মার্কিন বেকারভাতা আবেদন সংক্রান্ত সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় গতকাল ফরেক্স ও স্টক মার্কেটে উল্লেখযোগ্য মাত্রার অস্থিরতা দেখা গেছে। জানা গেছে, গত সপ্তাহে বেকারভাতা আবেদনের সংখ্যা কমে তিন বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে এসে পৌঁছেছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে সাম্প্রতিক ছাঁটাই সত্ত্বেও নিয়োগকারীরা এখনও ব্যাপকভাবে কর্মীদের ধরে রাখছে।

২৯ নভেম্বরে শেষ হওয়া সপ্তাহে প্রাথমিক বেকারভাতা আবেদনের সংখ্যা ২৭,০০০ কমে ১৯১,০০০-এ দাঁড়িয়েছে। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ছুটির মৌসুমে এই ধরনের সাপ্তাহিক প্রতিবেদনের প্রভাবে অনেক বেশি অস্থিরতা সৃষ্টি হয়ে থাকে। তবুও, এই পরিসংখ্যানের ফলাফল অর্থনীতিবিদদের পূর্বাভাসকে ছাড়িয়ে গেছে। লেবার ডিপার্টমেন্টের তথ্য অনুযায়ী, নতুন আবেদনকারীর চার-সপ্তাহের চলমান গড়, যা অস্থিরতা প্রশমিত করতে সহায়তা করে, তা গত সপ্তাহে কমে ২১৪,৭৫০-এ দাঁড়িয়েছে — যা জানুয়ারি মাস পরবর্তী সর্বনিম্ন স্তর।
এই অপ্রত্যাশিত হ্রাস নিঃসন্দেহে মার্কিন অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক একটি সংকেত, যা মুদ্রাস্ফীতি এবং উচ্চ সুদের হারের বিরুদ্ধে চলমান সংগ্রামের মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রদর্শন করে। যদিও এটি সরাসরি পূর্ণমাত্রায় শ্রমবাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেছে এমনটি নির্দেশ করে না, তবে প্রাপ্ত ফলাফল যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক।
তবে কিছু বিশ্লেষক এই প্রতিবেদনের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন। ছুটির মৌসুমে অর্থনৈতিক সূচকের প্রভাবে মার্কেটে অস্থিরতার মাত্রা সাধারণত বেড়ে যায়, যার ফলে মার্কেটের সামগ্রিক প্রবণতা মূল্যায়ন করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। এর পাশাপাশি, ছুটির কারণে আবেদন প্রক্রিয়ায় দেরি হওয়ার সম্ভাবনাও বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
অক্সফোর্ড ইকোনোমিকস মন্তব্য করেছে, "সালতামামির এই সময়ে প্রাথমিক বেকারভাতা আবেদনের সংখ্যা ব্যাপকভাবে ওঠানামা করতে পারে, তাই মাত্র এক সপ্তাহের প্রতিবেদন দেখে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আশা উচিত নয়। তবুও, সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী প্রাথমিক আবেদনের সংখ্যা এখনো এমন একটি পর্যায়ে রয়েছে যা তুলনামূলকভাবে কম হারে কর্মসংস্থান হ্রাস নির্দেশ করছে সাথে, যেটি সাম্প্রতিক ছাঁটাই কার্যক্রম সত্ত্বেও প্রযোজ্য।"
এটি উল্লেখ করা প্রয়োজন যে গত কয়েক মাসে অনেক নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান হঠাৎ করে নিয়োগ হ্রাস করেছে এবং এইচপি ইনকর্পোরেটেড ও ফেডেক্স কর্পোরেশন সহ কয়েকটি বড় কর্পোরেশন কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে। তবে, বৃহস্পতিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে প্রকৃত কর্মী ছাঁটাই এখনো সীমিত পর্যায়ে রয়েছে, যা শ্রমবাজার পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি নিয়ে উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করছে।
বুধবার প্রকাশিত ADP রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক কর্মী ছাঁটাই করেছে, যার সিংহভাগই ছিল ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। এই প্রতিবেদন এবং সাপ্তাহিক বেকারভাতা আবেদনের প্রতিবেদন মিলিয়ে, ফেডারেল রিজার্ভের কর্মকর্তারা আগামী সপ্তাহে সুদের হার সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রাসঙ্গিক অন্তর্দৃষ্টি লাভ করবেন।
টেকনিক্যাল দিক থেকে এখন ইউরোর ক্রেতাদের অবশ্যই এই পেয়ারের মূল্যকে 1.1680 লেভেলে পুনরুদ্ধার করতে হবে। কেবল তখনই মূল্যকে 1.1705-এর লক্ষ্যমাত্রায় নিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। সেখান থেকে পেয়ারের মূল্য 1.1725 পর্যন্ত বাড়তে পারে, কিন্তু বড় ট্রেডারদের সমর্থন ছাড়া এটি করা কঠিন হবে। দীর্ঘমেয়াদে সর্বোচ্চ লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে 1.1753 লেভেল নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে যদি পেয়ারের মূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে পতনের শিকার হয়ে 1.1650-এর কাছাকাছি নেমে যায়, তাহলে সেখানে ক্রেতাদের সক্রিয় হওয়ার প্রত্যাশা থাকবে। যদি ক্রেতারা তেমন সক্রিয় না হয়, তাহলে এই পেয়ারের মূল্য পুনরায় 1.1625 লেভেলে না নেমে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা অথবা 1.1590 থেকে লং পজিশন ওপেন করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
ব্রিটিশ পাউন্ডের ক্ষেত্রেও, ক্রেতাদের অবশ্যই এই পেয়ারের মূল্যকে নিকটতম রেজিস্ট্যান্স লেভেল 1.3360 পুনরুদ্ধার করতে হবে। কেবল তখনই মূল্যের 1.3395-এর লক্ষ্যমাত্রার দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে, যা ব্রেক করে ঊর্ধ্বমুখী হওয়া অনেকটাই কঠিন হবে। দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে 1.3415 লেভেল নির্ধারণ করা যেতে পারে। যদি এই পেয়ারের মূল্য কমে যায়, তাহলে মূল্য 1.3320 লেভেলে থাকা অবস্থায় বিক্রেতারা মার্কেটে নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করবে। যদি তারা সেই লেভেল ব্রেক করাতে সক্ষম হয়, তবে সেটি ক্রেতাদের বড় একটি ধাক্কা হবে এবং এর ফলে GBP/USD পেয়ারের মূল্য কমে গিয়ে প্রথমে 1.3290 এবং পরবর্তীতে 1.3270 লেভেলে পৌঁছাতে পারে।