গতকাল মার্কিন স্টক সূচকগুলোতে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার সাথে দৈনিক লেনদেন শেষ হয়েছে। S&P 500 সূচকটি 0.23% বৃদ্ধি পেয়েছে, নাসডাক 100 সূচক 0.80% বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ 0.34% বৃদ্ধি পেয়ছে।
আজ এশিয়ার স্টক সূচকগুলোতেও ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার সাথে লেনদেন শুরু হয়েছে, মূলত এই প্রত্যাশার কারণে যে চলমান সপ্তাহে প্রকাশিতব্য আয়ের প্রতিবেদনে বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তি থেকে ভালো লাভ অর্জন করবে। আঞ্চলিক MSCI স্টক সূচক 0.4% বেড়েছে। প্রযুক্তি খাত অন্যান্য খাতের তুলনায় ভালো ফলাফল প্রদর্শন করেছে। বিশেষ করে, চিপ উৎপাদক কোম্পানি যেমন এসকে হাইনিক্স ইনকর্পোরেটেড ও অ্যাডভানটেস্ট কর্পোরেশন আয়ের প্রতিবেদনের ইতিবাচক ফলাফল প্রকাশের পর এগুলোর শেয়ার দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার স্টক সূচকসমূহ সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। তবে, নিক্কেই 225 এবং কসপি — এই দুই সূচকেই মূল্য হ্রাস পাওয়া স্টকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় একচেটিয়াভাবে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার ধারাবাহিকতা দেখা যায়নি।

এশিয়ার ট্রেডিং সেশনে এনভিডিয়া কর্পোরেশনের স্টকের দর ৮% এরও বেশি বেড়েছে। এই মূল্য বৃদ্ধির মূল কারণ ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া এক ঘোষণা, যেখানে তিনি জানান—চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে এনভিডিয়ার ব্ল্যাকওয়েল চিপ নিয়ে আলোচনার পরিকল্পনা রয়েছে। এই বিবৃতির ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশাবাদ তৈরি হয় যে চীনে উন্নত প্রযুক্তিগত পণ্যের রপ্তানির ওপর আরোপিত বিধিনিষেধগুলো শিথিল হতে পারে। ব্ল্যাকওয়েল হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী গ্রাফিক প্রসেসর, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিং প্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই গ্রাফিক প্রসেসর রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হওয়ায় এনভিডিয়া তাদের অন্যতম প্রধান বাজার—চীন—থেকে বড় ধরনের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এ সপ্তাহের শেষে ট্রাম্প ও শি জিনপিংয়ের মধ্যে সম্ভাব্য বৈঠক একটি টার্নিং পয়েন্ট হয়ে উঠতে পারে। যদি আলোচনায় ইতিবাচক ফল আসে এবং রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা শিথিল হয়, এনভিডিয়া চীনা বাজারে প্রবেশাধিকার পাবে, যা নিঃসন্দেহে কোম্পানিটির আর্থিক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।
S&P 500 ফিউচারস 0.2% বেড়েছে এবং নাসডাক 100 ফিউচারস 0.4% বৃদ্ধি পেয়েছে। ফিউচার মার্কেটের এই গতিপ্রবাহ ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ইউরোপিয় স্টকগুলোর দরপতন শুরু হতে পারে। নাসডাক সূচকের প্রায় এক-চতুর্থাংশের প্রতিনিধিত্ব করে এমন পাঁচটি প্রধান প্রযুক্তি কোম্পানি বুধবার থেকে বৃহস্পতিবারের মধ্যে তাদের আয়ের প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। ফলে, বিনিয়োগকারীরা বুঝতে পারবেন, কম্পিউটিং অবকাঠামোতে যে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে, তা কতটা লাভজনক হয়েছে।
বেলওয়েদার ওয়েলথ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, "আমরা দৃঢ়ভাবে আশা করছি, চলমান AI প্রযুক্তি ও অবকাঠামোর ব্যাপক চাহিদার কারণে বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে আয়ের প্রতিবেদনের ইতিবাচক ফলাফল দেখতে পারবো।" তবে সংস্থাটি আরও বলেছে, "যদিও AI খাত থেকে প্রকৃত লাভ কতটা আসবে তা এখনো নিশ্চিত নয়, বিনিয়োগকারীরা এই অ্যাসেট ক্লাসে নতুন সুযোগের আশায় এখনই লাভের প্রশ্নে আপাতত উদাসীন থেকে বিনিয়োগ বজায় রেখেছে।"
এ বছর স্টক মার্কেটে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা যে গতি দেখা গেছে, তার পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাট—এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ফরেক্স মার্কেটে, মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট কর্তৃক ব্যাংক অফ জাপানের ভবিষ্যৎ আর্থিক নীতিমালা নিয়ে মন্তব্যের পর ইয়েন শক্তিশালী হয়ে উঠেছে — যা সুদের হার বৃদ্ধির সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। অপর দিকে, অতিরিক্ত সরবরাহের ইঙ্গিতের কারণে তেলের দর টানা তিন দিন ধরে হ্রাস পেতে দেখা গেছে। তিন দিনের দরপতনের পর স্বর্ণের দর সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে।

S&P 500 এর টেকনিক্যাল চিত্র অনুযায়ী, আজ ক্রেতাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে সূচকটির $6,914 রেজিস্ট্যান্স লেভেল ব্রেক করানো। এটি করা গেলে সূচকটি আরও শক্তিশালী অবস্থানে চলে যাবে এবং নতুন রেঞ্জে, অর্থাৎ $6,930 পর্যন্ত পৌঁছানোর সম্ভাবনা তৈরি হবে। বুলিশ ট্রেডারদের জন্য সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হবে মূল্য $6,946-এর উপরে থাকা অবস্থায় মার্কেটে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা, যা তাঁদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে। যদি মার্কেটে ঝুঁকি গ্রহণের প্রবণতা হ্রাস পায়, তাহলে মূল্য $6,896 লেভেলের আশেপাশে থাকা অবস্থায় ক্রেতাদের সক্রিয় হতে হবে। মূল্য এই লেভেল ব্রেক করে নিম্নমুখী হলে সূচকটির মূল্য দ্রুত $6,874 পর্যন্ত নেমে যেতে পারে এবং পরবর্তী লক্ষ্যমাত্রা $6,854 পর্যন্ত দরপতন প্রসারিত হতে পারে।