আসন্ন সপ্তাহটি একদিকে যেমন তথ্যবহুল ও আকর্ষণীয় হতে চলেছে, অন্যদিকে উচ্চমাত্রার অস্থিরা দেখা যেতে পারে। অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে, যা EUR/USD পেয়ারের মূল্যের বড় ধরনের ওঠানামার কারণ হতে পারে।
এছাড়া, ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত "বিগ বিউটিফুল বিল" সিনেট কর্তৃক অনুমোদনের পর মার্কিন ডলার আবারো রাজনৈতিক উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসবে।
সোমবার
সপ্তাহের শুরুতেই মার্কিন ডলার "ঝড়ের কেন্দ্রস্থলে" পড়ে যাবে, কারণ সপ্তাহান্তে সিনেটে (শনিবার) কর ও সরকারি ব্যয় হ্রাস সংক্রান্ত একটি বিতর্কিত বিল অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তবে এটি এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়: ৯৪০ পৃষ্ঠার এই বিল নিয়ে বিতর্ক শুরু করার ব্যাপারে সিনেটররা (৫১ বনাম ৪৯ ভোটে) প্রস্তুত, যেখানে প্রায় $4 ট্রিলিয়ন কর হ্রাসের সিদ্ধান্ত অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পরবর্তী ধাপে (৪ জুলাই পর্যন্ত) সংসদ সদস্যরা সংশোধনী প্রস্তাব দেবেন। যেহেতু বিল পরিবর্তিত হবে (এটি প্রায় নিশ্চিত), এটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আবার প্রতিনিধি পরিষদে ফিরে আসবে এবং তারপর ট্রাম্পের স্বাক্ষরের জন্য পাঠানো হবে।
অতএব, শনিবারের ভোট ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াগত ধাপ, তবে এটিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়।
ডলারের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে?
মোটের ওপর, যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক অবস্থার প্রতি উদ্বেগ বাড়ার কারণে ডলারের ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। প্রাথমিক হিসেবে অনুযায়ী, বিলটি পাস হলে আগামী এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ঋণে প্রায় $3.8 ট্রিলিয়ন যুক্ত হবে (বর্তমান ঋণের পরিমাণ $36.2 ট্রিলিয়ন)। রাজনৈতিক দ্বন্দ্বও ডলারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, কারণ বিলটি শুধু ডেমোক্রেটদের নয়, কিছু রিপাবলিকানদেরও বিরোধিতার মুখে পড়েছে। এমনকি ট্রাম্পের সাবেক মিত্ররাও বিরোধি শিবিরে যোগ দিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, ইলন মাস্ক বিলটিকে "পুরোপুরি পাগলামি ও ধ্বংসাত্মক" বলে মন্তব্য করেছেন এবং বলেছেন এটি লক্ষাধিক কর্মসংস্থান ধ্বংস করবে এবং কৌশলগতভাবে দেশটির ক্ষতি করবে।
সিনেটের এই সিদ্ধান্তই সোমবার মার্কেটের মূল প্রভাবক হবে।
এছাড়া, সোমবার এশিয়ান সেশনে চীনের ম্যানুফ্যাকচারিং বা উৎপাদন সংক্রান্ত PMI প্রকাশিত হবে। পূর্বাভাস অনুযায়ী সূচকটি 49.5 থেকে 49.6-এ সামান্য বৃদ্ধির কথা বলা হলেও এটি সংকোচনের সীমার মধ্যেই থাকবে। যদি এটি ৫০-এর উপরে আসে, তাহলে তা ঝুঁকি গ্রহণের প্রবণতা বাড়িয়ে ইউরোকে শক্তিশালী করতে পারে, এমনকি ডলারের বিপরীতেও ইউরোর দর বৃদ্ধি পেতে পারে।
ইউরোপীয় সেশনে, জার্মানির মুদ্রাস্ফীতি প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে। বেশিরভাগ বিশ্লেষক আশা করছেন জুন মাসে দেশটির বার্ষিক CPI 2.3%-এ পৌঁছাবে এবং হারমোনাইজড ইনডেক্স 2.2%-এ উঠবে। জার্মানির মুদ্রাস্ফীতির ফলাফল প্রায়ই ইউরোজোনের সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতির প্রবণতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়, তাই এই প্রতিবেদনের ইতিবাচক ফলাফল EUR/USD পেয়ারের ক্রেতাদের জন্য সহায়ক হবে।
মঙ্গলবার
মঙ্গলবার একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন হিসেবে ISM ম্যানুফ্যাকচারিং PMI প্রকাশিত হবে। সূচকটি টানা চার মাস ধরে হ্রাস পাচ্ছে এবং সংকোচন সীমার নিচে রয়েছে। জুনে এটি 48.5 থেকে 48.8-এ বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস, তবে এটি ৫০-এর নিচেই থাকবে। কেবলমাত্র সূচকটি যদি ৫০-এর উপরে আসে, তবেই ডলারের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে।
