গতকাল মার্কিন স্টক সূচকগুলোতে নিম্নমুখী প্রবণতার সাথে লেনদেন শেষ হয়েছে। S&P 500 সূচক 0.63% হ্রাস পেয়েছে, নাসডাক 100 সূচক 0.45% হ্রাস পেয়েছে, এবং শিল্পভিত্তিক ডাও জোন্স সূচক 0.55% দরপতনের শিকার হয়েছে।
অনেক বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে মার্কিন সরকারি বন্ডের দিকে ঝুঁকে পড়ায় সূচকগুলোর দরপতন অব্যাহত রেখেছে — বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক ব্যাংকগুলোর শেয়ারের দরপতনের প্রেক্ষাপটে, যেগুলোতে ঋণ প্রদানের মানদণ্ড নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে, টানা নবম সপ্তাহের মতো স্বর্ণের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বজায় রয়েছে।
মার্কিন স্টক সূচকের ফিউচারগুলোর দর 0.7% কমে গেছে, যা বৃহস্পতিবার সেশনে দরপতনের পর আরও দুর্বলতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। সাবপ্রাইম অটো লেন্ডার ট্রাইকলার হোল্ডিংস-এর ঘটনাপ্রবাহের প্রভাবে আঞ্চলিক ব্যাংকগুলোর স্টকগুলো চাপের সম্মুখীন হয়েছে, যার ধাক্কা ওয়াল স্ট্রিট ছাড়িয়ে গিয়ে অন্যান্য মার্কেটেও অনুভূত হচ্ছে। ইউরোপীয় সূচকগুলোতেও নিম্নমুখী প্রবণতা ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে।
নিরাপদ বিনিয়োগের লক্ষ্যে বিনিয়োগকারীরা কমোডিটি মার্কেটের দিকে ঝুঁকে পড়ায় নেয়ায়, স্বর্ণ ও রুপার দাম নতুন সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়েছে। এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার পেছনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেডিট মার্কেট নিয়ে উদ্বেগ এবং মার্কিন-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা বৃদ্ধি। মার্কিন ট্রেজারি বন্ড মার্কেটে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে, যার ফলে দুই বছরের বন্ডের ইয়িল্ড ২০২২ সালের পর সর্বনিম্ন লেভেলে নেমে গেছে এবং দশ বছরের বন্ডের ইয়িল্ড ৪%-এর নিচে নেমেছে।
মার্কিন ডলার সূচকেও নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে , অন্যদিকে ইয়েনের দর 150-এর ওপর পৌঁছেছে এবং সুইস ফ্রাঁ-এর মূল্যও ঊর্ধ্বমুখী।
মার্কেটের এই পরিস্থিতি মার্কিন ক্রেডিট মার্কেট ঘিরে বেড়ে চলা আশঙ্কার ইঙ্গিত দেয় এবং ওয়াল স্ট্রিটে প্রচলিত উচ্চমাত্রার অসতর্কতা প্রতিফলিত করে। এতে বিনিয়োগকারীদের শঙ্কার তালিকায় যুক্ত হচ্ছে — সম্ভাব্য মার্কিন সরকারি অচলাবস্থা, AI খাতে বাবলের আশঙ্কা, ও পুনরায় বাণিজ্য উত্তেজনার বৃদ্ধি।
তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে উদ্ভূত এই অস্থিরতা মূলত মার্কেটের সেন্টিমেন্ট এবং লিক্যুইডিটির সঙ্গে সম্পর্কিত — এটি কোনো সম্পূর্ণ সিস্টেম-ভিত্তিক ক্রেডিট বিপর্যয়ের ইঙ্গিত নয়। মৌলিক প্রেক্ষপট এখনও অনেকটা স্থিতিশীল রয়েছে, যদিও আশংকা এবং অনিশ্চয়তা এখনও মার্কেটকে প্রভাবিত করছে।
হংকং এবং চীনের স্টক সূচকগুলো ১.৫%-এর বেশি হ্রাস পেয়েছে, যার পেছনের কারণ হিসেবে মার্কিন-চীন উত্তেজনাকে বিবেচনা করা হচ্ছে যা বিনিয়োগকারীদের মনোভাবকে প্রভাবিত করেছে। হংকংয়ের প্রযুক্তি কোম্পানির স্টকগুলো 3.1% দরপতনের শিকার হয়েছে, এবং তাইওয়ানে তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোং-এর শেয়ারের দর 2.4% হ্রাস পেয়েছে।
মরগ্যান স্ট্যানলির মতে, মার্কিন-চীন উত্তেজনা আবারও ইক্যুইটি মার্কেটের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, এবং এশিয়া ও ইমার্জিং মার্কেটের দরপতন বিশ্লেষকদের পূর্বাভাস অপেক্ষা বেশি হতে পারে — কারণ এই মার্কেটগুলো বর্তমানে ওভারভ্যালুড অতিমূল্যায়িত অবস্থায় রয়েছে।
আবারও তেলের দরপতন হয়েছে কারণ বিনিয়োগকারীরা এখন অতিরিক্ত সরবরাহ এবং মার্কিন-চীন উত্তেজনার সম্ভাব্য প্রভাবের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে দ্বিতীয় বৈঠক নিয়ে মন্তব্যের পর ব্রেন্ট ক্রুডের দর প্রতি ব্যারেল $61-এর কাছাকাছি পৌঁছে গেছে — যা OPEC+-এর উৎপাদন বৃদ্ধি বৈশ্বিক পর্যায়ে বাড়তি সরবরাহের কারণে পরিস্থিতিকে আরও খারাপ হতে পারে।
S&P 500-এর টেকনিক্যাল প্রেক্ষাপট অনুযায়ী, আজ ক্রেতাদের প্রধান লক্ষ্য হবে সূচকটির $6,590-এর রেজিস্ট্যান্স লেভেল ব্রেক করা। এই লেভেল ব্রেক করা হলে ঊর্ধ্বমুখী মুভমেন্ট দেখা যাবে এবং পরবর্তী লক্ষ্যমাত্রা হবে $6,603।
ক্রেতাদের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হবে সূচকটি $6,616 লেভেলের ওপরে থাকা অবস্থায় মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা, যা ক্রেতাদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে। অন্যদিকে, ঝুঁকি গ্রহণের প্রবণতা হ্রাস পাওয়ার পর যদি সূচকটির মূল্য নিচের দিকে নেমে যায়, তাহলে মূল্য $6,577 লেভেলের আশেপাশে থাকা অবস্থায় ক্রেতাদের অবশ্যই সক্রিয় হতে হবে। এই লেভেল ব্রেক করে গেলে ইন্সট্রুমেন্টটির মূল্য দ্রুত $6,563-এ ফিরে যেতে পারে এবং সেখানে থেকে আরও নিচে $6,552 পর্যন্ত নেমে যেতে পারে।