বুধবার EUR/USD কারেন্সি পেয়ারের মূল্যের বিয়ারিশ প্রবণতা বজায় ছিল। দিনের সকল সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রতিবেদন নিয়ে আমরা অন্য আর্টিকেলে আলোচনা করব; এই প্রতিবেদনে সপ্তাহের মূল ইভেন্ট নিয়েই আলোকপাত করা হয়েছে। না, এটি ফেডারেল রিজার্ভের বৈঠক নয় — কারণ ২০২৫ সালে ভূ-রাজনৈতিক ও বাণিজ্যসংক্রান্ত সংঘাতের কারণে এই বৈঠকগুলোর ফলাফল ডলারের এক্সচেঞ্জ রেটকে খুব একটা প্রভাবিত করছে না।
সোমবার, ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং উরসুলা ভন ডার লায়েন একটি "ঐতিহাসিক বাণিজ্য চুক্তি" স্বাক্ষরের ঘোষণা দেন। এই চুক্তি অনুসারে, "সবকিছু" আমেরিকার দিকে যাচ্ছে, আর ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ভাগ্যে "কিছুই জোটেনি"। ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি পণ্যের ওপর শুল্ক শুধু বহালই থাকেনি, বরং "শুল্ক" আরও বেড়েছে। শুধু শুল্ক নয়, ব্রাসেলস একটি আর্থিক শর্তাবলীতেও সম্মত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে, ইউরোপ আগামী তিন বছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে $750 বিলিয়ন মূল্যের জ্বালানি সম্পদ কিনতে রাজি হয়েছে।
প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, কাগজে-কলমে ব্যাপারটি যতই দৃষ্টিনন্দন হোক না কেন, একটু গভীরে গিয়ে দেখলেই অনেক প্রশ্ন উঠে আসে। প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হলো: ইউরোপীয় সরকার কীভাবে বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনেক বেশি দামে তেল ও গ্যাস কিনতে বাধ্য করবে, যেখানে অন্যান্য উৎস থেকে তা অনেক সস্তায় পাওয়া যায়? মনে করিয়ে দিই, ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো রাষ্ট্রায়ত্ত নয় — সেগুলো পাবলিক বা প্রাইভেট ফার্ম, যারা স্বাধীনভাবে নির্ধারণ করে কোথা থেকে কোন কাঁচামাল কিনবে। যেকোনো ব্যবসার উদ্দেশ্যই খরচ কমানো, অথচ উরসুলা ভন ডার লায়েন এমন একটি চুক্তিতে সই করেছেন যা ইউরোপীয় উৎপাদকদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল ও গ্যাস কিনতে বাধ্য করে।
গত বছর, এই জোটভুক্ত দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে $75 বিলিয়নের তেল ও গ্যাস আমদানি করেছিল, এবং মোট জ্বালানি আমদানি ছিল প্রায় $450 বিলিয়ন। অর্থাৎ, ইউরোপীয় উৎপাদকদের এখন অনেক গুণ বেশি পরিমাণ আমদানি করতে হবে — আরও বেশি দামে — যা তাদের উৎপাদন খরচ বাড়াবে। স্বাভাবিকভাবেই, এটি ব্যবসার জন্য অলাভজনক, বিশেষ করে যখন ট্রাম্পের শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের পণ্যের চাহিদা হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এখানেই শেষ নয় — আরও চমকপ্রদ তথ্য আছে। ট্রাম্প চান তেলের দাম বর্তমানে যা আছে তার চেয়েও কম হোক। যদি তেলের দাম আসলেই পড়ে যায়, তাহলে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বছরে $250 বিলিয়ন চাহিদার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে আরও বেশি পরিমাণ অপরিশোধিত তেল কিনতে হবে। এই অতিরিক্ত তেল কী করা হবে? পূর্বদিকে বিক্রি করা হবে, যেখানে ইতোমধ্যেই প্রচুর তেল রয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তরও অজানা।