আরেকটি প্রতিবেদন হচ্ছে JOLTs (চাকরির শূন্যপদ সংক্রান্ত প্রতিবেদন), যা 7.390 মিলিয়ন থেকে 7.450 মিলিয়নে বাড়তে পারে। তবে এই সূচকটি আগের মাসের ফলাফল হওয়ায় এটির ফলাফল EUR/USD পেয়ারের উপর তেমন প্রভাব ফেলবে না।
এর বিপরীতে, ইউরোজোনের CPI বা ভোক্তা মূল্য সূচক সংক্রান্ত প্রতিবেদনের ফলাফল মার্কেটে আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারে। হেডলাইন বা প্রধান মুদ্রাস্ফীতি 2.9%-এ পৌঁছাতে পারে (যা পূর্বে 1.9% ছিল), আর কোর বা মূল মুদ্রাস্ফীতি 2.3%-এ স্থির থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ইসিবি) জানিয়েছে যে তারা মুদ্রানীতির নমনীয়করণ চক্র শেষ করছে, তবে অস্পষ্ট ভাষায় কিছু ব্যাখ্যার সুযোগ রেখেছে। যদি মুদ্রাস্ফীতি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি আসে, তাহলে এটি ইসিবির সুদের হার হ্রাসকরণ চক্র শেষ হওয়ার ইঙ্গিত দিতে পারে।
মঙ্গলবারই ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল এবং ইসিবির প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্দ বক্তব্য দেবেন। পাওয়েল গত সপ্তাহেই কংগ্রেসে বক্তব্য দিয়েছেন, তাই তার বক্তব্য থেকে চমকপদ কোনো তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা কম—তবে তিনি ট্রাম্পের সাম্প্রতিক আক্রমণের (যেখানে ট্রাম্প তাকে "সম্পূর্ণ বোকা" বলেছেন) বিষয়ে মন্তব্য করতে পারেন। লাগার্ড সকালেই প্রকাশিত মুদ্রাস্ফীতি প্রতিবেদন এবং PMI/IFO-এর ফলাফল নিয়ে মন্তব্য করতে পারেন।
বুধবার
বুধবার ADP থেকে কর্মসংস্থান সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে, যা শুক্রবারের ননফার্ম পেরোল প্রতিবেদনের পূর্বাভাস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যদিও এই দুই প্রতিবেদনের ফলাফলের মাঝে সবসময় মিল থাকে না, তবে দুর্বল ফলাফল প্রকাশিত হলে সেটি মার্কেটে প্রভাব ফেলতে পারে। এই মাসে মাত্র +105,000 কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পূর্বাভাস রয়েছে। যদি এটি 100,000-এর নিচে নামে, তাহলে ডলারের ওপর চাপ বাড়বে।
ইউরোজোনের বেকারত্বের হারও প্রকাশিত হবে, যা 6.2%-এ স্থির থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে কোনো চমক না থাকলে ট্রেডাররা এই প্রতিবেদনটিকে উপেক্ষা করতে পারে।
বৃহস্পতিবার
সাধারণত ননফার্ম পেরোল প্রতিবেদন শুক্রবার প্রকাশিত হয়। তবে ৪ জুলাই স্বাধীনতা দিবস হওয়ায় এই মাসে এটি বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হবে।
প্রাথমিক পূর্বাভাস অনুযায়ী ডলারের জন্য ইতিবাচক কিছু দেখা যাচ্ছে না। মার্কিন বেকারত্বের হার 4.3%-এ পৌঁছাতে পারে, যা আগস্ট 2024-এর পর সর্বোচ্চ। ননফার্ম পেরোল মাত্র 120,000 বাড়তে পারে, যা 200,000-এর লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক কম। যদি এটি 100,000-এর নিচে আসে, তাহলে ডলার ক্রেতাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হবে। গড় ঘণ্টাভিত্তিক আয় মাসিক 0.3% এবং বার্ষিক 3.8% হারে বাড়তে পারে।
এই দিনেই ISM সার্ভিসেস বা পরিষেবা সংক্রান্ত PMI সূচক প্রকাশিত হবে। গত মাসে এটি আকস্মিকভাবে সংকোচনে নেমে আসে (49.9 বনাম পূর্বাভাস 53.2)। এবার এটি 50.8-এ উঠতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদি এটি আবারও ৫০-এর নিচে থাকে, তাহলে ডলারের ওপর পুনরায় বড় চাপ আসতে পারে।
শুক্রবার
ক্যালেন্ডারে তেমন কিছুই নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মার্কেট বন্ধ থাকবে। একমাত্র উল্লেখযোগ্য প্রতিবেদন হবে ইউরোজোনের উৎপাদক মূল্যসূচক (PPI), যা শুধু পূর্ববর্তী মাসের মুদ্রাস্ফীতির প্রবণতার নিশ্চিত করবে।
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ
H4 এবং তদূর্ধ্ব প্রায় সব টাইমফ্রেমে, EUR/USD পেয়ারের মূল্য বলিঙ্গার ব্যান্ডের মিডিয়ান বা আপার লাইনে অবস্থান করছে। এই পেয়ারের মূল্য ইচিমোকুর সব লাইনের উপরে রয়েছে, এবং H4 ও W1 চার্টে বুলিশ "প্যারেড অব লাইন্স" সিগন্যাল দেখা যাচ্ছে। এই সেটআপ লং পজিশনের পক্ষে ইঙ্গিত দিচ্ছে। ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা: 1.1800 (W1-এ আপার বলিঙ্গার ব্যান্ড)।