শুক্রবার নিউইয়র্ক সেশনের শেষে মার্কিন স্টক সূচকগুলোতে বিগত এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় দরপতনের সাথে দৈনিক লেনদেন শেষ হয়েছে। S&P 500 সূচক 2.71% হ্রাস পেয়েছে, নাসডাক 100 সূচক 3.56% হ্রাস পেয়েছে, এবং ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ সূচক 1.90% হ্রাস পেয়েছে।
আজকের এশিয়ান ট্রেডিং সেশনে, মার্কিন স্টক সূচকের ফিউচারের মূল্য কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছিল, কারণ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের সাথে বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এতে করে গত শুক্রবার তীব্র বাণিজ্য উত্তেজনার ফলে যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছিল, তা কিছুটা প্রশমিত হয়।
S&P 500-এর ফিউচারের দর 1.3% বৃদ্ধি পেয়েছে এবং নাসডাক 100-এর ফিউচার কন্ট্রাক্টের দর 1.8% উর্ধ্বমুখী হয়েছে, কারণ চীন থেকে আমদানিকৃত পণ্যের উপর 100% শুল্ক আরোপের হুমকির পর ট্রাম্প প্রশাসন কিছুটা নমনীয় অবস্থানে গ্রহণ করেছে। অন্যদিকে, ইউএস ট্রেজারি বন্ডের ফিউচার দরপতনের মুখে পড়ে এবং অপরিশোধিত তেলের মূল্য 1.5% বৃদ্ধি পেয়েছে। রূপার দাম কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং স্বর্ণের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী মুভমেন্টও অব্যাহত রয়েছে।
গত শুক্রবার মার্কেটে এই অপর্যাপ্ত দরপতনের সরাসরি কারণ ছিল ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষণা, যেখানে তারা বেইজিংয়ের রপ্তানি পণ্য নিয়ন্ত্রণের জবাবে চীনের পণ্যের উপর 100% শুল্ক আরোপের প্রস্তুতির কথা জানায়। এই ঘোষণা যেন হঠাৎ বজ্রপাতের মতো এসেছে, যার ফলে ওয়াল স্ট্রিট থেকে শুরু করে টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জ পর্যন্ত সব প্রধান সূচকে আতঙ্কজনকভাবে অ্যাসেট বিক্রির প্রবণতা শুরু হয়। পুনরায় পূর্ণমাত্রার বাণিজ্য যুদ্ধের শঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাসেট দ্রুত বিক্রি করতে বাধ্য হন এবং নিরাপদ বিনিয়োগের দিকে ব্যাপকভাবে মূলধনের স্থানান্তর ঘটে।
এই দরপতনের পরিণতি ছিল তাৎক্ষণিক। আমেরিকান ডলার পতনের মুখে পড়ে কারণ যুক্তরাষ্ট্র থেকে মূলধন বেরিয়ে যেতে শুরু করে, অপরদিকে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার আশংকার প্রেক্ষাপটে তেলের দাম ব্যাপক হারে কমে যায়। অপরদিকে, স্বর্ণের মূল্য তীব্রভাবে ঊর্ধ্বমুখী হয়—যা অনিশ্চয়তার সময়ে নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত।
সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাসেটের এমন তীব্র দরপতন ছিল বিরল ঘটনা, যার ফলে এই বাণিজ্য উত্তেজনাজনিত প্রতিক্রিয়া এতটা তীব্র হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। এপ্রিল মাসে শুল্কের প্রভাবে দরপতনের পর, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং ফেডারেল রিজার্ভের সম্ভাব্য সুদের হার হ্রাসের আশায় মার্কেটে দ্রুত পুনরুদ্ধার পরিলক্ষিত হয়েছিল।
ট্রাম্পের পদক্ষেপের জবাবে, চীন যুক্তরাষ্ট্রকে শুল্কের ভয় দেখানো বন্ধ করার আহ্বান জানায় এবং অসমাপ্ত বাণিজ্য বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার ওপর জোর দেয়। বেইজিং এটি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, যদি ওয়াশিংটন বিরূপ হস্তক্ষেপ চালিয়ে যায়, তবে চীনের পক্ষ থেকেও পাল্টা পদক্ষেপ গ্রহণে কোনো দ্বিধা থাকবে না।
গতকাল, ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে তারা চীনের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছাতে আগ্রহী, যদিও ট্রাম্প পরোক্ষভাবে ইঙ্গিত দেন যে চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিন ফিংয়ের এই আলোচনায় অংশ না নেওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। একইসাথে, তিনি সতর্কবার্তা দেন যে পূর্ণমাত্রার বাণিজ্য যুদ্ধ চীনের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হবে। এই পরিস্থিতি ইঙ্গিত দেয় যে যুক্তরাষ্ট্র একদিকে চীনের উপর চাপ বাড়াতে চায় এবং অন্যদিকে মার্কেটের ট্রেডারদের আশ্বাস দিচ্ছে যে পরিস্থিতির আরও অবনতির সম্ভাবনা অনিবার্য নয়।
S&P 500-এর টেকনিক্যাল চিত্রের ক্ষেত্রে, আজ ক্রেতাদের মূল লক্ষ্য হবে 6,648-এর কাছাকাছি সর্বনিম্ন রেজিস্ট্যান্স লেভেল ব্রেক করা। সূচকটির দর এই লেভেল অতিক্রম করলে আরও ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার সম্ভাবনা রয়েছে এবং সূচকটির পরবর্তী লক্ষ্যমাত্রা হবে 6,660।
ক্রেতাদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হবে 6,672 লেভেলের ওপরে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা—যা তাদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করে তুলবে।
অন্যদিকে ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাসেটের চাহিদা হ্রাস পেলে এবং সূচকটির মূল্য নিম্নমুখী হলে, মূল্য 6,638 লেভেলের আশপাশে থাকা অবস্থায় ক্রেতাদের সক্রিয় হতে হবে। এই লেভেল ব্রেক করলে, দ্রুত সূচকটির মূল্য কমে গিয়ে 6,630 লেভেলে পৌঁছাতে পারে এবং সেখান থেকে আরও নিম্নমুখী 6,616 এর দিকে নেমে যেতে পারে।