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ইউরোপ দীর্ঘদিন ধরে "পরিবেশবান্ধব জ্বালানির" কৌশল অনুসরণ করে আসছে, যার মূল লক্ষ্যই হচ্ছে কয়লা, গ্যাস, তেল ও অন্যান্য দূষণকারী জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করা। তাহলে ইউরোপ কিভাবে জ্বালানি আমদানি কয়েকগুণ বাড়াবে, যখন তাদের নিজস্ব লক্ষ্যই হচ্ছে এই ধরনের জ্বালানির ব্যবহার কমানো? প্রশ্ন অনেক, উত্তর কম। মনে হচ্ছে, উরসুলা ভন ডার লায়েন কোনো বিশদ বিশ্লেষণ ছাড়াই ট্রাম্পের দেওয়া চুক্তিতে সই করেছেন। চুক্তিতে উল্লেখিত সব তথ্যই সন্দেহজনকভাবে অস্পষ্ট, যা অর্থনৈতিকভাবে তেমন যুক্তিযুক্ত বা হিসেবনির্ভর বলে মনে হয় না।
৩১ জুলাই পর্যন্ত গত পাঁচ দিনের ট্রেডিংয়ে গড় ভোলাটিলিটি অনুযায়ী EUR/USD কারেন্সি পেয়ারের মূল্যের অস্থিরতার পরিমাণ হচ্ছে 101 পিপস, যা "উচ্চ" হিসেবে শ্রেণিভুক্ত। বৃহস্পতিবার আমরা আশা করছি এই পেয়ারের মূল্য 1.1372 এবং 1.1574 এর রেঞ্জের মধ্যে মুভমেন্ট প্রদর্শন করবে। দীর্ঘমেয়াদি লিনিয়ার রিগ্রেশন চ্যানেল ঊর্ধ্বমুখী, যা এখনও একটি বুলিশ প্রবণতা নির্দেশ করে। CCI ইন্ডিকেটর আবারও ওভারসোল্ড জোনে প্রবেশ করেছে, যা পুনরায় ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুরু হওয়ার সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
নিকটতম সাপোর্ট লেভেল:
S1 – 1.1475
S2 – 1.1414
S3 – 1.1353
নিকটতম রেজিস্ট্যান্স লেভেল:
R1 – 1.1536
R2 – 1.1597
R3 – 1.1658
ট্রেডিংয়ের পরামর্শ:
EUR/USD পেয়ারের মূল্যের একটি নতুন কারেকটিভ মুভমেন্টে শুরু হয়েছে। ট্রাম্পের বৈদিশিক ও অভ্যন্তরীণ নীতিগুলো মার্কিন ডলারের ওপর প্রবল চাপ অব্যাহত রেখেছে। যদিও এই সপ্তাহে ডলারের মূল্য কিছুটা বেড়েছে, তবুও আমরা এখনও মধ্যমেয়াদে এই পেয়ারের বাই পজিশনের জন্য কোনো যথার্থ ভিত্তি দেখছি না।
যদি মূল্য মুভিং অ্যাভারেজের নিচে অবস্থান করে, তাহলে 1.1414 এবং 1.1372-এর লক্ষ্যমাত্রায় শর্ট পজিশন বিবেচনা করা যেতে পারে। আর যদি মূল্য মুভিং অ্যাভারেজের ওপরে থাকে, তাহলে চলমান প্রবণতা বজায় থাকার ধারাবাহিকতায় 1.1719 এবং 1.1780 লক্ষ্যমাত্রা লং পজিশন প্রাসঙ্গিক থাকবে।
চার্টের ব্যাখা:
লিনিয়ার রিগ্রেশন চ্যানেলস বর্তমান প্রবণতা নির্ধারণে সহায়তা করে। যদি উভয় চ্যানেল একই দিকে থাকে, তাহলে তা একটি শক্তিশালী প্রবণতা নির্দেশ করে।
মুভিং অ্যাভারেজ লাইন (সেটিংস: 20,0, স্মুদেড) স্বল্পমেয়াদি প্রবণতা নির্ধারণ করে এবং ট্রেডিংয়ের দিকনির্দেশনা প্রদান করে।
মারে লেভেলস মুভমেন্ট এবং কারেকশনের লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে কাজ করে।
ভোলাটিলিটি লেভেলস (লাল লাইন) বর্তমান অস্থিরতার মাত্রার তথ্যের ভিত্তিতে আগামী 24 ঘণ্টায় পেয়ারের মূল্যের সম্ভাব্য রেঞ্জ নির্দেশ করে।
CCI ইনডিকেটর: যদি এটি -250 এর নিচে ওভারসোল্ড বা +250 এর ওপরে ওভারবট জোনে প্রবেশ করে, তবে এটি প্রবণতা বিপরীতমুখী হওয়ার পূর্বাভাস দেয়।