মঙ্গলবার, ২০ মে RBA-এর বৈঠক শেষ হবে, এবং বেশিরভাগ বিশ্লেষকের মতে এই বৈঠকে সুদের হার কমানো হতে পারে। ফেব্রুয়ারিতে সুদের হার হ্রাসের পর আরেকবার এরকম পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে। অধিকাংশ বিশ্লেষকের ধারণা, অস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদের হার কমাতে পারে। "ডোভিশ বা নমনীয়" অবস্থান গ্রহণের সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি, তারপরও এটি নিশ্চিত নয়। বেশ কিছু মৌলিক যুক্তি রয়েছে যেগুলো তুলনামূলকভাবে 'অপেক্ষা করার এবং পর্যবেক্ষণ' পন্থার পক্ষেই যুক্তি দেয়, তাই বর্তমান সুদের হার বজায় রাখার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
সুদের হার কমানোর পক্ষে যুক্তি (ডোভিশ বা নমনীয় অবস্থান গ্রহণের সম্ভাবনা)
ডোভিশ বা নমনীয় অবস্থানের সম্ভাবনার প্রতি সমর্থকদের অধিকাংশই সম্প্রতি প্রকাশিত অস্ট্রেলিয়ার মুদ্রাস্ফীতির প্রতিবেদনের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, যা RBA-এর এপ্রিলের বৈঠকের পর প্রকাশিত হয়েছে। যদিও এই প্রতিবেদনের ফলাফল ইতিবাচক বলে মনে হচ্ছে, তবে এতে দেখা গেছে যে মূল মুদ্রাস্ফীতি এখন ২–৩% লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রয়েছে। ২০২১ সালের চতুর্থ প্রান্তিকের পর প্রথমবারের মতো দেশটির CPI বা ভোক্তা মূল্য সূচক এই রেঞ্জের মধ্যে এসেছে। এছাড়া, প্রতিবেদনটিতে পরিষেবা খাতে মুদ্রাস্ফীতির উল্লেখযোগ্য হ্রাস দেখা গেছে, যা কম ভাড়া ও বিমা খরচের কারণে ৩.৭% এ নেমে এসেছে।
হকিশ বা কঠোর অবস্থান গ্রহণের সম্ভাবনা
মজার ব্যাপার হলো, সুদের হার কমানোর সম্ভাবনার বিরোধী শিবিরও একই মুদ্রাস্ফীতি প্রতিবেদন তুলে ধরেছেন, তবে তারা এটির এমন দিকগুলোকে গুরুত্ব দিয়েছেন যা হকিশ বা কঠোর অবস্থান গ্রহণের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়। উদাহরণস্বরূপ, প্রথম প্রান্তিকে হেডলাইন CPI ০.৯% বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে ০.৮% বৃদ্ধির পূর্বাভাস ছিল—যা আগের দুটি প্রান্তিকে ছিল মাত্র ০.২% ছিল। বার্ষিক ভিত্তিতে, CPI বা ভোক্তা মূল্য সূচক ছিল ২.৪%, ২.৩%-এর পূর্বাভাসের চেয়ে সামান্য বেশি। মার্চ মাসে মাসিক ভিত্তিতে CPI-ও ২.৪%-এ স্থির ছিল। বিশ্লেষকরা আশা করেছিলেন এটি ২.৩%-এ নেমে আসবে।
অর্থাৎ, মুদ্রাস্ফীতি প্রতিবেদনের ফলাফল পরস্পরবিরোধী এবং নিশ্চিতভাবেই সুদের হার কমানো হবে এই ইঙ্গিত দিচ্ছে না।
সুদের হার একই স্তরে বজায় রাখার যুক্তি: শ্রমবাজারের শক্তিশালী অবস্থান
এপ্রিল মাসে অস্ট্রেলিয়ার কর্মসংস্থান ৮৯,০০০ বেড়েছে — এটি ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারির পর সর্বোচ্চ মাসিক বৃদ্ধি, এবং প্রত্যাশিত ২০,০০০-এর চেয়ে চারগুণ বেশি। এর মধ্যে পূর্ণকালীন চাকরির সংখ্যা ছিল ৫৯.৫ হাজার, যেখানে খণ্ডকালীন চাকরি ছিল ২৯.৫ হাজার। শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের হার পৌঁছেছে ৬৭.১%-এ, যা জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ। একইসাথে, ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে বেতন বৃদ্ধির হার ৩.৪%-এ পৌঁছেছে, যা ২০২৪-এর চতুর্থ প্রান্তিকে ৩.২%-এ নামার পর আবার পুনরুদ্ধার হয়েছে। এটি রিজার্ভ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়াকে পরবর্তীতে সুদের হার কমানো নিয়ে তাড়াহুড়ো না করার সুযোগ দিয়েছে।
এই ফলাফল রিজার্ভ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়াকে দ্রুত সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকার অবকাশ দিয়েছে।
বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা আরও সতর্ক থাকার প্রয়োজনীয় তুলে ধরে
চলমান "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বনাম সকল দেশের" সাথে বাণিজ্যযুদ্ধ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প অস্ট্রেলিয়ান পণ্যের ওপর কমপক্ষে ১০% আমদানি শুল্ক আরোপ করেছেন (যার জবাবে ক্যানবেরা পাল্টা পদক্ষেপ নেয়নি, বরং মার্কিন সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে)। অর্থাৎ, অস্ট্রেলিয়া সরাসরি খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তবে একইসাথে এটি স্পষ্ট যে অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতি বিশ্ববাজার থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। তাই, এই শুল্ক যুদ্ধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার নেতিবাচক প্রভাব, বিশেষ করে যদি চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি কমে যায়, তখন তা অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ঘোষিত বাণিজ্য আলোচনা শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদে সুদের হার একই স্তরে বজায় রাখাও রিজার্ভ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়ার কাছে যৌক্তিক মনে হতে পারে।
উপসংহার
ANZ, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড এবং ওয়েস্টপ্যাক-এর মতো বড় ব্যাংকগুলো ২৫ বেসিস পয়েন্ট হার কমানোর পূর্বাভাস দিলেও, এটি নিশ্চিত কোনো ফলাফল নয়। স্থিতিশীল শ্রমবাজার এবং মুদ্রাস্ফীতির "অবাধ্যতা" এবং বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার পটভূমিতে "অপেক্ষা ও পর্যবেক্ষণের" নীতির পক্ষে শক্তিশালী যুক্তি রয়েছে।
এমনকি যদি রিজার্ভ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়া ডোভিশ বা নমনীয় অবস্থান গ্রহণ করেও, তারপরও তারা সম্ভবত সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করবে—ফলে এটি হকিশ বা কঠোর অবস্থান থেকে পিছু হটার সিদ্ধান্ত হতে পারে, যা ২০২৫ সালের দ্বিতীয়ার্ধে আরও দুইবার সুদের হার হ্রাসের পূর্বাভাস নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করবে।
মার্কেটের উপর প্রভাব
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায়, মার্কেটে একটি উত্তেজনাপূর্ণ অপেক্ষার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যদি রিজার্ভ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়া প্রত্যাশার বাইরে গিয়ে সুদের হার অপরিবর্তিত রাখে, তাহলে অস্ট্রেলিয়ান ডলারের মূল্য বেড়ে যেতে পারে—AUD/USD পেয়ারের মূল্য 0.6490 এর রেজিস্ট্যান্স ব্রেক করে 0.6500-এর ওপরে স্থিতিশীল হতে পারে। আর যদি প্রত্যাশামতো সুদের হার হ্রাস করা হয়, তাহলে বৈঠকের ফলাফল নির্ভর করবে বক্তব্যের সুদের এবং ব্যাংকটির গভর্নর মিশেল বুলক-এর মন্তব্যের উপর। যদি বক্তব্যের সুর সতর্ক থাকে, তাহলে অস্ট্রেলিয়ান ডলার কিছুটা সমর্থন পেতে পারে এবং
AUD/USD পেয়ারের মূল্য 0.6430–0.6490 রেঞ্জের মধ্যে থাকতে পারে। তবে, যদি বক্তব্যে খোলাখুলিভাবে ডোভিশ বা নমনীয় অবস্থান গ্রহণের সংকেত দেয়া হয় যা ২০২৫ সালের দ্বিতীয়ার্ধে আরও সুদের হার হ্রাসের ইঙ্গিত দেয়া হয়, তাহলে AUD/USD পেয়ারের বিক্রেতাদের জন্য অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হবে এবং পেয়ারটির মূল্য সম্ভবত 0.6340 (দৈনিক চার্টে লোয়ার বোলিঙ্গার ব্যান্ড) এর দিকে নামতে পারে।