গতকাল মার্কিন ডলারের বিপরীতে ইউরোপীয় মুদ্রার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বজায় ছিল। বর্তমানে ট্রেডাররা মূলত ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ইসিবি) এবং ফেডারেল রিজার্ভের আর্থিক নীতিমালার মধ্যকার পার্থক্যের দিকে দৃষ্টি দিচ্ছে: ইসিবি আপাতত তাদের আর্থিক নীতিমালা পরিবর্তনের কোনো পরিকল্পনা করছে না, অন্যদিকে মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বছরের শেষ নাগাদ সক্রিয়ভাবে সুদের হার কমানোর পরিকল্পনা করছে।
গতকাল, ইসিবি'র গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য জোয়াখিম নাগেল উল্লেখ করেন যে বর্তমানে সুদের হারে পরিবর্তন আনার কোনো যৌক্তিকতা নেই এবং তিনি সতর্ক করেন যে মুদ্রাস্ফীতির নির্দিষ্ট কিছু উপাদানের দিকে এখনও সজাগ দৃষ্টি রাখা জরুরি।
যদিও এটি এখনই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় নয় যে আগামী কয়েক মাসে ঋণ গ্রহণের খরচ কেমন হবে, তবে জার্মানির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান বলেন, ভোক্তা মূল্যস্ফীতি প্রায় ২% লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। নাগেল বলেন, "আমি মনে করছি আমরা আমাদের লক্ষ্যমাত্রার খুব কাছাকাছি চলে এসেছি।" তিনি আরও যোগ করেন, "আমি কোনো কিছু পরিবর্তনের প্রয়োজন দেখছি না, যদি না নতুন কিছু সামনে আসে। তবে সত্যি বলতে, আমি এমন কিছুর সম্ভাবনা দেখছি না।"
ইসিবির কর্মকর্তারা বর্তমান সুদের হার নিয়ে মোটামুটি সন্তুষ্ট এবং তারা বারবার বলছেন যে আর্থিক নীতিমালা "সঠিক অবস্থানে" আছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই মনে করেন, আগামী দুই বছরে কিছুটা ঘাটতির আশঙ্কা সত্ত্বেও মূল্যস্ফীতি ২%-এর আশেপাশেই থাকবে এবং ইউরোজোন মার্কিন শুল্কের চাপকে সফলভাবেই সামাল দিচ্ছে।
তবে, কিছু নীতিনির্ধারক আগামীতে আরেকবার সুদের হার হ্রাসের সম্ভাবনাও পুরোপুরিভাবে উড়িয়ে দিচ্ছেন না—যা ইতোমধ্যে আটবার কমানো হয়েছে—কারণ তারা আশঙ্কা করছেন মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার নিচে নেমে যেতে পারে। প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্ডে সম্প্রতি বলেছেন, তিনি কখনোই আর্থিক নীতিমালা নমনীয়করণের সমাপ্তির ঘোষণা দেবেন না, কারণ বর্তমান অনুকূল পরিস্থিতিও পরিবর্তিত হতে পারে। উল্লেখ্য, আজ আবারো লাগার্ডের বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে।
ফ্রাঁসোয়া ভিলরোয়া দ্য গালো ইসিবি'র গভর্নিং কাউন্সিলের একজন সদস্য, যিনি ভবিষ্যতের সুদের হার হ্রাসের বিকল্প উন্মুক্ত রাখার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এক আলাদা সাক্ষাৎকারে ফরাসি এই নীতিনির্ধারক বলেন, "যদিও ইসিবি এখন ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছে, তবে এর মানে এই নয় যে আমাদের অবস্থান অপরিবর্তিত থাকবে।" তিনি আরও যোগ করেন, "মূল্যস্ফীতির এখন নিম্নমুখী হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এজন্য, যদি আগামীতে কোনো পরিবর্তন আসে, তবে আমার মতে, সুদের হার কমানোর সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি।"
বর্তমানে দুই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক নীতিমালার মধ্যে পার্থক্য বেশ স্পষ্ট: ইউরোর দর আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে, আর মার্কিন ডলারের দরপতন হচ্ছে। সম্ভবত এই প্রবণতা অব্যাহত থাকবে।
বর্তমানে EUR/USD পেয়ারের টেকনিক্যাল চিত্র অনুযায়ী, ক্রেতাদের এখন 1.1680 লেভেল ব্রেক করিয়ে এই পেয়ারের মূল্যকে উপরের দিকে নিয়ে যেতে হবে। এটি করা গেলে মূল্যের 1.1715 লেভেলে পৌঁছানোর সুযোগ তৈরি হবে। সেখান থেকে মূল্য 1.1745 পর্যন্ত উঠতে পারে, যদিও বড় ট্রেডারদের সহায়তা ছাড়া এই লেভেল অতিক্রম করা মূল্যের পক্ষে বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে। সবচেয়ে দূরবর্তী লক্ষ্যমাত্রা হলো 1.1765 লেভেল। যদি এই পেয়ারের দরপতন হয়, তাহলে মূল্য 1.1644 লেভেলের কাছাকাছি থাকা অবস্থায় বড় ক্রেতাদের সক্রিয় হওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। যদি সেখানেও ক্রেতারা সক্রিয় না হন, তাহলে এই পেয়ারের মূল্যের 1.1614 লেভেলে পৌঁছানোর জন্য অপেক্ষা করা অথবা সরাসরি 1.1580 লেভেল থেকে লং পজিশন ওপেন করাই বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপ হবে।
GBP/USD পেয়ারের টেকনিক্যাল চিত্র অনুযায়ী, পাউন্ডের ক্রেতাদের জন্য প্রথমে এই পেয়ারের মূল্যের 1.3450-এর রেজিস্ট্যান্স লেভেলটি ব্রেক করাতে হবে। কেবলমাত্র এটি সফলভাবে ব্রেক করা গেলে তারা মূল্যকে 1.3480 লেভেলের নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে পারবে, যার ওপরে মূল্যের আরো অগ্রসর হওয়া কঠিন হবে। সবচেয়ে দূরবর্তী লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে 1.3525 লেভেল। যদি এই পেয়ারের দরপতন ঘটে, তবে মূল্য 1.3400-এর আশেপাশে থাকা অবস্থায় বিক্রেতারা আবার মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করবে। যদি তারা এতে সফল হয়, তবে মূল্য এই রেঞ্জ ব্রেক করলে সেটি বাই পজিশনের জন্য বড় ধরনের আঘাত হবে এবং GBP/USD পেয়ারের মূল্য 1.3370 পর্যন্ত নেমে যেতে পারে এবং এমনকি 1.3333 পর্যন্ত দরপতন সম্প্রসারিত হতে পারে।