ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের নীতিনির্ধারক মেগান গ্রীন যখন ইঙ্গিত দেন যে তিনি অন্তত ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত সুদের হার অপরিবর্তিত রাখার কথা ভাবছেন, তখন ব্রিটিশ পাউন্ড চাপের মুখে পড়ে।
গ্রীনের মতে, বিদ্যমান নীতিমালা মূল্যস্ফীতির ওপর দীর্ঘস্থায়ী চাপ মোকাবেলার জন্য যথেষ্ট কঠোর নয়। গত সোমবার লন্ডনে 'সোসাইটি অব প্রফেশনাল ইকোনোমিস্ট' সম্মেলনে বক্তব্য প্রদানকালে গ্রীন বলেন, এখন সুদের না কমানোর জন্য বেশ কয়েকটি বিদ্যমান।
তার দৃষ্টিতে, আগেভাগেই আর্থিক নীতিমালা নমনীয় করা হলে সেটি মুদ্রাস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে আনার প্রচেষ্টাকে দুর্বল করে দিতে পারে, এবং পরবর্তীতে আরও বেশি আক্রমণাত্মক ও কঠোর নীতিমালা আরোপের প্রয়োজন সৃষ্টি করতে পারে। এমন পরিস্থিতি কেবল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশ্বাসযোগ্যতার উপর আঘাত হানবে না, বরং ফিন্যান্সিয়াল মার্কেটেও অস্থিরতা তৈরি করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
গ্রীন জোর দিয়ে বলেন, মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি মোকাবেলায় দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ সুদের হারের দরকার হবে, যাতে চাহিদা কিছুটা দমন করে মূল্যস্ফীতির হার কমানো যায়। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং নতুন করে সরবরাহ সংক্রান্ত সমস্যার ঝুঁকি ব্যাংক অব ইংল্যান্ডকে আরও সতর্কভাবে আর্থিক নীতিমালা বিবেচনার প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি করছে।
গ্রীনের মতে, সুদের হার কমানো বন্ধ রাখা হলে সেটি ব্যাংক অব ইংল্যান্ডকে আগের কঠোর আর্থিক নীতিমালার প্রভাব মূল্যায়নের জন্য আরও সময় দেবে—বিশেষ করে অর্থনীতি ও মূল্যস্ফীতির উপর তার প্রভাব মূল্যায়নের জন্য এটি করা প্রয়োজন। এই প্রতিবেদন-নির্ভর এবং সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গি নীতিগত ভুল এড়াতে সহায়তা করবে এবং মূল্যস্ফীতির হার লক্ষ্যমাত্রায় স্থায়ী প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
বর্তমানে মার্কেটের ট্রেডাররা প্রত্যাশা করছেন যে, ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের মনেটারি পলিসি কমিটি (MPC) আগামী নভেম্বর সভায় সুদের হার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নেবে—যা হবে আগস্ট ২০২৪-এ শুরু হওয়া তিন মাসব্যাপী সুদের হার হ্রাসে প্রথম বিরতি। গ্রীনের মন্তব্যে বোঝা যায়, ফেব্রুয়ারি বৈঠকে যেখানে ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদের হার হ্রাসের সম্ভাবনা দুই-তৃতীয়াংশ মূল্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে, সেই বৈঠকও তিনি এড়িয়ে যেতে আগ্রহী হতে পারেন। ট্রেডাররা আরও প্রত্যাশা করছে যে ডিসেম্বরেও সুদের হার অপরিবর্তিত থাকবে।
MPC-তে দায়িত্বপ্রাপ্ত চারজন বাইরের সদস্যদের একজন হিসেবে, গ্রীন সেপ্টেম্বর মাসে সুদের হার ৪%-এ অপরিবর্তিত রাখতে সংখ্যাগরিষ্ঠের সঙ্গে একমত ছিলেন এবং আগস্ট মাসে যখন গভর্নর অ্যান্ড্রু বেইলি ঋণ সুদের হার হ্রাসের পক্ষে নিয়ন্ত্রণকারী ভোট দেন, সেসময়ে নয় সদস্যের কমিটিতে গ্রীন ছিলেন চারজন ভিন্নমতালম্বীদের একজন।
"আমি মনে করি আমাদের আর্থিক নীতিমালা এখনও কিছুটা কঠোর,"—গ্রীন বলেন। "তবে আগের চেয়ে কম কঠোর, এবং এটা উদ্বেগের কারণ—বিশেষ করে যখন আমি দেখতে পাচ্ছি যে গত ১২ মাস ধরে মুদ্রাস্ফীতি আবার বাড়ছে।"
