারেও একই প্রত্যাশা করা হচ্ছে—এই মাসেই আরও একবার সুদের হার কমানো হতে পারে।
এই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈঠকগুলোর আগমুহূর্তে GBP/USD ট্রেডাররা পাউন্ড বা ডলারের পক্ষে বড় পজিশন নেওয়া থেকে বিরত রয়েছে। ফারাজের রাজনৈতিক ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে বিক্রেতারা এই পেয়ারের মূল্যকে 1.32-এর মাঝামাঝি লেভেলে নামিয়ে এনেছে, তবে 1.3250–1.3350 রেঞ্জের নিচের সীমার কাছাকাছি লাভ নেওয়া হয়েছে। সোমবার ক্রেতারা পুনরায় এই পেয়ারের মূল্যকে এই রেঞ্জের উপরের সীমা টেস্ট করার দিকে নিয়ে গেছে, কিন্তু মূল্য এই রেঞ্জ ব্রেক করতে ব্যর্থ হয়েছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে ISM পরিষেবা সূচক 50.2 এর পূর্বাভাস ছাপিয়ে 51.6-এ পৌঁছানোর পর।
আমার দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, চলমান অনিশ্চয়তা (ফেড ও ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের বৈঠক, যুক্তরাষ্ট্র-চীনের মধ্যে সম্ভাব্য বাণিজ্য আলোচনা) বিবেচনায় GBP/USD পেয়ারটি এই রেঞ্জের মধ্যেই ট্রেড করতে থাকবে। গত তিন সপ্তাহে ক্রেতারা বহুবার এই পেয়ারের মূল্যকে 1.34 লেভেলে নিতে চেয়েছে, কিন্তু প্রতিবারই মূল্য 1.3250–1.3350 করিডোরে ফিরে এসেছে—যা এই সপ্তাহের বড় ইভেন্টগুলোর আগে এক ধরনের "হোল্ডিং জোন" হিসেবে কাজ করছে।