যখন বিনিয়োগ কিছুটা আশাবাদী মনোভাব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে নতুন বাণিজ্য বিরোধ পরিস্থিতিকে মূল্যায়ন করতে শুরু করেছিল, তখনই ট্রাম্প প্রশাসন আবারও বেইজিংকে সতর্ক করে দিয়েছে—যদি চীন যুক্তরাষ্ট্রকে গুরুত্বপূর্ণ শিল্প খাতে সহায়তা করা বিদেশি কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে, তাহলে তার পরিণতি বেশ কঠোর হতে পারে। মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন যে, গত সপ্তাহে বেইজিং দক্ষিণ কোরিয়ার একটি শিপিং জায়ান্টের আমেরিকান শাখার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, কারণ প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রের সামুদ্রিক খাতে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে।
এই ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিতভাবেই উভয় পক্ষের মধ্যে পারস্পরিক আস্থাকে ক্ষুণ্ন করছে এবং একটি অনিশ্চয়তাপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে—যা বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত নেতিবাচক। বিনিয়োগকারীরা এমন সংকেতের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং উভয় পক্ষ থেকেই এই ধরনের অবস্থানের প্রতিক্রিয়ায় তারা তীব্রভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই দ্বন্দ্ব কতটা গভীরে যাবে এবং উভয় পক্ষ কী ধরনের নির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এটি স্পষ্ট যে যুক্তরাষ্ট্র তাদের কৌশলগত স্বার্থ রক্ষা করতে প্রস্তুত, অন্যদিকে চীনও কোনো চাপের মুখে পিছু হটতে রাজি নয়।
মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার সোমবার বলেন, "বিশ্বজুড়ে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে চীনের সাম্প্রতিক প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপগুলোর একটি বিস্তৃত কাঠামো রয়েছে, যার লক্ষ্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিমালায় প্রভাব ফেলা এবং বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা—বিশেষ করে বিদেশি কোম্পানিগুলোকে মার্কিন জাহাজ নির্মাণ শিল্পসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ থেকে নিরুৎসাহিত করা।"
গ্রিয়ারের এই সতর্কতা দীর্ঘদিন ধরে চলমান মার্কিন-চীন সামুদ্রিক বিরোধের মধ্যে আরও একটি স্তর যুক্ত করলো—যেখানে চীন বর্তমানে বৈশ্বিক জাহাজ নির্মাণ খাতের অর্ধেকেরও বেশি নিয়ন্ত্রণ করে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ চীন সাগরের উপর কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর চেষ্টা করছে। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এই দ্বন্দ্বের বিরাট প্রভাব রয়েছে, কারণ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ৮০%-এর বেশি জাহাজের মাধ্যমে পরিচালিত অয়।
যদিও যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী নৌবাহিনীর রয়েছে, তবে তাদের নিজস্ব জাহাজ নির্মাণ সক্ষমতা তুলনামূলকভাবে সীমিত। এই কারণে ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জাহাজ প্রস্তুতকারক দেশ দক্ষিণ কোরিয়া থেকে বিনিয়োগ আকর্ষণের মাধ্যমে মার্কিন জাহাজ নির্মাণ শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছে।
গ্রিয়ার আরও জানান, গত সপ্তাহে চীনের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রকে লক্ষ্য করে দেয়া হয়েছে—যেখানে চীনা নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে দক্ষিণ কোরিয়ার হানওয়া ওশেন কোং-এর আমেরিকান সাবসিডিয়ারির সঙ্গে ব্যবসা করার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে, পাশাপাশি এই খাতের বিরুদ্ধে আরও প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে চীন।