ব্যাংক অব ইংল্যান্ড আশা করছে মুদ্রাস্ফীতি অচিরেই ৪%-এর আশেপাশে পৌঁছাবে—যা তাদের ২%-এর লক্ষ্যমাত্রার প্রায় দ্বিগুণ।
"আমার উদ্বেগের কারণ হলো, আমরা সম্প্রতি এমন একটি সময় পার করেছি, যখন মুদ্রাস্ফীতি ১১%-এ পৌঁছেছিল, এবং আমার বিশ্বাস এটি মানুষের আচরণে প্রভাব ফেলেছে,"—তিনি আরও বলেন। "মুদ্রাস্ফীতি হ্রাসের প্রক্রিয়া এখনো চলমান রয়েছে, কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে সেটির গতি কমছে।"
গ্রীনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে টেকসই সাফল্য আনতে হলে—বিশেষ করে যখন মূল্যস্ফীতির হার বেশ 'অস্থিতিশীল' প্রমাণিত হচ্ছে—তখন ব্যাংক অব ইংল্যান্ডকে ট্রেডারদের প্রত্যাশার আরও কঠোর রাখতে হবে।
"এর একটি উপায় হতে পারে প্রথমে সুদের হার বাড়ানো, তারপর কমানো,"—তিনি বলেন। "তবে আমি মনে করি, এইভাবে ঘন ঘন নীতিমালা পরিবর্তন করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি আস্থার ব্যাঘাত ঘটে।"
যেমনটি উপরে উল্লেখ করা হয়েছে, গ্রীনের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ব্রিটিশ পাউন্ড দরপতনের মুখে পড়ে। সাধারণত মার্কেটের স্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সুদের হার অপরিবর্তিত রাখা পাউন্ডকে সমর্থন করে, তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে—যেখানে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি বাণিজ্য সংকট এবং কম প্রবৃদ্ধির ঝুঁকিতে রয়েছে—এই অবস্থান কেবল স্টার্লিং-এর দুর্বলতাই বাড়িয়ে তোলে।
টেকনিক্যাল চিত্র: GBP/USD
GBP/USD পেয়ারের ক্ষেত্রে, পাউন্ডের ক্রেতাদের জন্য প্রথম কাজ হবে 1.3295 লেভেল ব্রেক করানো। এতে সফল হলে তারা এই পেয়ারের মূল্যকে 1.3325-এর লক্ষ্যমাত্রায় নিয়ে যেতে পারে পারবে, যদিও এই লেভেল অতিক্রম করাও চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। আরও ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার ক্ষেত্রে এই পেয়ারের মূল্য 1.3360-এর লক্ষ্যমাত্রার দিকে যেতে পারে।
যদি এই পেয়ারের মূল্য নিম্নমুখী হয়, তাহলে মূল্য 1.3260 লেভেলের নিচে থাকা অবস্থায় বিক্রেতারা নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইবে। এই লেভেল সফলভাবে ব্রেকআউট করে মূল্য নিম্নমুখী হলে সেটি বুলিশ পজিশনে গুরুতর আঘাত হানতে পারে এবং GBP/USD-এর মূল্য 1.3230 পর্যন্ত নেমে যেতে পারে, এমনকি সম্ভাব্যভাবে মূল্য আরও কমে 1.3200 পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
টেকনিক্যাল চিত্র: EUR/USD
বর্তমানে EUR/USD পেয়ারের ক্রেতাদের প্রথম লক্ষ্য হবে মূল্যকে 1.1600 লেভেলে পুনরুদ্ধার করা। এই লেভেল নিশ্চিতভাবে ব্রেকআউট করে মূল্য ঊর্ধ্বমুখী হলে পেয়ারটির মূল্যের 1.1630 লেভেলে পৌঁছানোর সম্ভাবনা উন্মুক্ত হবে। সেখান থেকে এই পেয়ারের মূল্য 1.1660 পর্যন্ত বাড়তে পারে, যদিও মার্কেটের বড় ট্রেডারদের শক্তিশালী সমর্থন ছাড়া তা অর্জন করা কঠিন হতে পারে। আরও ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার ক্ষেত্রে এই পেয়ারের মূল্য 1.1690-এর লক্ষ্যমাত্রার দিকে যেতে পারে।
যদি দরপতন শুরু হয়, তাহলে মূল্য 1.1570 এরিয়ায় থাকা অবস্থায় উল্লেখযোগ্য ক্রয়ের আগ্রহ দেখা যেতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। যদি সেখানে বড় কোনো ক্রেতা সক্রিয় না হয়, তাহলে এই পেয়ারের মূল্য 1.1545 লেভেলে পর্যন্ত নেমে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করা অধিক যুক্তিযুক্ত হবে অথবা 1.1510 লেভেলের আশপাশ থেকে লং পজিশন ওপেন করার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে।