গতকাল ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (ইসিবি) প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্ডের আরেকটি বক্তব্যের পর ইউরোর দর বেড়ে যায়। তিনি বলেন, বর্তমান সুদের হার বেশ "ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানে" রয়েছে — যার সঙ্গে ইসিবির প্রায় সব কর্মকর্তাই সম্মত।
এই বক্তব্য ইউরোপীয় মুদ্রার মূল্যের ধারাবাহিক স্থিতিশীলতা নিয়ে আশাবাদ সৃষ্টি করেছে, যদিও এখনো ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও মুদ্রাস্ফীতির চাপ সম্পর্কিত ঝুঁকি বহাল রয়েছে।
বিনিয়োগকারীরা এই মন্তব্যকে এমন এক ইঙ্গিত হিসেবে গ্রহণ করেছে যে ইসিবি নিকট ভবিষ্যতে তাদের মুদ্রানীতিতে কোনো পরিবর্তন আনবে না। বিনিয়োগকারীরা এটিকে একপ্রকার নিশ্চিয়তা হিসেবে দেখছে যে এখন ইসিবি সুদের হার বর্তমান স্তরে ধরে রাখার পক্ষেই রয়েছে — এটা ইউরোর জন্য একটি ইতিবাচক সংকেত, কারণ এটি ইউরো-ভিত্তিক অ্যাসেটের রিটার্ন বৃদ্ধি করে।
তবে এটিও লক্ষ্য করার বিষয় যে তিনি এমন এক সময় এই মন্তব্য করেছেন যখন ইউরোজোন থেকে প্রকাশিত অর্থনৈতিক প্রতিবেদনের ফলাফল অনুযায়ী এই অঞ্চলের কিছু দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি মন্থর হয়ে যাওয়ার লক্ষণ দেখা গেছে।
তবুও, বর্তমান সুদের হারকে উপযুক্ত ও ভারসাম্যপূর্ণ হিসেবে লাগার্ডের আত্মবিশ্বাস মার্কেটের নেতিবাচক সেন্টিমেন্ট হ্রাস করেছে এবং সাময়িকভাবে ইউরোর মূল্য বৃদ্ধি ঘটিয়েছে।
এখন সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচক—বিশেষ করে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার পর্যবেক্ষণ করকা উচিত—যার উপরে ভিত্তি করে ইসিবির বর্তমান অবস্থান দীর্ঘমেয়াদে কতটা যৌক্তিক তা মূল্যায়ন করা যাবে।
যদি প্রবৃদ্ধির মাত্রা দুর্বল থেকেই যায়, তবে ইসিবি ভবিষ্যত পরিকল্পনাগুলো পুনর্বিবেচনা করতে পারে, যা ইউরোর মূল্যকে প্রভাবিত করতে পারে।
আইএমএফের বার্ষিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখা নীতিনির্ধারকরাও লাগার্ডের মন্তব্যের প্রতিধ্বনি করেছেন। তাদের মতে, ইসিবি এই মাসের বৈঠকে ২% সুদের হার—যা জুন থেকে বহাল রয়েছে—কমানোর সম্ভাবনা নেই।
তবে কিছু বক্তা সতর্ক করেছেন যে মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি এখনও বিদ্যমান রয়েছে, এবং তাদের কাছে সুদের হার হ্রাসই পরবর্তী সম্ভাব্য ধাপ হিসেবে বেশি যৌক্তিক মনে হচ্ছে। অপরদিকে, অন্যরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে মূল্যস্ফীতি পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি হতে পারে, যার ফলে ইসিবি ভবিষ্যতে সুদের হার হ্রাসের সিদ্ধান্তও নিতে পারে।
যেকোনো ক্ষেত্রেই, ইসিবির সুদের হার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত এবং মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমানোর পথে অগ্রসর হওয়ার অবস্থানগত পার্থক্যই এখন ইউরোর দর বৃদ্ধি এবং মার্কিন ডলারের দরপতনের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে কাজ করছে।
EUR/USD পেয়ারের বর্তমান টেকনিক্যাল দৃশ্যপট অনুযায়ী, ক্রেতাদের এখন এই পেয়ারের মূল্যকে 1.1725 লেভেলে পুনরুদ্ধার করতে হবে; এর পরেই তারা এই পেয়ারের মূল্যের 1.1750 লেভেল টেস্ট করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে পারবে। সেখান থেকে এই পেয়ারের মূল্য 1.1780 পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যদিও বড় ট্রেডারদের সমর্থন ছাড়া এটি করা বেশ কঠিন হতে পারে। সবচেয়ে দূরবর্তী লক্ষ্যমাত্রা হলো 1.1820 লেভেল। যদি ট্রেডিং ইন্সট্রুমেন্টটির মূল্য কমে যায়, তাহলে মূল্য 1.1680 লেভেলের আশেপাশে থাকা অবস্থায় ক্রেতারা সক্রিয় হতে। যদি সেখানে ক্রেতারা সক্রিয় না হয়, তাহলে এই পেয়ারের মূল্যের 1.1645 লেভেলে নেমে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করা অথবা 1.1610 থেকে লং পজিশন নেওয়ার বিবেচনা করা যেতে পারে।
GBP/USD পেয়ারের বর্তমান টেকনিক্যাল চিত্র অনুযায়ী, পাউন্ড ক্রেতাদের বর্তমানে 1.3465 নিকটতম রেজিস্ট্যান্স লেভেলটি ব্রেক করাতে হবে। কেবল এই লেভেল সফলভাবে ব্রেক করতে পারলে মূল্য 1.3490 লেভেলের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারে। এই পেয়ারের মূল্যের এই লেভেলের ওপরে যাওয়া কঠিন। সবচেয়ে দূরবর্তী লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে 1.3525 লেভেল। যদি এই পেয়ারের মূল্য কমে, তাহলে মূল্য 1.3410 লেভেলে থাকা অবস্থায় বিক্রেতারা পুনরায় মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করবে। যদি তারা সফল হয়, তাহলে এই রেঞ্জ ব্রেক করলে সেটি ক্রেতাদের অবস্থানে বড় ধরনের আঘাত হানবে এবং GBP/USD পেয়ারের মূল্য আরও নিচে 1.3370 পর্যন্ত নেমে যেতে পারে, এরপর 1.3333 পর্যন্ত দরপতন সম্প্রসারিত হতে পারে।