ইসরায়েল এবং ইরান একে অপরের বিরুদ্ধে মিসাইল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, তবে মনে হচ্ছে মার্কেটের ট্রেডাররা নিজস্ব গতিতেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তারা ধরে নিচ্ছে এই সংঘাত পারমাণবিক পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছাবে না। এই অবস্থায় বিনিয়োগকারীরা ধীরে ধীরে এই সপ্তাহের প্রধান ইভেন্টগুলোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।
মূল দৃষ্টি থাকবে যুক্তরাজ্য এবং ইউরোজোন থেকে প্রকাশিতব্য কনজিউমার ইনফ্লেশন বা ভোক্তা মুদ্রাস্ফীতি সংক্রান্ত প্রতিবেদনের দিকে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে মূল্যস্ফীতি 1.9%-এ স্থিতিশীল থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে, এবং যুক্তরাজ্যে এটি বার্ষিক ভিত্তিতে 3.5% থেকে 3.3%-এ নেমে আসতে পারে।
এই সপ্তাহে সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য এবং অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে—ফেডের বৈঠকের প্রভাবই সবচেয়ে বেশি হবে এবং ইউরোপের দুটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈঠক মার্কেটে তুলনামূলকভাবে কম প্রভাব ফেলতে পারে।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদনগুলোর মধ্যে ফিলাডেলফিয়া ফেড ম্যানুফ্যাকচারিং ইনডেক্স বা উৎপাদন সূচক এবং মার্কিন খুচরা বিক্রয় সূচক প্রকাশিত হবে।
তবে চলুন সপ্তাহের মূল ইভেন্টে ফিরে যাই—ফেডারেল রিজার্ভের চূড়ান্ত আর্থিক নীতিমালা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত, যা মঙ্গলবার ও বুধবার দুই দিনে ঘোষণা করা হবে। সর্বসম্মত পূর্বাভাস অনুযায়ী, ফেড তাদের মূল সুদের হার 4.50%-এ অপরিবর্তিত রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর পেছনে দুটি মূল কারণ হলো—স্থায়ীভাবে উচ্চ ভোক্তা মূল্যস্ফীতি, যা গত সপ্তাহে বার্ষিক ভিত্তিতে বৃদ্ধি প্রদর্শন করেছে (যদিও প্রত্যাশার চেয়ে কম), এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রভাব নিয়ে অনিশ্চয়তা। ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল আগেও এই দুটি বিষয়কে সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তাহলে, ফেড যদি সুদের হার অপরিবর্তিত রাখে, এর ফলাফল কী হতে পারে?
খোলাখুলিভাবে বলতে গেলে, খুব বেশি কিছু নয়। চলমান অনিশ্চয়তা মার্কেটের প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে অব্যাহত থাকবে। ট্রেডাররা ইতিমধ্যে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে সুদের হার কমার পূর্বাভাস দিতে শুরু করেছে। তবে আমি মনে করি আগামী বছরের আগ পর্যন্ত সুদের হার কমানো সম্ভব নয়। এর কারণ কেবল মূল্যস্ফীতি আবার 3%-এ ফিরে আসার সম্ভাবনা কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের অস্পষ্ট ভূ-অর্থনৈতিক নীতিই নয়, বরং এখনো অমিমাংসীত যুক্তরাষ্ট্র–চীন বাণিজ্যযুদ্ধ এবং তার অনির্ধারিত পরিণতিও এতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
এই নেতিবাচক বিষয়গুলোর সম্মিলিত প্রভাব—যেগুলোর প্রত্যেকটাই সুদের হার কমানোর পথে বাধা সৃষ্টি করছে—এবং মার্কেটের ট্রেডাররা ইতোমধ্যে যেগুলো মূল্যায়ন করেছে, সেই বিবেচনায় আমরা বর্তমান প্রবণতার ধারাবাহিকতারই আশা করতে পারি:
- মার্কিন ডলারের দরপতন অব্যাহত থাকবে, কারণ বিনিয়োগকারীরা এখনো ডলার-নির্ভর অ্যাসেটে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী নয়;
- যদি তেল-আবিব ও তেহরানের মধ্যকার সংঘাত আরও বৃদ্ধি পায় এবং ইরান ৩০% বৈশ্বিক তেল সরবরাহ বহনকারী সমুদ্রপথ অবরোধ করে, তাহলে অপরিশোধিত তেলের মূল্যের আবারও ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যেতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে ক্রিপ্টো টোকেনের দাম সম্প্রতি যে উচ্চতায় পৌঁছেছিল, তা অতিক্রম করার সম্ভাবনা কম। বরং এগুলো চওড়া রেঞ্জের মধ্যেই ট্রেডিং চলমান থাকতে পারে।
ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির অগ্রগতি এবং মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনাবলী স্বর্ণ, ডলার এবং স্টক মার্কেটকে প্রভাবিত করতে থাকবে।
সামগ্রিকভাবে, মার্কেটের বিস্তৃত চিত্রের ওপর ভিত্তি করে আমি মনে করি, ফেডের বৈঠকের ফলাফল প্রভাবে মার্কেটে কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে না।
দৈনিক পূর্বাভাস:
স্বর্ণ
মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক সংঘাত স্বর্ণের মূল্যকে ঊর্ধ্বমুখী করছে। যদি 3408.20 লেভেলের সাপোর্ট ব্রেক করা যায়, তাহলে 3382.00 পর্যন্ত একটি ডাউনওয়ার্ড কারেকশন দেখা যেতে পারে, যার পর 3450.70-এর সাম্প্রতিক উচ্চতায় পৌঁছানোর প্রচেষ্টায় নতুন ঊর্ধ্বমুখী মুভমেন্ট শুরু হতে পারে। স্বর্ণ বিক্রির জন্য সম্ভাব্য লেভেল হিসেবে 3404.12-এর লেভেল বিবেচনা করা যেতে পারে।
USD/CAD
তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায়, যা কমোডিটি-সংযুক্ত মুদ্রা হিসেবে কানাডিয়ান ডলারের জন্য সহায়ক, USD/CAD পেয়ারের মূল্যের নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। যদি আবার তেলের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী মোমেন্টাম ফিরে আসে, তাহলে USD/CAD পেয়ার আবারও চাপের মুখে পড়বে। যদি পেয়ারটির মূল্য 1.3600 লেভেলের ওপরে উঠতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তা 1.3435-এর দিকে নেমে যেতে পারে। এই পেয়ার বিক্রির জন্য সম্ভাব্য লেভেল হিসেবে 1.3560-এর লেভেল বিবেচনা করা যেতে পারে।