গতকাল মার্কিন ডলারের দঢ় ইউরো, পাউন্ড, জাপানি ইয়েন এবং অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাসেটের বিপরীতে দৃঢ়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মূল কারণ হলো আজকের ফেডারেল রিজার্ভের বৈঠকের পর মার্কেটে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়তে পারে এমন আশংকা করা হচ্ছে। ট্রেডাররা এখন দুটি মূল বিষয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন: এক, মার্কিন সুদের হার 0.25% হ্রাস; দুই, ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের পক্ষ থেকে কিছু দিকনির্দেশনা—যদিও তিনি সম্ভবত জটিল প্রশ্ন এড়িয়ে যাবেন, কারণ নীতিনির্ধারকদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান মতপার্থক্যের ফলে অস্পষ্ট পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

এই মাসের শুরুতে পাওয়েল স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যে ফেডারেল ওপেন মার্কেট কমিটি (FOMC) মূলত শ্রমবাজারে সম্ভব্য ঝুঁকির বিষয়েই মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রেখেছে। তবে, গত সপ্তাহে বিলম্বে প্রকাশিত মুদ্রাস্ফীতি প্রতিবেদনের ফলাফল প্রত্যাশার তুলনায় দুর্বল এসেছে—যা স্বল্পমেয়াদে ফেডের মধ্যে হকিশ বা কঠোর অবস্থানধারী সদস্যদের ভূমিকা কমাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে, বিনিয়োগকারীরা এখন শ্রমবাজার-সংক্রান্ত প্রতিবেদনের দিকে আরও বেশি মনোযোগী হয়েছেন। যেহেতু ফেডের বেশিরভাগ কর্মকর্তাই বর্তমান মূল্যস্ফীতির চাপ এবং ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা নিয়ে সন্তুষ্ট, তাই এখন ফেডের এজেন্ডায় আরও আগ্রাসীভাবে সুদের হার হ্রাস নিয়ে আলোচনা উঠে আসতে পারে। এর ফলে, পাওয়েল হয়তো আবারও মনোযোগ সরিয়ে কর্মসংস্থানকেন্দ্রিক নীতিতে ফিরে যেতে পারেন, এবং ফেডকে নিরপেক্ষ অবস্থানে নিয়ে যেতে পারেন।
ফেডের সুদের হার সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বুধবার ঘোষণা করা হবে এবং এর পরে পাওয়েলের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। উল্লেখযোগ্যভাবে, এবার ফেড কমিটির পক্ষ থেকে কোনো নতুন অর্থনৈতিক পূর্বাভাস বা সুদের হারের পূর্বাভাস প্রকাশ করা হবে না। ফলে, পাওয়েলের বক্তব্যের দিকেই মনযোগ কেন্দ্রীভূত থাকবে। তার মন্তব্যই পরবর্তী কয়েক সপ্তাহের মার্কেটের সার্বিক পরিস্থিতি নির্ধারণ করে দিতে পারে। যদি তাঁর বক্তব্যে কোনো ধরনের স্পষ্ট বা ঘোলাটে ইঙ্গিত থাকে, তাহলে মার্কেটে প্রবল ভোলাটিলিটি বা অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। ট্রেডাররা সেই অনুযায়ী বিভিন্ন দৃশ্যপট বিবেচনায় রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিশেষ নজর থাকবে ভবিষ্যতে মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই এবং শ্রমবাজারকে সহায়তা করার কৌশলের ওপর কোনো নতুন ইঙ্গিত পাওয়া যায় কি না।
ফিউচার মার্কেটের গতিপ্রবাহে দেখা যাচ্ছে যে, বিনিয়োগকারীরা আজকের বৈঠকে সুদের হার 0.25% কমানোকে প্রায় অবধারিত সিদ্ধান্ত হিসেবেই দেখছেন। তবে এই উচ্চ সম্ভাবনা মানে এই নয় যে নীতিনির্ধারকদের মধ্যে ঐক্যমত রয়েছে। কমিটির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ, যারা শ্রমবাজারের ঝুঁকি স্বীকার করলেও, এখনো মূল্যস্ফীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। এছাড়া, আনুষ্ঠানিকভাবে কঠোর অবস্থানে সমাপ্তি টানা হবে কি না, তা এখনো পরিষ্কার নয়। এমনকি, গত সেপ্টেম্বরে যেখানে নয়জন সদস্য বছর শেষে সর্বোচ্চ একবার সুদের হার কমানোর পক্ষে ছিলেন, এবারের বৈঠকে সেই বিভাজন আরও তীব্র হতে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে, অনেকেই মনে করছেন পাওয়েল আজকের বৈঠক সংক্রান্ত ভবিষ্যৎ কোনো নির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া থেকে বিরত থাকতে পারেন। চলমান সরকারি কার্যক্রমে শাটডাউনের কারণে অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান না থাকাও তার এই সতর্ক অবস্থানকে আরও জোরালো করবে।
টেকনিক্যাল চিত্র: EUR/USD
বর্তমানে EUR/USD পেয়ারের ক্রেতাদের জন্য প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে এই পেয়ারের মূল্যকে 1.1645 লেভেলে পুনরুদ্ধার করা। এটি সম্ভব হলে পরবর্তীতে 1.1668 লেভেল টেস্ট করানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা যেতে পারে। সেখান থেকে এই পেয়ারের মূল্যের 1.1696 পর্যন্ত পৌঁছানোর প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হতে পারে, যদিও বড় ট্রেডারদের সহায়তা ছাড়া এটি করা কঠিন হতে পারে। সর্বোচ্চ লক্ষ্যমাত্রা থাকবে 1.1725 লেভেল। অন্যদিকে, যদি এই পেয়ারের মূল্য কমে যায়, তবে মূল্য 1.1621 এর আশেপাশে থাকা অবস্থায় বড় ক্রেতাদের সক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। সেখানে কেউ সক্রিয় না হলে, এই পেয়ারের মূল্য আবারও 1.1602 লেভেল টেস্ট করতে পারে বা 1.1580 থেকে লং পজিশন বিবেচনা করা যেতে পারে।
টেকনিক্যাল চিত্র: GBP/USD
পাউন্ডের ক্রেতাদের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ হবে 1.3270 রেজিস্ট্যান্স লেভেল ব্রেক করা। এটি সম্ভব হলে এই পেয়ারের মূল্যের 1.3310-এর দিকে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা যেতে পারে, যদিও এই লেভেল ব্রেক করাও যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং হবে। সর্বশেষ লক্ষ্যমাত্রা হবে 1.3340 লেভেল। অন্যদিকে, যদি পেয়ারের মূল্য কমে যায়, তাহলে বিক্রেতারা এই পেয়ারের মূল্যকে 1.3225 লেভেলে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করবে। এই লেভেল যদি ব্রেক করা হয়, তাহলে সেটি ক্রেতাদের জন্য বড় আঘাত হিসেবে বিবেচিত হবে এবং GBP/USD পেয়ারের মূল্য 1.3180-এর লেভেল পর্যন্ত নেমে যেতে পারে, এমনকি 1.3140 পর্যন্তও দরপতনের সম্ভাবনা থাকবে।