মার্কেটের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি দেখলে মনে হয় যেন দ্য গডফাদার স্টাইলে কোনো ব্লকবাস্টার সিনেমার স্ক্রিপ্ট লেখা উচিত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এখন সব ধরনের কূটনৈতিক রীতিনীতি পরিহার করে একেবারে সিনেমাটিক স্টাইলে "ডন করলিওনি"-র মতো রূপ ধারণ করেছেন — যে চরিত্রে কিংবদন্তি অভিনেতা মার্লন ব্র্যান্ডো অভিনয় করেছিলেন!
ট্রাম্প যেন পুরো দুনিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন — এটি এমন এক পৃথিবী, যেখানে "গ্রেট আমেরিকা"-র তারকা আবার উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। তার ব্যবহার, কথার ভঙ্গিমা এমনকি উপস্থিতিও মারিও পুজোর কোনো চরিত্রের মতো। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, যখন সাপ্তাহিক ছুটিতে রাজনীতিবিদ এবং ফিন্যান্সিয়াল মার্কেটের ট্রেডাররা কিছুটা বিশ্রাম নিতে চায়, তখনই ট্রাম্প বড় কোনো ঘোষণা দিয়ে তাদের জাগিয়ে তোলেন। "বিশ্বের স্বঘোষিত শাসক" কাউকেই আরাম করতে দিতে রাজি নন।
এবারও সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ট্রাম্প ঘোষণা দেন যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যের ওপর ৫০% শুল্ক আরোপের তারিখ পিছিয়ে ৯ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। ট্রুথ সোশ্যালে তিনি জানান, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লায়েনের সঙ্গে আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইইউ-এর প্রধানও কলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এবং বলেন, বেশ "ফলপ্রসূ আলোচনা" হয়েছে এবং "একটি কার্যকর চুক্তিতে পৌঁছাতে আরও সময় প্রয়োজন।"
এর মানে কী দাঁড়ায়? মনে হচ্ছে, এটি ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের ওপর চাপ অব্যাহত রাখার একটি অংশ — যেন কোনো সিনেমার দৃশ্য! ট্রাম্প তাদের আরও সময় দিচ্ছেন, যাতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তারা আরও ভালোভাবে ভাবতে পারে। তিনি এখনও তার প্রভাব ব্যবহার করছেন, যতক্ষণ না কেউ তার কাছ থেকে সেই সুযোগ কেড়ে নেয়।
মার্কেটের সার্বিক পরিস্থিতি
গত সপ্তাহে শুল্ক সংক্রান্ত উত্তেজনা এবং সম্ভাব্য আর্থিক সংকটের আশঙ্কায় মার্কেটে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা গিয়েছিল, তবে এই সপ্তাহের শুরুতে ট্রেডারদের মাঝে কিছুটা স্বস্তি দেখা যাচ্ছে। যদিও এটি চীনের সঙ্গে ৯০ দিনের জন্য পূর্ণ যুদ্ধবিরতির মতো সংবাদ নয়, তথাপি বলা যায়, "নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল।"
মার্কিন স্টক সূচকের ফিউচার আত্মবিশ্বাসের সাথে ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে, যা মার্কেটে ইতিবাচক প্রবণতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা এই খবরে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে, যার ফলে মার্কিন স্টক মার্কেটে নতুন করে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুরু হতে পারে — যদিও এটি অস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
এই আশাবাদী পরিস্থিতিতে ডলার তীব্র দরপতনের শিকার হতে পারে, আর ডলার সূচক 98.00 লেভেলে পৌঁছাতে পারে, তার আগে নতুন করে কনসোলিডেশন শুরু হতে পারে। স্বর্ণের ক্ষেত্রে, যদি এটির মূল্য শক্তিশালী রেজিস্ট্যান্স 3358.50 লেভেল ব্রেক করতে সক্ষম হয়, তবে মূল্য বিপরীতমুখী হয়ে পূর্বাভাসকৃত 3263.75 লেভেলে নামতে পারে।
তবে এই ইতিবাচক প্রবণতা কত দিন থাকবে?
সম্ভবত খুব বেশি দিন নয়। এই সপ্তাহে ফেডের সর্বশেষ বৈঠকের কার্যবিবরণী প্রকাশিত হবে। ফেড আবার সুদের হার কমানোর জন্য প্রস্তুত এমন সংকেত পাওয়ার সম্ভাবনা কম। আপাতত চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল সতর্ক থাকার ইঙ্গিত দিচ্ছেন, যদিও মুদ্রাস্ফীতি ২%-এর লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি নেমে এসেছে — এপ্রিলে বার্ষিক ভিত্তিতে এটি ২.৩%-এ ছিল। তবে যদি প্রথম প্রান্তিকের দেশটির জিডিপি প্রতিবেদনে -০.৩% সংকোচন দেখা যায়, তাহলে পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে বদলে যেতে পারে। এটি ২০২২ সালের নভেম্বরের পর প্রথমবারের মতো নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হবে, যা কার্যত একটি অর্থনৈতিক মন্দার সূচনা নির্দেশ করবে।
এই ধরনের তথ্য নিশ্চিত হলে, ফেড জুন মাসে সুদের হার ০.২৫% কমিয়ে অর্থনীতিতে উদ্দীপনা আনতে পারে। এতে স্টক মার্কেটে চাহিদা বেড়ে যাবে, ডলারের দরপতন প্রসারিত হবে এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রতি আগ্রহ আবারও ফিরে আসবে। এই সম্ভাবনাকে এখন "উচ্চ" হিসেবেই গণ্য করা হচ্ছে।
আজকের পূর্বাভাস:
EUR/USD
ট্রাম্পের ঘোষণায় যে ইউরোপীয় পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানোর সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে, তার ফলে এই পেয়ারের মূল্য ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে এবং যদি 1.1425 এর লেভেল ব্রেক করা হয়, তাহলে মূল্য 1.1530-এর দিকে যেতে পারে। ক্রয়ের জন্য সম্ভাব্য লেভেল হতে পারে 1.1432।
#USDX
ডলার সূচক বর্তমানে 98.90-এর নিচে ট্রেড করছে। যদি প্রথম প্রান্তিকে মার্কিন জিডিপি প্রবৃদ্ধি হ্রাস পায় এবং মার্কেটের ট্রেডারদের মধ্যে বিরাজমান অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা নিশ্চিত করে এবং ফেড জুন মাসে সুদের হার কমাতে বাধ্য হয়, তাহলে ডলার সূচক 98.00 পর্যন্ত নেমে যেতে পারে। বিক্রয়ের জন্য সম্ভাব্য লেভেল হতে পারে 98.65।