গতকাল প্রকাশিত মার্কিন শ্রমবাজার সংক্রান্ত প্রতিবেদনের ফলাফল যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য একপ্রকার সতর্কবার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রতিবেদনের অনুযায়ী, জুন মাসে কর্মসংস্থানের সংখ্যা দুই বছরেরও বেশি সময় পর প্রথমবারের মতো হ্রাস পেয়েছে, যার মূল কারণ হিসেবে সেবামূলক খাতে চাকরির সংখ্যা হ্রাসকে বিবেচনা করা হচ্ছে। এটি শ্রমবাজারে আরও সুস্পষ্ট মন্থরতার আশঙ্কা তৈরি করছে। এই নেতিবাচক প্রবণতা অবশ্যই ঘনিষ্ঠ নজরদারির দাবি রাখে। বহুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচিত সেবামূলক খাত এখন দুর্বলতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই খাতে চাকরি হ্রাসের অর্থ হতে পারে আরও গভীর সমস্যার সূচনা, যা অন্যান্য খাতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
এটি মনে রাখা জরুরি যে শ্রমবাজার একটি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পরিমাপের অন্যতম প্রধান সূচক। এর মন্থরতা ভোক্তা ব্যয় হ্রাস, বিনিয়োগে স্থবিরতা এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে অবনতির কারণ হতে পারে। তবে এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত টানা উচিত হবে না। আরও প্রতিবেদনের অপেক্ষা করে সেটিকে সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট অনুযায়ী বিশ্লেষণ করতে হবে।
ADP-এর তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে 29,000 কর্মসংস্থানের সংশোধিত বৃদ্ধির পর জুনে বেসরকারি খাতে চাকরির সংখ্যা 33,000 হ্রাস পেয়েছে। ADP-এর প্রধান অর্থনীতিবিদ নেলা রিচার্ডসন বলেন, "যদিও ছাঁটাইয়ের ঘটনা এখনো তুলনামূলকভাবে বিরল, তবে নিয়োগে দ্বিধা এবং বিদায়ী কর্মীদের স্থলাভিষিক্ত করতে অনীহার কারণে গত মাসে চাকরির সংখ্যা হ্রাস হয়েছে।"
যদিও ADP-এর প্রতিবেদন সরকারের জুন মাসের অফিসিয়াল পে-রোল সংখ্যার পূর্বাভাস দেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা হয়না, যেটি আজ প্রকাশিত হবে, তবুও ওয়েলস ফার্গো অ্যান্ড কোং এবং এভারকোর আইএসআই-এর অর্থনীতিবিদরা প্রতিবেদনের দুর্বল ফলাফল প্রকাশের প্রতিক্রিয়ায় তাদের অর্থনৈতিক ও শ্রমবাজার প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস হ্রাস করেছে। সমীক্ষার গড় পূর্বাভাস অনুযায়ী, 110,000 কর্মসংস্থান বৃদ্ধির আশা করা হচ্ছে, যা গত চার মাসে সবচেয়ে কম বৃদ্ধি হবে।
এটি স্পষ্ট যে নিয়োগদাতারা ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্যনীতির প্রভাব নিয়ে আরও সতর্ক হয়ে উঠেছেন এবং খরচ কমানোর প্রচেষ্টায় মনোযোগী হয়েছেন। প্রতিষ্ঠানগুলো এখন তাদের কর্মীবাহিনীকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি অনুযায়ী পুনর্গঠন করছে, যা চলতি বছরে মন্থর হয়েছে।
ADP-এর তথ্য অনুযায়ী, গত তিন মাসে গড় মজুরি বৃদ্ধি মে মাসে কমে দাঁড়িয়েছে 18,700-এ, যা মহামারির শুরুর পর থেকে সর্বনিম্ন। অন্যান্য উপাত্ত ইঙ্গিত দেয় যে বেকাররা নতুন চাকরি পেতে বেশি সময় নিচ্ছেন, এবং চাকরি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান চ্যালেঞ্জার, গ্রে অ্যান্ড ক্রিসমাসের তথ্যে দেখা যাচ্ছে যে জুন মাসে নিয়োগ পরিকল্পনা 2004 সালের পর দ্বিতীয় সর্বনিম্ন ছিল। কনফারেন্স বোর্ডের তথ্যমতে, জুনে যারা প্রচুর চাকরির সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন, তাদের অনুপাত গত চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
দুর্বলতার লক্ষণ সত্ত্বেও, ফেডারেল রিজার্ভ চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল এই সপ্তাহের শুরুতে পুনরায় বলেছেন যে শ্রমবাজার স্থিতিশীল রয়েছে। ফেডের কর্মকর্তারা এ বছর এখনো পর্যন্ত সুদের হার কমানোর পদক্ষেপ নেননি, বরং শুল্কের কারণে সৃষ্ট মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব মূল্যায়নের অপেক্ষায় আছেন।
টেকনিক্যাল প্রেক্ষাপট: EUR/USD
বর্তমানে EUR/USD পেয়ারের ক্রেতাদের এই পেয়ারের মূল্যকে 1.1825 লেভেলে পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা উচিত। কেবল তখনই 1.1866-এর লেভেল টেস্ট করা সম্ভব হবে। সেখান থেকে, মার্কেটের বড় ট্রেডারদের সমর্থন ছাড়া 1.1903 পর্যন্ত পৌঁছানো চ্যালেঞ্জিং হবে। ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বজায় থাকার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ লক্ষ্যমাত্রা হলো 1.1935-এর লেভেল। যদি এই ইন্সট্রুমেন্টের দরপতন হয়, তাহলে মূল্য 1.1780-এর আশেপাশে থাকা অবস্থায় উল্লেখযোগ্যভাবে এই পেয়ার ক্রয় আগ্রহ দেখা যেতে পারে। যদি সেখানে কোনো ক্রয় কার্যক্রম না দেখা জায়, তাহলে 1.1750-এর নিম্ন লেভেল পুনরায় টেস্টের জন্য অপেক্ষা করা অথবা 1.1710 লেভেল থেকে লং পজিশন ওপেন করা যুক্তিযুক্ত হতে পারে।
টেকনিক্যাল প্রেক্ষাপট: GBP/USD
পাউন্ডের ক্রেতাদের প্রথম কাজ হবে এই পেয়ারের মূল্যকে 1.3660-এর নিকটতম লেভেল অতিক্রম করানো, যাতে করে মূল্য 1.3705-এর দিকে যাত্রা শুরু করতে পারে। যদিও সেই লেভেল অতিক্রম করাও কঠিন হবে। ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বজায় থাকার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ লক্ষ্যমাত্রা 1.3746-এর লেভেল রয়েছে। অন্যদিকে, দরপতনের ক্ষেত্রে বিক্রেতারা 1.3610 লেভেলের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করবে। যদি তারা এতে সফল হয়, তবে মূল্য সেই রেঞ্জ ব্রেক করে নিচের দিকে গেলে সেটি ক্রেতাদের একটি বড় ধাক্কা হতে পারে এবং GBP/USD পেয়ারের মূল্য 1.3565-এর নিম্ন লেভেলের দিকে নেমে যেতে পারে, এমনকি 1.3530 পর্যন্ত দরপতন প্রসারিত হতে পারে।