গ্রিয়ার জোর দিয়ে বলেন, "ভয় দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে জাহাজ নির্মাণ শিল্প পুনর্গঠন বা চীনের কৌশলগত খাত লক্ষ্য করে গৃহীত পদক্ষেপের সাড়া দেওয়া থেকে বিরত রাখা যাবে না।"
উল্লেখযোগ্য যে, উভয় পক্ষই একে অপরের বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর উপর বিশেষ পোর্ট চার্জ আরোপ করেছে, যা গত সপ্তাহ থেকেই কার্যকর হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আরও ঘোষণা দিয়েছে যে, তারা চীনা পোর্ট ইক্যুইপমেন্ট আমদানির ওপর ১০০% শুল্ক আরোপ এবং অন্যান্য কার্গো হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতির ওপর ১৫০% শুল্ক আরোপ করবে। এই পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ বন্দর সুবিধার ওপর চীনা কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণ কমিয়ে আনতে চান—বিশেষ করে পানামা খালের পার্শ্ববর্তী বন্দরগুলো।
এর আগে সোমবার, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দেন যে, তিনি আগামী সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠেয় এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (APEC) সম্মেলনে চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে স্বায়ত্বশাসিত দ্বীপ তাইওয়ান সংক্রান্ত ভূখণ্ডগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে আলোচনা করবেন বলে আশা করছেন। তবে, তিনি এ প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান যে চীন এই আলোচনায় তাইওয়ান ইস্যুকে বাণিজ্য ছাড় প্রদানসংক্রান্ত কোন দাবির সঙ্গে যুক্ত করবে কি না।
এতসব গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ থাকা সত্ত্বেও ফরেক্স মার্কেট থেকে প্রায় কোনোই প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
বর্তমানে EUR/USD পেয়ারের টেকনিক্যাল চিত্র অনুসারে, ক্রেতাদের প্রথম লক্ষ্য হবে এই পেয়ারের মূল্যকে 1.1645 লেভেলে পুনরুদ্ধার করা। শুধুমাত্র এটি করা গেলে এই পেয়ারের মূল্যের 1.1675 লেভেল টেস্ট করার সুযোগ তৈরি হবে। সেখান থেকে এই পেয়ারের মূল্য 1.1700-এর দিকে অগ্রসর হতে পারে, যদিও এই রকম একটি মুভমেন্ট বড় ট্রেডারদের ব্যাপক সহায়তা ছাড়া অত্যন্ত কঠিন হবে। সর্বোচ্চ লক্ষ্যমাত্রা হলো 1.1725 লেভেল। যদি এই ইনস্ট্রুমেন্টের মূল্য 1.1615-এর দিকে নেমে যায়, তবে সেখানে আমি বড় ট্রেডারদের কাছ থেকে সক্রিয় বাই ট্রেডের আশা করছি। তবে, যদি সেখানে ক্রেতাদের বেশি সক্রিয় হতে না দেখা যায়, তাহলে 1.1580 লেভেলের রিটেস্ট বা 1.1545 লেভেলের কাছাকাছি লং পজিশন ওপেন করার বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত হবে।
বর্তমানে GBP/USD পেয়ারের টেকনিক্যাল চিত্র অনুযায়ী, পাউন্ডের ক্রেতাদের প্রথম লক্ষ্য হবে এই পেয়ারের মূল্যকে $1.3405-এর রেজিস্ট্যান্স লেভেলে পুনরুদ্ধার করা। এটি এই পেয়ারের মূল্যকে $1.3440-এর দিকে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবে, যার উপরে যাওয়ার অনেক কঠিন হবে। সর্বোচ্চ লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে $1.3485 এর আশেপাশের লেভেল। অন্যদিকে, যদি এই পেয়ারের দরপতন ঘটে, তাহলে বিক্রয়ের প্রবণটা বাড়লে বিক্রেতারা এই পেয়ারের মূল্যকে সম্ভবত $1.3370 লেভেলে পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করবে। যদি তারা এতে সফল হয়, তাহলে এই রেঞ্জ ব্রেকআউট করে মূল্য নিম্নমুখী হলে সেটি বুলিশ পজিশনের জন্য বড় একটি আঘাত হবে এবং GBP/USD পেয়ারের মূল্যকে $1.3335 পর্যন্ত নামিয়ে আনবে, যার পরে $1.3295 পর্যন্ত দরপতন সম্প্রসারণের সম্ভাবনাও থাকবে।