গতকাল বেশ কিছু মুদ্রার বিপরীতে মার্কিন ডলারের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত ছিল — যার মধ্যে ইউরো ও জাপানি ইয়েন সবচেয়ে বেশি দরপতনের শিকার হয়েছে।
মিনিয়াপলিস ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট নিল কাশকারির মন্তব্যের পর আবারও মার্কিন ডলারের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুরু হয়, যেখানে তিনি সতর্ক করেন যে, যদি যুক্তরাষ্ট্রের সুদের হার দ্রুত কমিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে। মুদ্রানীতি নমনীয়করণের ক্রমবর্ধমান প্রত্যাশার মধ্যে তার এই বক্তব্য কারেন্সি মার্কেটে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। বিনিয়োগকারীরা, আগেভাগে মুদ্রানীতি নমনীয়করণের ঝুঁকিগুলো বিবেচনায় নিয়ে, আবারও ডলারকেই তুলনামূলকভাবে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বেছে নিচ্ছেন।
কাশকারির মন্তব্য ফেডারেল রিজার্ভের সামনে থাকা মূল নীতিগত দ্বিধা স্পষ্ট করেছে। একদিকে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মন্থরতা ও কমতে থাকা মূল্যস্ফীতি সুদের হার কমানোর পক্ষে যৌক্তিকতা সৃষ্টি করছে; অন্যদিকে, অতিরিক্ত নমনীয় আর্থিক নীতিমালা নতুন করে মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দিতে পারে এবং ফেডের প্রতি আস্থা দুর্বল করে দিতে পারে। এদিকে, ডলারের দর বৃদ্ধির প্রবণতা অন্যান্য মুদ্রার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে — বিশেষ করে উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর ক্ষেত্রে, যেগুলোর প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। এর ফলে মূলধন প্রবাহে ঘাটতি দেখা দিতে পারে এবং এসব দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
মঙ্গলবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং অর্থনীতি প্রতিপাদ্যে মিনেসোটা স্টার ট্রিবিউন কর্তৃক আয়োজিত একটি প্যানেল আলোচনায় কাশকারি বলেন, "আমরা অর্থনীতিতে মারাত্মক মূল্যস্ফীতির প্রবণতা লক্ষ্য করতে পারি। মূলত, আপনি যদি অর্থনীতিকে এর প্রকৃত উৎপাদন ও মূল্য নির্ধারণ সক্ষমতার চেয়ে দ্রুতগতিতে টানার চেষ্টা করেন, তাহলে শেষ পর্যন্ত আপনি শুধু বাড়তি মূল্যস্ফীতিই পাবেন।"
মিনিয়াপলিস ফেড প্রেসিডেন্ট, যিনি এই বছর ফেডারেল ওপেন মার্কেট কওমিটির ভোটাধিকারপ্রাপ্ত সদস্য না হলেও নীতিনির্ধারণী সংক্রান্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন, তিনি আরও সতর্ক করে বলেন যে বর্তমানে স্ট্যাগফ্লেশনের বা অর্থনৈতিক স্থবিরতার কিছু লক্ষণ দেখা যাচ্ছে — কারণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধীর হচ্ছে এবং মূল্যস্ফীতি স্থায়ী হয়ে আছে। তিনি বলেন, "আমরা যে কিছু প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণ করছি, তা স্ট্যাগফ্লেশনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।"
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কার্যক্রমের অচলাবস্থার কারণে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক প্রতিবেদন প্রকাশিত না হওয়ায় এখন মার্কেট বেশিরভাগ ট্রেডার ফেডারেল রিজার্ভ কর্মকর্তাদের দেওয়া বক্তব্যের ওপর আরও ঘনিষ্ঠভাবে নজর দিচ্ছেন। সামনের দিনগুলোতে ডলারের মূল্যের মুভমেন্ট নতুন অর্থনৈতিক প্রতিবেদন — যা সরকারি অচলাবস্থা নিরসনের পর প্রকাশিত হবে — এবং ফেডের কর্মকর্তাদের বক্তব্যের ওপর নির্ভর করবে। যদি মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখী হতে থাকে এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতির দুর্বলতা স্পষ্ট হয়, তাহলে সুদের হার হ্রাসের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে, যা ডলারের দরপতন ঘটাতে পারে। তবে, যদি মূল্যস্ফীতি উচ্চতর পর্যায়ে থাকে, তাহলে ফেড মুদ্রানীতি নমনীয় করা থেকে বিরত থাকতে পারে, যা ডলারের মূল্যকে বর্তমান লেভেলে থাকার জন্য সমর্থন প্রদান করা অব্যাহত রাখবে।
EUR/USD-এর বর্তমান টেকনিক্যাল চিত্র অনুযায়ী এখন ক্রেতাদের এই পেয়ারের মূল্যকে 1.1650 লেভেলে পুনরুদ্ধারের দিকে দৃষ্টি দেয়া উচিত। কেবল এই লেভেলে পুনরুদ্ধার করতে পারলে 1.1680 লেভেল টেস্ট করার সম্ভাবনা তৈরি হবে। সেখান থেকে 1.1715 পর্যন্ত ঊর্ধ্বমুখী মুভমেন্ট দেখা যেতে পারে, তবে তা সম্ভব হবে শুধুমাত্র বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তা থাকলে। সর্বোচ্চ লক্ষ্যমাত্রা হতে পারে 1.1745 লেভেল। যদি এই পেয়ারের মূল্য কমে যায়, তাহলে আমি মূল্য 1.1610 লেভেলে থাকা অবস্থায় ক্রেতাদের উল্লেখযোগ্য কার্যকলাপের প্রত্যাশা করছি। যদি সেখানেও কেউ সক্রিয় না হয়, তবে 1.1570 এরিয়া রিটেস্ট বা 1.1530 লেভেল থেকে লং পজিশন ওপেন করাই যুক্তিসঙ্গত হবে।
GBP/USD-এর বর্তমান টেকনিক্যাল চিত্র অনুযায়ী পাউন্ডের ক্রেতাদের প্রথমে 1.3405 লেভেলের রেজিস্ট্যান্স ব্রেক করাতে হবে। কেবল তখনই এই পেয়ারের মূল্যের 1.3450 লেভেলের দিকে অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে, যার ওপরে পৌঁছানোটা বেশ কঠিন হবে। সর্বোচ্চ লক্ষ্যমাত্রা হবে 1.3490। অন্যদিকে, দরপতন ঘটলে মূল্য 1.3365 রেঞ্জে থাকা অবস্থায় বিক্রেতারা মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করবে। যদি মূল্য এই লেভেল ব্রেক করে, তাহলে সেটি বুলিশ পজিশনের ওপর বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হবে এবং GBP/USD-এর মূল্য কমে 1.3325 পর্যন্ত নেমে যেতে পারে, যেখানে 1.3280 লেভেল পরবর্তী সাপোর্ট হিসেবে বিবেচিত হবে।