ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাসেটের চাহিদা বৃদ্ধিতে বড় ধরনের সহায়তা দিচ্ছে, এবং এই সপ্তাহে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনার সম্ভাবনা মার্কেটে ইতিবাচক মনোভাব আরও শক্তিশালী করছে।
সামরিক সংঘাতের বিষয়টি এখন অনেকটাই পেছনের কাতারে চলে গেছে, যার ফলে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারছে। তবে আশাবাদী মনোভাবের পেছনে আরেকটি বড় কারণ রয়েছে—ট্রাম্প প্রশাসনের পারস্পরিক শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত। মনে হচ্ছে ৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট এটি বুঝতে শুরু করেছেন যে "গ্যাংস্টার স্টাইলে চাপ প্রয়োগের" কৌশল বাণিজ্যিক অংশীদারদের ওপর কার্যকর হচ্ছে না এবং উল্টো দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আরও একটি ইতিবাচক বিষয় হলো, বাণিজ্য সচিব এইচ. লুটনিকের এই বিবৃতি যে ওয়াশিংটন এবং বেইজিংয়ের মধ্যকার বাণিজ্য কাঠামো সংক্রান্ত আলোচনার সমাপ্তি ঘটেছে। এই পটভূমিতে এখন মার্কেটের দৃষ্টি সিনেটের দিকে চলে গেছে, যেখানে ট্রাম্পের "বিগ বিউটিফুল বিল"—যেটিতে বড় আকারের সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির ও কর ছাড়ের প্রস্তাব রয়েছে—তা নিয়ে বিতর্ক চলছে।
এই ঘটনার ধারাবাহিকতায়, স্টক মার্কেটে মে মাস থেকে শুরু হওয়া ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে, এবং অন্তত যুক্তরাষ্ট্রে, স্থানীয় স্টক সূচকগুলোর দর আবারও নতুন ঐতিহাসিক উচ্চতায় পৌঁছাচ্ছে।
উপরোক্ত ইতিবাচক পটভূমি ক্রিপ্টোকারেন্সির চাহিদাকেও সহায়তা করছে, যার ফলে ক্রিপ্টোর মূল্য ধীরে ধীরে ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। অপরদিকে, ইরান-ইসরায়েল আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার প্রত্যাশায় তেলের মূল্য স্থবির হয়ে রয়েছে এবং একটি সংকীর্ণ রেঞ্জের মধ্যে তেলের মূল্যের কনসোলিডেশন হচ্ছে, যেখান থেকে মূল্য হঠাৎ উর্ধ্বমুখী হতে পারে, না হয় নিম্নমুখী মোমেন্টাম বজায় থাকতে পারে। তেলের মূল্যের সম্ভাব্য পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে এই আলোচনার অগ্রগতির ওপর নির্ভর করবে।
সোমবারের ট্রেডে স্বর্ণের উল্লেখযোগ্য দরপতনের পর আজ পুনরুদ্ধার দেখা যাচ্ছে—যা আবারও ইরান-ইসরায়েল আলোচনার প্রত্যাশাকে কেন্দ্র করে হচ্ছে। তেলের মতোই, আলোচনায় নেতিবাচক ফল আসলে স্বর্ণের দাম বাড়তে পারে, আর ইতিবাচক ফল এলে স্বর্ণের দরপতন অব্যাহত রাখতে পারে।
মার্কিন ডলার এখনো দুর্বল মুদ্রার কাতারে রয়েছে, ICE ডলার সূচক 97.00 লেভেলের সামান্য ওপরে ট্রেড করছে—যদি এই লেভেল ব্রেক করে দরপতন হয়, তাহলে ডলারের মূল্যের বিয়ারিশ প্রবণতা আরও জোরদার হতে পারে।
এই সপ্তাহের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন:
এই সপ্তাহে মার্কেটের ট্রেডাররা ইউরোজোনের ভোক্তা মূল্য সূচক, উৎপাদন খাতের কার্যকলাপ, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের JOLTS কর্মসংস্থান সৃষ্টি সংক্রান্ত প্রতিবেদনের দিকে মনোযোগ দেবে। বিশেষভাবে বুধবার প্রকাশিতব্য ADP এবং বৃহস্পতিবার প্রকাশিতব্য লেবার ডিপার্টমেন্টের মার্কিন শ্রম বাজার সম্পর্কিত প্রতিবেদনের দিকেও নজর থাকবে। গড় মজুরি ও গড় কর্মঘণ্টার পরিবর্তন সম্পর্কিত প্রতিবেদনও আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে।
আজকের মার্কেট থেকে কী প্রত্যাশা করা যেতে পারে?
ইতিবাচক মনোভাবই সম্ভবত মার্কেটে প্রাধান্য পাবে, যা স্টক ও ক্রিপ্টো মার্কেটে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বিরাজ করতে সহায়তা করবে। ডলারের দর 97.00 লেভেলের নিচে নেমে গেলে দরপতনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকতে পারে। ইরান-ইসরায়েল আলোচনায় অনিশ্চয়তা থাকার কারণে স্বর্ণের মূল্যের পুনরুদ্ধার সীমিত থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে স্বাধীনতা দিবসের ছুটির কারণে এই সপ্তাহে মার্কিন ফাইন্যান্সিয়াল মার্কেটে সীমিত কার্যক্রম দেখা যাবে, যা ট্রেডিং কার্যক্রমে প্রভাব ফেলতে পারে।
আজকের পূর্বাভাস:
#USDX
দুর্বল ডলারের প্রেক্ষাপটে মার্কিন ডলার সূচকের নিম্নমুখী প্রবণতা বজায় রাখতে পারে। যদি সূচকটি 97.00 লেভেলের নিচে নেমে যায়, তাহলে দরপতনের গতি বাড়তে পারে এবং তা 96.00 পর্যন্ত যেতে পারে। এই সূচক বিক্রির জন্য উপযুক্ত লেভেল হিসেবে 96.92 বিবেচনা করা যেতে পারে।
EUR/USD
ডলারের দুর্বলতা এবং ইউরোপে সামরিক কার্যক্রম বৃদ্ধি (যা প্রতিরক্ষা খাতে বড় বাজেট ব্যয় নির্দেশ করে) কারণে এই পেয়ারের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে—যা ইউরোর চাহিদাকে সমর্থন দিচ্ছে। এই পটভূমিতে, এই পেয়ারের মূল্য 1.1750-এর রেজিস্ট্যান্স লেভেল ব্রেক করে 1.1885-এর দিকে অগ্রসর হতে পারে। এই পেয়ার ক্রয়ের জন্য সম্ভাব্য এন্ট্রি লেভেল হিসেবে 1.1758 বিবেচনা করা যেতে পারে।