২০২৫ সালে ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান পদপ্রাপ্তির অন্যতম সম্ভাব্য প্রার্থী গভর্নর ক্রিস্টোফার ওয়ালার সম্প্রতি তার অবস্থানে হঠাৎ বড় রকমের পরিবর্তন এনেছেন — যা আপাতদৃষ্টিতে কারেন্সি মার্কেটে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
ওয়ালার ফেডের পরবর্তী চেয়ারম্যান হিসেবে মার্কিন প্রশাসনের সংক্ষিপ্ত তালিকায় রয়েছেন। বহু বিশ্লেষকের মতে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিরানের মতো চাপের মধ্যে রয়েছেন, যিনি আগ্রাসীভাবে সুদের হার কমাতে জোর দিয়ে আসছেন। ফলে ওয়ালার কার্যত হোয়াইট হাউস প্রশাসনের সমর্থন পাওয়ার জন্য একটি কৌশলগত ভিত্তি গড়ে তুলছেন।

তবে, এমন পদক্ষেপের ক্ষেত্রে কিছু ঝুঁকিও রয়েছে। একদিকে, হোয়াইট হাউসের প্রতি আনুগত্য তার কাঙ্ক্ষিত পদ লাভের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে, অন্যদিকে, হঠাৎ নীতিগত অবস্থানের পরিবর্তন তাকে ফেডের অন্যান্য সদস্য এবং ফিন্যান্সিয়াল মার্কেটের আস্থার বাইরে ঠেলে দিতে পারে — যারা এতদিন তাকে একজন রক্ষণশীল এবং পূর্বাভাসযোগ্য নীতিনির্ধারক হিসেবে বিবেচনাক করে এসেছে।
ফেডের সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের প্রভাব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই তীব্র বিতর্ক চলছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার মূলভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে এবং এই স্বাধীনতার ওপর যেকোনো রাজনীতিক চাপ জাতীয় মুদ্রার প্রতি আস্থা নষ্ট করতে পারে এবং আর্থিক খাতে গুরুতর অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। একজন অভিজ্ঞ অর্থনীতিবিদ হিসেবে ওয়ালার এই সূক্ষ্ম ভারসাম্যের বিষয়টি ভালোভাবেই বোঝেন, এবং ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষার কারণে আর্থিক ব্যবস্থা বিপন্ন না করে সতর্কতার সাথে এগিয়ে চলা তার কর্তব্য।
গত কয়েক মাস ধরে ওয়ালার পুনরায় সুদের হার কমানোর পক্ষে কথা বলে আসছেন, যদিও তার কয়েকজন সহকর্মী তার বক্তব্যকে সন্দেহের চোখে দেখেছেন। তবে মাত্র গত সপ্তাহেই তিনি বলেছিলেন, সুদের হার ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমানোই যথেষ্ট হবে। অথচ এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে গেছে।
নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত এক ইভেন্টে ওয়ালার বলেন, "আমরা সবাই বুঝি যে, মার্কেট এবং মার্কিন জনগণের স্বার্থে একটি সুস্পষ্ট ও ধারাবাহিক নীতিমালার জন্য আমাদের নিজ নিজ অবস্থানের ব্যাপারে কিছুটা সমঝোতায় আসতে হবে।"
এটা মনে করিয়ে দেয়া উচিত যে ট্রাম্প শুধু ফেডের পরবর্তী চেয়ারম্যান নির্বাচনের বিষয়টিই পর্যালোচনা করছেন না—তিনি ফেডের ওপর নিয়ন্ত্রণ জোরদার করার জন্য বৃহত্তর পর্যায়ে প্রচারণাও চালাচ্ছেন। তিনি সুদের হার সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক প্রভাব কমিয়ে আনতে চান। সুদের হার কমানোর চাপ দেওয়ার পাশাপাশি ট্রাম্প ও তার সহযোগীরা চান ফেড নিজেদের কর্মদক্ষতা নতুন করে মূল্যায়ন করুক এবং প্রয়োজনে বড় পরিসরের কাঠামোগত সংস্কারে এগিয়ে আসুক। যেহেতু ওয়ালার জেরোম পাওয়েলের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম শীর্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছেন (যার মেয়াদ ২০২৫ সালের মে মাসে শেষ হবে), তাই তার দৃষ্টিভঙ্গি এখন সর্বদিক থেকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
