এদিকে, ইউরো এখনও চাপের মুখে রয়েছে। ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (ইসিবি) গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য জোয়াকিম নাগেল-এর মতে, ইউরোজোনের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক প্রতিবেদনের ফলাফল সামগ্রিকভাবে ইসিবির পূর্বাভাসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল, যার ফলে নীতিনির্ধারকদের কিছুটা নমনীয় অবস্থান বজায় রাখার সুযোগ রয়েছে।

গত সপ্তাহে ইসিবি টানা তৃতীয়বারের মতো সুদের হার 2%-এ অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। তখন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা স্পষ্টভাবে জানান যে, সুদের হার পরিবর্তন করার মতো কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। এক সাক্ষাৎকারে বুন্ডেসব্যাংকের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, সেপ্টেম্বর মাসে সর্বশেষ পূর্বাভাস প্রকাশের পর থেকে অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানে বড় কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি।
তিনি বলেন, "ডিসেম্বরে আমরা নতুন প্রতিবেদন পাব এবং তার ভিত্তিতে নতুন পূর্বাভাস তৈরি করব। বর্তমানে আমরা সব ধরনের বিকল্প বিবেচনায় রাখছি এবং আমার মতে এই অনিশ্চয়তার মধ্যে এটিই সবচেয়ে যৌক্তিক পদক্ষেপ।"
চলতি বছরের মধ্যে মোট আটবার ২৫ বেসিস পয়েন্ট করে হার কমানোর পর, জুন মাস থেকে ইসিবির কর্মকর্তারা সুদের হার অপরিবর্তিত রেখেছেন। ইসিবির প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্ডে বৃহস্পতিবার পুনরায় জোর দিয়ে বলেন ইসিবি দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে এবং এ অবস্থান ধরে রাখতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নিতেই তিনি প্রস্তুত। তবে, মার্কেটের পরিস্থিতি বিচার করলে বলা চলে—ইউরো নিজে অতটা 'দৃঢ়' অবস্থানে নেই।
যদিও মুদ্রাস্ফীতির হার এখন 2%-এর লক্ষ্যমাত্রার আশেপাশে রয়েছে, ইউরোপের সার্বিক অর্থনীতি সেই অর্থে দৃঢ় মনে হচ্ছে না। তারপরও ইসিবির নীতিনির্ধারকরা যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেও ইউরোজোনের অর্থনীইতির স্থিতিশীলতার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। ২০২৫ সালের শেষ প্রান্তিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি 0.2% হয়েছে, যা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি এবং বছরের শেষ প্রান্তিকের জন্য এটি ইতিবাচক সূচনা নির্দেশ করে।
তবুও, কিছু তুলনামূলকভাবে "হকিশ বা কঠোর" অবস্থানধারী নীতিনির্ধারকদের দুশ্চিন্তা রয়েছে যে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হলে তা দীর্ঘসময় মূল্যস্ফীতিকে 2%-এর ওপরে রাখার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। ইসিবির পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৬ সালে মুল্যস্ফীতি হবে 1.7%, এবং ২০২৭ সালে এটি 1.9%-এ পৌঁছাতে পারে। তবে গত সপ্তাহে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ইউরোজোনে মূল মূল্যস্ফীতি এবং পরিষেবা খাতের মূল্যস্ফীতি প্রত্যাশার তুলনায় বেশি সময় ধরে উচ্চমাত্রায় রয়ে গেছে, যা উদ্বেগজনক।
জার্মানির অর্থনীতি নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে নাগেল বলেন, দেশটিতে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে এবং দেশটির অর্থনীতি এখন সামান্য প্রবৃদ্ধির দিকেই এগিয়ে যেতে পারে—যা বর্ধিত অবকাঠামো ও প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়ের মাধ্যমে সমর্থন পাবে।
তিনি বলেন, "আগামী বছর আমরা নিঃসন্দেহে শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেখতে পারব। যদি বিনিয়োগের দিকটি সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, তাহলে এই নাজুক অঙ্কুর পরিস্থিতি একটি শক্তিশালী কাঠামোতে পরিণত হতে পারে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি বৃদ্ধি পেতে পারে।"
তবে, যেমনটি আমি আগেও উল্লেখ করেছি, এই ধরনের ইতিবাচক বক্তব্য ইউরোর মূল্যের উপর খুব একটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে না।
বর্তমানে EUR/USD পেয়ারের টেকনিক্যাল চিত্র:
এই মুহূর্তে ইউরো ক্রেতাদের এই পেয়ারের মূল্যকে 1.1550 লেভেলে পুনরুদ্ধারের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে হবে। মূল্য এই লেভেল যেতে পারলেই 1.1580-এ পৌঁছানোর সম্ভাবনা তৈরি হবে। সেখান থেকে পেয়ারটির মূল্য 1.1610 পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, তবে এটি মার্কেটের বড় ট্রেডারদের সহায়তা ছাড়া কঠিন হবে। চূড়ান্ত লক্ষ্যমাত্রা হবে 1.1640-এর লেভেল। যদি ট্রেডিং ইন্সট্রুমেন্টটির মূল্য কমে যায়, তাহলে মূল্য 1.1520 লেভেলের কাছাকাছি থাকা অবস্থায় বড় ক্রেতাদের সক্রিয় হওয়ার প্রত্যাশা রয়েছে। সেখানে যদি ক্রেতারা সক্রিয় না হয়, তাহলে এই পেয়ারের মূল্যের 1.1490-এর লেভেলে না নেমে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত হবে, অথবা 1.1460 থেকে লং পজিশন ওপেন করা যেতে পারে।
বর্তমানে GBP/USD পেয়ারের টেকনিক্যাল চিত্র:
পাউন্ডের ক্রেতাদের প্রধান লক্ষ্য হবে এই পেয়ারের মূল্যের 1.3160-এর রেজিস্ট্যান্স লেভেল ব্রেক করানো। এটি সফলভাবে করা গেলে এই পেয়ারের মূল্যের 1.3190 পর্যন্ত যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা যেতে পারে, যদিও এই লেভেলের ওপরে ওঠা বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে। বুলিশ প্রবণতার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত লক্ষ্যমাত্রা হলো 1.3220 লেভেল। অন্যদিকে, যদি দরপতন শুরু হয়, তাহলে এই পেয়ারের মূল্য 1.3130-এ থাকা অবস্থায় বিক্রেতারা মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে চাইবে। এই পেয়ারের মূল্য এই লেভেল ব্রেক করলে সেটি ক্রেতাদের জন্য বড় ধাক্কা হতে পারে এবং GBP/USD পেয়ারের মূল্য 1.3095 পর্যন্ত নেমে যেতে পারে, এমনকি 1.3060 পর্যন্ত দরপতন হওয়ারও ব্যাপক সম্ভাবনা থাকবে।