বৃহস্পতিবার ব্যাংক অব ইংল্যান্ড সুদের হার ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমানোর ঘোষণা দেয়, যা ট্রেডাররা ইতোমধ্যেই পূর্বানুমান করেছিল। তবে এই 'ডোভিশ' বা নমনীয় সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও ব্রিটিশ পাউন্ডের মূল্যের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়েছে। দিনভর GBP/USD পেয়ারের মূল্য সর্বোচ্চ 1.3355 পর্যন্ত পৌঁছায়। যদিও মূল্যের রেঞ্জ 1.3250–1.3380-এর মধ্যে রয়ে গেছে, তবুও পাউন্ডের প্রতিক্রিয়া ছিল তাৎপর্যপূর্ণ।
মে মাসের এই বৈঠককে "হকিশ বা কঠোর অবস্থান থেকে সরে আসার"-এর একটি দারুণ উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা যায়: সুদের হার কমানোর পাশাপাশি ব্যাংক অব ইংল্যান্ড ভবিষ্যতে আর কোন অর্থনৈতিক প্রণোদনার ইঙ্গিত দেয়নি, বরং ২০২৫ সালের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস বাড়িয়ে দিয়েছে।
ট্রেডাররা আগে থেকেই ধরে নিয়েছিল যে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড আরেক ধাপ নমনীয় আর্থিক নীতিমালার পথে হাঁটবে, তাই মূল সিদ্ধান্তটি আংশিকভাবে আগেই মূল্যায়নে যুক্ত হয়েছিল। তবে বৈঠকের বিস্তারিত বিশ্লেষণ পাউন্ডকে শক্তিশালী করেছে।
উদাহরণস্বরূপ, মুদ্রানীতি কমিটির নয়জন সদস্যের মধ্যে সাতজন সুদের হার কমানোর পক্ষে ভোট দেন, কিন্তু দুইজন—চিফ ইকোনমিস্ট হিউ পিল এবং ক্যাথরিন ম্যান—বর্তমান ৪.৫% সুদের হার বজায় রাখার পক্ষে অবস্থান নেন। ট্রেডাররা ৯–০ ভোটে সিদ্ধান্তের প্রত্যাশা করছিল, তাই এই বিভাজন ছিল একটি চমক। যদিও এক বা দুই ভোট ফলাফল পাল্টায়নি, তথাপি ডোভিশ বা নমনীয় অবস্থান গ্রহণের পক্ষে থাকা সদস্যদের এই ফাটল পাউন্ডের পক্ষে কাজ করেছে।
এছাড়াও, ব্যাংক অব ইংল্যান্ড তাদের ২০২৫ সালের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ০.৭৫% থেকে বাড়িয়ে ১.০% করেছে।
গভর্নর অ্যান্ড্রু বেইলি বলেন, যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির ওপর ট্রাম্পের শুল্কের প্রভাব "অন্যান্য দেশের তুলনায় কম হতে পারে"। তিনি যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য বাণিজ্য চুক্তিকে স্বাগত জানান এবং বলেন, এটি "অনিশ্চয়তা কমাতে সাহায্য করবে।"
ভবিষ্যৎ নীতিগত পদক্ষেপ নিয়ে বেইলি বলেন, সুদের হার সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে "অটোপাইলট" মোড নয়, বরং একটি সতর্ক কৌশল অবলম্বনের কথা নিশ্চিত করেন—যা বছরের শেষ নাগাদ আরও দুইবার সুদের হার কমানোর মতো ট্রেডারদের প্রত্যাশার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
সার্বিকভাবে মে মাসের এই বৈঠকের ফলাফল পাউন্ডের পক্ষে কাজ করেছে। তবে GBP/USD ক্রেতারা মূল্যকে শুধুমাত্র একটি নতুন সর্বোচ্চ লেভেলে নিয়ে যেতে হাই পেরেছে, তা-ও এই পেয়ারের মূল্য 1.3250–1.3380-এর চেনা রেঞ্জের ভেতরেই রয়ে গেছে।
কেন?
এর পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, ব্যাংক অব ইংল্যান্ড প্রত্যাশিত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছে, এবং "হকিশ বা কঠোর" অবস্থান গ্রহণের ইঙ্গিতটি ছিলো তুলনামূলকভাবে দুর্বল। নীতিবক্তব্যে ব্যবহৃত হয়েছে অস্পষ্ট ভাষা—যেমন, মুদ্রানীতি যথেষ্ট সময় ধরে কঠোর থাকবে "যতক্ষণ না ২% এর লক্ষ্যমাত্রায় মূল্যস্ফীতি টেকসইভাবে ফিরে আসার ঝুঁকি হ্রাস পায়।"
দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য বাণিজ্য চুক্তির প্রাথমিক খুঁটিনাটি তথ্য পাউন্ডের ওপর কিছুটা চাপ সৃষ্টি করেছে। এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত না হলেও, গুঞ্জন রয়েছে যে যুক্তরাজ্যের পণ্যের ওপর ১০% শুল্ক বহাল থাকবে, যদিও ট্রাম্প এটিকে একটি "সম্পূর্ণ চুক্তি" বলে দাবি করেছেন।
তাছাড়া, এখনো যুক্তরাজ্যের ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম এবং গাড়ির ওপর ২৫% শুল্ক বহাল রয়েছে । যদিও কিছু ছাড়ের সম্ভাবনা থাকছে, তবে আনুষ্ঠানিক কিছুই ঘোষণা করা হয়নি।
এই বিরোধপূর্ণ প্রেক্ষাপট বিবেচনায়, GBP/USD কেনাবেচা—উভয়ই ঝুঁকিপূর্ণ। ট্রেডাররা ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের সিদ্ধান্তকে ইতোমধ্যেই মূল্যায়ন করলেও, ট্রাম্পের নতুন বাণিজ্য চুক্তির প্রভাব এখনো মার্কেটে পুরোপুরি প্রতিফলিত হয়নি। এই নতুন চুক্তি যুক্তরাজ্যের জন্য আদৌ কতটা লাভজনক হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। আগের শুল্ক-মুক্ত নীতিমালার সঙ্গে এখনকার ১০% এবং ২৫% হারে শুল্ক আরোপের ব্যবধান যথেষ্ট স্পষ্ট।
সম্পূর্ণ চুক্তির বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত হলে GBP/USD পেয়ারের মূল্যের অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। এই অস্থিরতা পাউন্ডের জন্য ভালো না খারাপ হবে, তা এখনও নিশ্চিত নয়। তাই এখন মার্কেটে এন্ট্রি না করে পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করাই হতে পারে সবচেয়ে বিচক্ষণ কৌশল।