ওয়ালারের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থান সুদের হার আরও কমানোর দিকেই ইঙ্গিত করে, এবং এই বিষয়ে তার প্রকাশ্য সমর্থন দেখে অনেকেই সন্দেহ করছেন যে, তিনি কৌশলগতভাবে নিজেকে চেয়ারম্যান পদের জন্য উপযুক্ত করে তুলছেন। চলতি বছর জুড়ে বেশ কিছু বিষয়ে তিনি এগিয়ে ছিলেন — যেমন ট্রাম্প কর্তৃক শুল্ক আরোপের ফলে মূল্যস্ফীতি এককালীনভাবে বাড়বে বলে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, আবার শ্রমবাজারের দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করতেও তিনিই প্রথম মন্তব্য করেন। গত জুনে তিনি অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার স্পষ্ট লক্ষণ দেখিয়ে প্রথম নীতিনির্ধারক হিসেবে পুনরায় সুদের হার হ্রাসের আহ্বান জানান। এমনকি জুলাই মাসের আর্থিক নীতিমালা সংক্রান্ত বৈঠকে যখন বেশির ভাগ সদস্য সুদের হার অপরিবর্তিত রাখার পক্ষে ছিলেন, তখন ওয়ালার ভিন্নমত পোষণ করেন।
এটাই প্রথমবার নয় যে, ওয়ালার তার সহকর্মীদের সন্দেহ সত্ত্বেও নিজস্ব অবস্থান বজায় রেখেছেন। ২০২২ সালেও তাকে সমালোচিত হতে হয়েছিল, কারণ তিনি বলেছিলেন ফেড শ্রমবাজারে ব্যাপক বেকারত্ব সৃষ্টি না করেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
সংক্ষেপে বলতে গেলে, ফেডের প্রতিনিধিদের বক্তব্য যতটা 'নমনীয়' হবে, মার্কিন ডলারের ওপর চাপও ততটাই বাড়বে।
টেকনিক্যাল পূর্বাভাস — EUR/USD
বর্তমানে ইউরোর ক্রেতাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে এই পেয়ারের মূল্যকে 1.1620 লেভেলে পুনরুদ্ধার করা। মূল্য কেবল এই লেভেল ব্রেক করে ঊর্ধ্বমুখী হতে পারলেই 1.1650 লেভেল টেস্ট করার সুযোগ তৈরি হতে পারে। এরপর পেয়ারটির মূল্য 1.1700 এর দিকে অগ্রসর হতে পারে, যদিও এটি সফলভাবে করতে হলে মার্কেটের বড় ট্রেডারদের সহায়তার প্রয়োজন হবে। এই পেয়ারের মূল্যের সর্বোচ্চ লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে 1.1725 লেভেল নির্ধারণ করা যেতে পারে।
অন্যদিকে, যদি দরপতন শুরু হয়, তাহলে মূল্য 1.1590 লেভেলে থাকা অবস্থায় ক্রেতারা সক্রিয় হতে পারে। যদি বড় ক্রেতারা সেখানে সক্রিয় না হন, তাহলে পরবর্তী সম্ভাব্য লং এন্ট্রির জন্য হয়ত 1.1545 লেভেল ব্রেকের জন্য অপেক্ষা করতে হবে বা 1.1500 লেভেল থেকে লং পজিশন বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে।
টেকনিক্যাল পূর্বাভাস — GBP/USD
পাউন্ডের ক্রেতাদের জন্য লক্ষ্য হবে 1.3360-এ অবস্থিত রেজিস্ট্যান্স লেভেল ব্রেক করা। কেবল এটিই এই পেয়ারের মূল্যের 1.3385 এর দিকে মুভমেন্টের সম্ভাবনা উন্মুক্ত করতে পারে, যদিও এই লেভেল অতিক্রম করাও বেশ চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। এই পেয়ারের মূল্যের সর্বোচ্চ লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে 1.3420 লেভেল নির্ধারণ করা যেতে পারে।
যদি এই পেয়ারের দরপতনের হয়, তাহলে মূল্য 1.3320 এরিয়ায় থাকা অবস্থায় বিক্রেতারা মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করবে। যদি তারা সফল হয় এবং এই রেঞ্জ ব্রেক করে মূল্য নিম্নমুখী হয়, তাহলে এটি বুলিশ পজিশনের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য আঘাত হতে পারে এবং GBP/USD পেয়ারের মূল্য 1.3280 পর্যন্ত নেমে যেতে পারে, এমনকি 1.3250 পর্যন্তও দরপতন হতে পারে।