বেশিরভাগ বিশ্লেষকের মতে শুক্রবারের দরপতনের ঘটনাটি বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জগুলোর একটি বাইন্যান্সের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিল—যেখানে সবচেয়ে বেশি লিকুইডেশন হয়েছে।
অনলাইনে এই দরপতনের কারণ নিয়ে অনেক ব্যাখ্যারয়েছে, তবে আমার মতে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যাটি বাইন্যান্স এক্সচেঞ্জেই সৃষ্ট কিছু সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করে।
এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাইন্যান্সের পজিশনের জন্য ব্যবহৃত জামানত বা কোলাটেরাল এক্সচেঞ্জটির নিজস্ব অর্ডার বুকের ডেটা ব্যবহার করে মূল্যায়ন করা হচ্ছিল, বাইরের কোনো প্রাইস ওরাকল নয়। ৬ অক্টোবর বাইন্যান্স যখন ঘোষণা দেয় যে তারা ওরাকল-ভিত্তিক প্রাইসিংয়ে স্থানান্তর করবে, তখন কিছু নির্দিষ্ট ট্রেডারদের কাছে এটি ছিল একটি সমন্বিত হামলার সুযোগ। সে সময়কে কাজে লাগিয়ে, সংগঠিত কিছু পক্ষ বাইন্যান্সের অর্ডার বুকে কৃত্রিমভাবে ম্যানিপুলেশন চালায় বলে জানা যায়। এর ফলে একের পর এক ফোর্সড লিকুইডেশন শুরু হয় এবং ব্যাপক আকারে BTC, ETH এবং অন্যান্য অল্টকয়েন বিক্রি হতে থাকে। অন্যান্য এক্সচেঞ্জগুলোতে বাই-সেল বট এবং ক্রস-মার্কেট অ্যালগরিদমের মাধ্যমে এই দরপতন প্রতিফলিত হয়, যার ফলে গোটা ক্রিপ্টো মার্কেটে বিক্রির প্রবণতা ছড়িয়ে পড়ে।
তবে এই ব্যাখ্যার সঙ্গে বেশ কিছু প্রশ্ন জড়িত, এবং এটি আরও গভীর বিশ্লেষণের দাবি রাখে। সর্বপ্রথম, যদি বলা হয় বাইন্যান্সের অর্ডার বুক ম্যানিপুলেট করা হয়েছে, তাহলে তা অবশ্যই নির্ভরযোগ্য প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত হতে হবে; অনুমানের ভিত্তিতে নয়। সেই সময়ে সংশ্লিষ্ট সন্দেহভাজন অ্যাকাউন্টগুলো সনাক্ত করা উচিত, এবং সন্দেহজনক ট্রেডিং ভলিউম বা মূল্যের অস্বাভাবিকতা গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।
এছাড়াও, ওরাকল-ভিত্তিক প্রাইসিং স্বচ্ছতা এবং প্ল্যাটফর্ম সুরক্ষার দিক থেকে উন্নত হলেও, তা একেবারে ম্যানিপুলেশন-মুক্ত নয়। ওরাকলগুলোকেও এক্সপ্লয়েট করা যেতে পারে, এবং মূল্যের সরবরাহের সময় দেরি হলে তাতে কিছু ট্রেডার সুবিধা পেতে পারে।
সবশেষে, আরও বৃহৎ অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটও বিবেচনায় নিতে হবে—যেমন হঠাৎ করে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক চীনা পণ্যের উপর ১০০% শুল্ক আরোপের ঘোষণা। এই সংবাদ বৈশ্বিক ইক্যুইটি মার্কেটে ব্যাপক দতপতনের সূচনা করে, যা সরাসরি ক্রিপ্টো মার্কেটের উপরও চাপ সৃষ্টি করে।
ট্রেডিংয়ের পরামর্শ
বর্তমানে বিটকয়েনের ক্রেতারা মূল্যকে $116,300 লেভেলে পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। এ লেভেল ব্রেকআউট হলে বিটকয়েনের মূল্যের $118,400 এবং সেখান থেকে $120,600 পর্যন্ত যাওয়ার সম্ভাবনা উন্মুক্ত হবে। সবচেয়ে দূরবর্তী লক্ষ্যমাত্রা হলো $122,400 এরিয়া—মূল্য এই লেভেলের ওপরে উঠলে সেটি নতুন বুলিশ প্রবণতার সংকেত হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে যদি BTC-এর মূল্য আরও কমে যায়, তাহলে মূল্য $114,200 লেভেলের আশপাশে থাকা অবস্থায় ক্রেতারা সক্রিয় হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এই লেভেল ব্রেক করে নিম্নমুখী হলে, BTC-এর মূল্য দ্রুত $112,800-এ নেমে যেতে পারে এবং পরবর্তী উল্লেখযোগ্য সাপোর্ট লেভেল $111,200-এর দিকে যেতে পারে।
ইথেরিয়ামের ক্ষেত্রে, $4,169 লেভেলের ওপরে একটি শক্তিশালী কনসোলিডেশন হলে, পরবর্তীতে মূল্যের $4,244-এর দিকে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা যেতে পারে। সবচেয়ে দূরবর্তী লক্ষ্যমাত্রা হলো $4,318—এই লেভেল অতিক্রম করতে পারলে ক্রেতাদের আগ্রহ নিশ্চিত হবে এবং ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা আরও শক্তিশালী হবে। যদি ইথেরিয়ামের দরপতন হয়, তাহলে মূল্য $4,061 লেভেলে থাকা অবস্থায় ক্রেতাদের সক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মূল্য এই লেভেল নিচে নেমে গেলে ETH-এর মূল্য $3,942 এবং সবচেয়ে দূরবর্তী সাপোর্ট হিসেবে $3,827 এরিয়ায় পৌঁছাতে পারে।
চার্টে যা দেখা যাচ্ছে:
- লাল লাইনগুলো সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল নির্দেশ করে, যেখানে মূল্যের মুভমেন্ট মন্থর হয়ে যেতে পারে অথবা শক্তিশালী ব্রেকআউট ঘটতে পারে;
- সবুজ লাইনগুলো 50-দিনের মুভিং অ্যাভারেজ নির্দেশ করে;
- নীল লাইনগুলো 100-দিনের মুভিং অ্যাভারেজ;
- হালকা সবুজ লাইনগুলো 200-দিনের মুভিং অ্যাভারেজ নির্দেশ করে।
সাধারণত, মূল্য মুভিং অ্যাভারেজগুলোতে পৌঁছালে বা অতিক্রম করলে, মার্কেটে চলমান মুভমেন্ট থেমে যেতে পারে বা নতুন মুভমেন্ট শুরু হতে পারে।