ইউরোজোনের মুদ্রাস্ফীতির হার ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করলেও—যা আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে সুদের হার অপরিবর্তিত রাখার প্রত্যাশাকে আরও জোরদার করেছে—মার্কিন ডলারের বিপরীতে ইউরোর তীব্র দরপতন ঘটেছে।
মনে হচ্ছে, ট্রেডাররা ধারণা করছেন যে ইসিবির কঠোর অবস্থান আবারও অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, যা বরং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বদলে নতুন করে চাপ সৃষ্টি করবে।
আগস্ট মাসে ইউরোজোনের ভোক্তা মূল্যসূচক (CPI) বার্ষিক ভিত্তিতে বৃদ্ধি পেয়ে 2.1%-এ পৌঁছেছে, যা জুলাইয়ের 2% থেকে বেশি এবং অর্থনীতিবিদদের পূর্বাভাসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতি, যেখানে জ্বালানি ও খাদ্যের মতো অস্থির উপাদান অন্তর্ভুক্ত, 2.3%-এ অপরিবর্তিত ছিল। পরিষেবা খাতের মূল্যস্ফীতি, যা সাধারণত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়, কমে 3.1% হয়েছে।
এই পরিসংখ্যান ইউরোজোনে অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলছে, যেখানে সুদের হার হ্রাসের বিরতি এবং তারল্য হ্রাস পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে। বিনিয়োগকারীরা আশঙ্কা করছেন, ইসিবি আবারও কেবল মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলাতেই মনোনিবেশ করবে, যা অর্থনৈতিক মন্দাকে আরও তীব্র করতে পারে—বিশেষত উচ্চ ঋণগ্রস্ত দেশগুলোতে।
অন্যদিকে, কঠোর মুদ্রানীতি বজায় রাখারও কিছু যুক্তি রয়েছে। ইউরোজোনে মুদ্রাস্ফীতি এখনো ইসিবির 2%-এর লক্ষ্যমাত্রার উপরে রয়েছে, এবং সঠিক পদক্ষেপ না নিলে নীতিনির্ধারকের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে—বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন বাণিজ্য শুল্ক বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে, যা বছরের শেষ নাগাদ মুদ্রাস্ফীতি আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। তাছাড়া, কিছু অর্থনীতিবিদ মনে করেন, নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যবৃদ্ধির কারণে দীর্ঘমেয়াদি স্থবির মুদ্রাস্ফীতির তুলনায় স্বল্পমেয়াদে অর্থনৈতিক মন্দা কম ক্ষতিকর হতে পারে।
প্রতিবেদনটি ইসিবির সেই অবস্থানকেই শক্তিশালী করেছে যে 11 সেপ্টেম্বরের বৈঠকে ব্যাংকটি ঋণের সুদের হার কমানো থেকে বিরত থাকতে পারে, মুদ্রাস্ফীতির গতি এবং মার্কিন শুল্ক বৃদ্ধির চাপ সহ্য করার অর্থনীতির সক্ষমতা—উভয় বিষয়কে বিবেচনায় রেখে।
জুলাই মাসে ইসিবির কর্মকর্তারা সুদের হার 2%-এ অপরিবর্তিত রেখেছিলেন এবং প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্ড নিশ্চিত করেছিলেন যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক "ভালো অবস্থানে রয়েছে"। এখন আর বিনিয়োগকারীরা নিশ্চিত নন যে এ বছর আর সুদের হার কমানো হবে কিনা।
সম্প্রতি বুন্ডেসব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জোয়াকিম নাগেল ইউরোজোনের অর্থনীতি এক ধরনের ভারসাম্য মধ্যে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন, যেখানে মুদ্রাস্ফীতি এবং সুদের হার উভয়ই 2%-এ রয়েছে। নির্বাহী বোর্ড সদস্য ইসাবেল স্নাবেল এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি সুদের হার কমানোর কোনো ভিত্তি দেখছেন না। তিনি সতর্ক করেছেন যে মার্কিন শুল্ক সরাসরি মুদ্রাস্ফীতির চাপ সৃষ্টি করবে।
আজ ইসিবির প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্ডের ভাষণ প্রত্যাশিত, যা EUR/USD পেয়ারের মূল্যের ভবিষ্যত দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করতে পারে।
উল্লেখযোগ্য যে ইউরোজোনের সর্বশেষ প্রতিবেদনের অন্যান্য অঞ্চলের মিশ্র সংকেত অনুসরণ করছে। যেখানে ফ্রান্স, ইতালি এবং স্পেনের মুদ্রাস্ফীতির হার প্রত্যাশার চেয়ে দুর্বল ছিল, সেখানে জার্মানির মুদ্রাস্ফীতি পূর্বাভাসের চেয়ে কিছুটা বেশি ছিল। ফলে পরিস্থিতি অনিশ্চিতই রয়ে গেছে—এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি চুক্তির পরেও যাতে অধিকাংশ রপ্তানি পণ্যের শুল্ক 15% সীমার মধ্যে নির্ধারণ করা হয়েছে।
বর্তমান EUR/USD পেয়ারের টেকনিক্যাল চিত্র অনুযায়ী, ক্রেতাদের এই পেয়ারের মূল্যকে 1.1655 লেভেলে পুনরুদ্ধার করতে হবে। কেবল এটিই 1.1685 লেভেল টেস্টের সুযোগ করে দেবে। সেখান থেকে এই পেয়ারের মূল্য 1.1715 পর্যন্ত বাড়তে পারে, তবে বড় ট্রেডারদের সমর্থন ছাড়া এটি করা বেশ কঠিন হবে। সর্বোচ্চ লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে 1.1740-এর লেভেল। দরপতনের ক্ষেত্রে আমি কেবল মূল্য 1.1625 লেভেলের কাছাকাছি থাকা অবস্থায় ক্রেতাদের উল্লেখযোগ্য সক্রিয়তার প্রত্যাশা করছি। যদি সেখানে কোনো সাপোর্ট না পাওয়া যায়, তবে 1.1605 লেভেল পুনরায় টেস্ট হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করাই উচিত হবে অথবা 1.1575 থেকে লং পজিশন বিবেচনা করা যেতে পারে।
অন্যদিকে GBP/USD পেয়ারের ক্ষেত্রে ক্রেতাদের এই পেয়ারের মূল্যকে নিকটতম রেজিস্ট্যান্স 1.3390 লেভেল নিয়ে যেতে হবে। কেবল এটিই এই পেয়ারের মূল্যের 1.3430 পর্যন্ত মুভমেন্টের সুযোগ সৃষ্টি করবে, যদিও মূল্যের এই লেভেলের উপরের অগ্রগতি কঠিন হবে। সর্বোচ্চ লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে 1.3470 লেভেল। দরপতনের ক্ষেত্রে বিক্রেতারা 1.3340 লেভেলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করবে। তারা সফল হলে, মূল্য এই রেঞ্জ ব্রেক করলে GBP/USD পেয়ারের মূল্য 1.3310 লেভেলের দিকেনামতে পারে এবং পরবর্তীতে 1.3280 পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।