গতকাল ইউরোজোনের মুদ্রাস্ফীতি প্রতিবেদন প্রকাশের পর ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (ECB) কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে একাধিক মন্তব্য শোনা গেছে। তবে ফরেক্স মার্কেটে এই প্রতিবেদন খুব একটা গুরুত্ব পায়নি। ইসিবির গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য মার্টিন কোশার এক সাক্ষাৎকারে বলেন, "ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২%-এর মুদ্রাস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা থেকে সামান্য বিচ্যুতির ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া দেখাতে বাধ্য নয়। ইসিবির সতর্ক থাকা উচিত, যাতে সত্যিকার অর্থে নীতিমালা পরিবর্তনের প্রয়োজনের ক্ষেত্রে যথাযথভাবে পদক্ষেপ নেওয়া যায়।"

মনে করিয়ে দেই যে, গতকাল প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউরোজোনে ভোক্তা মূল্য সূচক (CPI) নভেম্বর মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়ে ২.২%-এ পৌঁছেছে, যা আগের মাসের ২.১%-এর তুলনায় বেশি এবং অর্থনীতিবিদদের মধ্যবর্তী পূর্বাভাসকেও অতিক্রম করেছে। অবশ্য মূল মুদ্রাস্ফীতি—যেখানে খাদ্য এবং জ্বালানির মূল্যের ওঠানামা বিবেচনা করা হয় না—সেটি ২.৪% স্তরে অপরিবর্তিত থেকেছে।
মহামারি-পরবর্তী সময়ে বড় ধরনের ঊর্ধ্বগতি সত্ত্বেও, ইউরোজোনের ২০টি দেশে গত ৯ মাস ধরে মুদ্রাস্ফীতি ২%-এর লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি অবস্থান করছে। যদিও অন্তর্নিহিত মুদ্রাস্ফীতির চাপ কমছে, তবে সেটির গতি তুলনামূলকভাবে মন্থর।
কোশার বলেন, "আমরা আর্থিক নীতিমালার মাধ্যমে অতিমাত্রায় নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারি না এবং এমনটি করাও উচিত নয়। আমরা বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক (AI) স্টকের দাম বেড়েই চলেছে, সেখানকার ফাইন্যান্সিয়াল মার্কেটে স্টকের খুবই উচ্চ মূল্যায়ন লক্ষ্য করছি। তাই আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।" কোশার আরও উল্লেখ করেন যে, ইউরোপীয় ব্যাংকগুলো খুবই স্থিতিশীল অবস্থায় আছে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে সংকট ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না, তাই নির্দিষ্ট মাত্রার সতর্কতা বজায় রাখা প্রয়োজন।
কোশার জোর দেন যে, মুদ্রানীতিতে ইসিবির নমনীয়তা বজায় রাখা জরুরি এবং সাম্প্রতিক মুদ্রাস্ফীতি প্রতিবেদনের অনুকূল ফলাফল সত্ত্বেও তাড়াহুড়ো করে সুদের হার কমানো ঠিক হবে না। তার মতে, সময়ের আগে সিদ্ধান্ত নিলে ইসিবির অবস্থান দুর্বল হয়ে যেতে পারে এবং ভবিষ্যতে নতুন অর্থনৈতিক ধাক্কার ক্ষেত্রে তাদের সাড়া দেওয়ার সক্ষমতা সীমিত হতে পারে।
সারসংক্ষেপে, কোশার ইসিবিকে সতর্কতা ও সংবেদনশীলতা বজায় রেখে মুদ্রানীতি পরিচালনার আহ্বান জানান যাতে ভবিষ্যতের যেকোনো চ্যালেঞ্জের মুখে কার্যকরভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো যায়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা প্রধান অগ্রাধিকার, এবং সম্ভাব্য ঝুঁকি থেকে অর্থনীতিকে সুরক্ষিত রাখার জন্য ইসিবিকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
এ ধরনের বিবৃতি খুব স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয় যে ডিসেম্বর মাসের বৈঠকে ইউরোপীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থায় তাদের নীতিমালায় কোনো পরিবর্তন আনবে বলে সম্ভাবনা কম।
EUR/USD-এর বর্তমান টেকনিক্যাল চিত্রের ক্ষেত্রে, ক্রেতাদের এখন এই পেয়ারের মূল্যকে 1.1650 লেভেলে পুনরুদ্ধার করার কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। কেবল এটি নিশ্চিত করতে পারলেই এই পেয়ারের মূল্যের 1.1680-এ পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ধরা যেতে পারে। সেখান থেকে এই পেয়ারের মূল্য 1.1715 পর্যন্ত বাড়তে পারে, যদিও মার্কেটের বড় ট্রেডারদের সমর্থন ছাড়া এটি অর্জন করা বেশ কঠিন হবে। সবচেয়ে দূরবর্তী লক্ষ্যমাত্রা হলো 1.1730। যদি এই পেয়ারের দরপতন শুরু হয় তাহলে মূল্য প্রায় 1.1625 লেভেলে থাকা অবস্থায় আমি ক্রেতাদের সক্রিয় হওয়ার প্রত্যাশা করছি। যদি সেখানে ক্রেতারা সক্রিয় না হয়, তবে এই পেয়ারের মূল্যের 1.1590-এর লেভেলে পুনরায় নেমে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত হবে, অথবা 1.1560 লেভেল থেকে লং পজিশনে এন্ট্রির কথা বিবেচনা করা যেতে পারে।
GBP/USD-এর বর্তমান টেকনিক্যাল চিত্র অনুযায়ী, পাউন্ডের ক্রেতাদের জন্য মূল লক্ষ্য হবে এই পেয়ারের মূল্যকে 1.3250-এর নিকটতম রেজিস্ট্যান্স লেভেলে পুনরুদ্ধার করা। কেবল এটি নিশ্চিত করতে পারলেই এই পেয়ারের মূল্যের 1.3270-এর দিকে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা যাবে, যা ব্রেকআউট করে মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী হওয়া বেশ কঠিন হবে। সবচেয়ে দূরবর্তী লক্ষ্যমাত্রা বর্তমানে 1.3300 লেভেলে রয়েছে। যদি এই পেয়ারের দরপতন হতে থাকে, তাহলে মূল্য 1.3225 লেভেলে থাকা অবস্থায় বিক্রেতারা মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে নিতে চেষ্টা করবে। মূল্য এই রেঞ্জ ব্রেকআউট করতে পারলে, সেটি ক্রেতাদের জন্য বড় ধরনের ধাক্কা হবে এবং GBP/USD-এর মূল্য 1.3203-এর লেভেলে নেমে যাবে, এবং সেখান থেকে সম্ভাব্যভাবে 1.3170 পর্যন্ত দরপতন হতে পারে।