মার্কিন গ্রিনব্যাকের দর আবারও ঊর্ধ্বমুখী: যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে তিন মাসের শুল্ক যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পর সোমবার মার্কিন ডলার সূচক চার সপ্তাহের সর্বোচ্চ লেভেলে পৌঁছেছে। এই খবরে ডলার সব প্রধান মুদ্রার বিপরীতে শক্তিশালী হয়েছে, যার মধ্যে EUR/USD-ও রয়েছে। এপ্রিলের শুরু থেকে EUR/USD পেয়ারের বিক্রেতারা প্রথমবারের মতো মূল্যের 1.10 জোনের টেস্ট ঘটায়, যার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই 150 পয়েন্টের বেশি দরপতন ঘটে। এবং ডলারের ক্রেতাদের মধ্যে পরিলক্ষিত সামগ্রিক উচ্ছ্বাসের ভিত্তিতে মনে হচ্ছে, মার্কিন-চীন সম্পর্কের বহু প্রতীক্ষিত উষ্ণতায় ভর করে আগামী দিনে ডলার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বজায় রাখার চেষ্টা করবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো—এই উচ্ছ্বাস কতদিন স্থায়ী হবে? আলোচনার শুরু নিয়ে প্রাথমিক উত্তেজনা শেষ পর্যন্ত কতদূর বাস্তব আলোচনায় গড়াবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা উদ্বেগেও রূপ নিতে পারে। অতীত ইতিহাস বিবেচনা করলে এই পরিস্থিতিতে "সতর্ক আশংকা" করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
জেনেভার ঘটনাপ্রবাহ দিয়ে শুরু করা যাক, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের উপর শুল্ক 145% থেকে কমিয়ে 30%-এ নামিয়ে আনে, এবং চীন আমেরিকান পণ্যের উপর শুল্ক 125% থেকে কমিয়ে 10% করে। উভয় দেশই পারস্পরিকভাবে শুল্ক হ্রাস করেছে এবং "অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে ধারাবাহিক সংলাপের জন্য একটি কাঠামো" তৈরিতে সম্মত হয়। অর্থাৎ, তারা আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে—যা হতে পারে চীনে, যুক্তরাষ্ট্রে অথবা তৃতীয় কোনো দেশে (বর্তমান দৃষ্টান্তে যেমন সুইজারল্যান্ড)। জেনেভার বৈঠক একটি পূর্ণাঙ্গ আলোচনা প্রক্রিয়ার প্রস্তাবনা হিসেবে কাজ করেছে। "সৌহার্দ্যপূর্ণ ইঙ্গিত" হিসেবে উভয় দেশ মিলে 90 দিনের জন্য মোট 115% হারে শুল্ক কমিয়েছে।
তবে এর অর্থ এই নয় যে এই সময়সীমার মধ্যেই চূড়ান্ত চুক্তি সম্পন্ন হবে—এখানে কোনো নির্ধারিত ডেডলাইন নেই। মনে করিয়ে দিই, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের সময় ২০১৮ সালেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা হয়েছিল এবং কিছু সমঝোতাও হয়েছিল, কিন্তু অল্প কিছুদিন পরেই উত্তেজনা আবার বেড়ে যায়। সেই আলোচনা ১৮ মাসের বেশি সময় ধরে চলে, এবং প্রথম ধাপের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ২০২০ সালের জানুয়ারিতে।
অবশ্য এর মানে এই নয় যে বর্তমান আলোচনাও দীর্ঘমেয়াদি হবে। তবে দ্রুত যেকোনো চুক্তি হয়ে যাবে—এমন প্রত্যাশাও অযৌক্তিক। ডলার ক্রেতাদের মধ্যে (সম্ভবত অতিমাত্রায়) ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছে, অনেকেই ভাবছেন ইতিবাচক পরিণতি আসন্ন।
এবং এখানেই ডলারের জন্য ঝুঁকি রয়েছে—কারণ সোমবারের উচ্ছ্বাসের "হ্যাংওভার" খুবই তীব্র হতে পারে।
এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—যুক্তরাষ্ট্র এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করেনি, যদিও বড় ধরনের শুল্ক ইতোমধ্যেই মাসখানেক আগে কার্যকর হয়েছে। একমাত্র ব্যতিক্রম যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি, যেটি এখনো বিস্তারিত চূড়ান্ত না হওয়া একটি প্রাথমিক কাঠামো মাত্র; তাছাড়া, হোয়াইট হাউস কিছু ছাড় দিলেও ব্রিটিশ পণ্যের উপর এখনো 10% শুল্ক আরোপিত রয়েছে—যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য ঘাটতি নেই। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ট্রাম্প সম্প্রতি দাবি করেছেন, যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড সারপ্লাস বা বাণিজ্য উদ্বৃত্ত আছে, তাদের পণ্যের উপর "10%-এর চেয়েও বেশি" শুল্ক আরোপ করা উচিত।
সম্ভবত এই কারণেই দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, ভিয়েতনাম ও জাপানের সঙ্গে আলোচনা (যা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে বলা হচ্ছে) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনাও থমকে গেছে। এবং একই কারণে চীনের সঙ্গে "দ্রুত চুক্তি" হওয়ার সম্ভাবনাও কম।
নতুন ঘোষিত 90 দিনের বাণিজ্যযুদ্ধে বিরতির ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—এই "অগ্রাধিকারমূলক শুল্ক ব্যবস্থা" মার্চ মাসে সমস্ত মার্কিন বাণিজ্য অংশীদারদের উপর আরোপিত খাতভিত্তিক শুল্কে প্রযোজ্য নয়। এটি ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের সময় চীনের উপর আরোপিত বিদ্যমান শুল্কও বাতিল করছে না।
তাহলে এর অর্থ কী? একদিকে সোমবারের ডলার শক্তিশালী হওয়ার পেছনে যৌক্তিক ভিত্তি রয়েছে। আলোচনা পুনরায় শুরু হয়েছে, শুল্কে স্বস্তি এসেছে, এবং উভয় পক্ষই শান্তিপূর্ণ বিবৃতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা কিছুটা কমেছে, যার ফলে ডলারের প্রতি চাহিদা বেড়েছে। স্বল্পমেয়াদে এটি ডলারের জন্য সহায়ক। তবে, একবার প্রাথমিক উত্তেজনা কেটে গেলে এবং মার্কিন-চীন আলোচনাগুলো মৌলিক ইস্যুতে থমকে গেলে ডলার আবারও চাপের মুখে পড়তে পারে।
উল্লেখযোগ্য যে EUR/USD বিক্রেতারা এই নিম্নমুখী প্রবণতার সময় মূল্য 1.10 জোনে রাখতে পারেনি—প্রথম প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে। 1.1110 সাপোর্ট লেভেল (৪ ঘণ্টার চার্টে বলিঙ্গার ব্যান্ডের নিচের সীমা) বিক্রেতাদের জন্য অত্যন্ত শক্তিশালী প্রমাণিত হয়েছে—মূল্য এই লেভেলের নিচে স্থায়ীভাবে থাকতে পারেনি। তাই শুধুমাত্র এই লেভেল ব্রেক করে মূল্য নিচের দিকে যাওয়ার পরই শর্ট পজিশনের কথা চিন্তা করা যেতে পারে (যদি তা ঘটে)। অন্যথায়, EUR/USD পেয়ারের ক্রেতারা (কমপক্ষে একটি কারেকটিভ মুভমেন্ট হিসেবে) মার্কেটে নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে এবং মূল্যকে 1.12 জোনে ফিরিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করতে পারে।