চলতি সপ্তাহের অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী EUR/USD পেয়ারের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে এমন খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে না। প্রাসঙ্গিক প্রতিবেদনগুলোর মধ্যে রয়েছে অক্টোবর মাসের JOLTS কর্মসংস্থান এবং সাপ্তাহিক বেকারভাতা আবেদন সংক্রান্ত প্রতিবেদন।
তবে এর মানে এই নয় যে সপ্তাহটি বেশ শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করবে। বরং, মার্কেটে এই পেয়ারের মূল্যের অস্থিরতার মাত্রা বাড়তে যাচ্ছে, কারণ সপ্তাহের মাঝামাঝি বুধবার ফেডারেল রিজার্ভের ডিসেম্বরের বৈঠকের সিদ্ধান্ত প্রকাশিত হবে। তাই পুরো সপ্তাহটিকে দুটি অংশে ভাগ করা যায়: বৈঠকের আগ মুহূর্ত এবং বৈঠকের পর। বৈঠকের আগে ট্রেডাররা এই বৈঠকের প্রত্যাশার দিকে মনোযোগ দেবে, এবং পরবর্তীতে প্রকাশিত ফলাফলের ভিত্তিতে প্রতিক্রিয়া জানাবে । অন্যান্য সকল মৌলিক অনুঘটক কিছুটা অন্তরালে থাকবে।

আগেও উল্লেখ করা হয়েছে, মার্কেটের ট্রেডারদের মধ্যে প্রায় সকলেই নিশ্চিত যে ফেড এই মাসে ফেডারেল সুদের হার ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমাবে। CME ফেডওয়াচের তথ্য অনুসারে, এই সম্ভাবনার হার বর্তমানে ৮৬.২%-এ দাঁড়িয়েছে। ফেডের বোর্ডের সদস্য ক্রিস্টোফার ওয়ালার, স্টিফেন মিরান, মিশেল বোম্যান, নিউ ইয়র্ক ফেড প্রেসিডেন্ট জন উইলিয়ামস এবং সান ফ্রান্সিসকো ফেড প্রেসিডেন্ট মেরি ডেইলির মতো বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ প্রতিনিধি সুদের হার কমানোর পক্ষে বক্তব্য রেখেছেন, যা বিভিন্ন সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচক দ্বারা সমর্থিত—যেগুলো নিয়ে নিচে বিশ্লেষণ করা হবে।
তবে এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, সুদের হার হ্রাসের সিদ্ধান্তটি সর্বসম্মত হবে না। গত দুই থেকে তিন সপ্তাহে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি—যেমন সুসান কলিন্স, লরি লোগান, বেথ হ্যাম্যাক এবং জেফ শমিড—আরও সতর্ক অবস্থানের পক্ষে মত দিয়েছেন এবং বলেছেন সুদের হার অপরিবর্তিত রাখা উচিত। তাঁদের যুক্তি, মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি এবং সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত নন-ফার্ম পে-রোল প্রতিবেদনের কিছু ইতিবাচক উপাদান সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বর্তমানে অনেকটাই নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করেছেন এবং এ বিষয়ে মুখ বন্ধ রেখেছেন।
আমার দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, ডিসেম্বরের বৈঠকের মূল রহস্য ফেডের মুদ্রানীতির ভবিষ্যৎ নমনীয়করণের গতিপথে লুকিয়ে আছে। বৈঠকের তাৎক্ষণিক নির্দেশনা প্রায় পূর্বনির্ধারিত। যেমন, রয়টার্স পরিচালিত এক জরিপে অংশ নেওয়া ১০৮ জন অর্থনীতিবিদের মধ্যে ৮৯ জন মনে করেন যে ডিসেম্বর মাসেই ফেড সুদের হার ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমাবে। তবে তাঁদের মধ্যে মাত্র ৫০ জন মনে করছেন যে ফেড আগামী বছরের প্রথম প্রান্তিকেই আরেকবার সুদের হার কমাতে পারে।
CME ফেডওয়াচের তথ্য অনুসারে, যদি ডিসেম্বরেই একবার সুদের হার কমানো হয়, তাহলে জানুয়ারিতে সুদের হার আরও একবার ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমানোর সম্ভাবনা দাঁড়ায় মাত্র ২৫%। সেক্ষেত্রে মার্চে সুদের হার হ্রাসের ৪০% সম্ভাবনা রয়েছে।
সুতরাং, যদি ডিসেম্বরের বৈঠকের ফলাফল প্রকাশের পর পরবর্তী কোনো বৈঠকে ফেড সুদের হার আরও কমানোর ইঙ্গিত দেয়, তাহলে ডলারের ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি হতে পারে, কারণ এখন পর্যন্ত ট্রেডাররা ধারণা করছে যে ফেড ডিসেম্বরে সুদের হার কমালেও তা থেকে "ডোভিশ বা নমনীয়" নীতিমালা প্রণয়নের খুব বেশি ইঙ্গিত পাওয়া যাবে না।
বর্তমান চিত্র অনুযায়ী, ফেডের ডিসেম্বরের বৈঠকের ফলাফল মার্কেটে উল্লেখযোগ্য অস্থিরতা সৃষ্টি করবে — তবে তা ডলারের পক্ষে যাবে না বিপক্ষে, সেটিই এখনো অনিশ্চিত।
টেকনিক্যাল দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, H4 টাইমফ্রেমে EUR/USD পেয়ারের মূল্য বলিঙ্গার ব্যান্ডের মধ্যম ও নিম্ন লাইনের মধ্যবর্তী অঞ্চলে, কুমো ক্লাউডের ওপরে, এবং টেনকান-সেন ও কিজুন-সেন লাইনের মাঝখানে অবস্থান করছে। D1 টাইমফ্রেমে এই পেয়ারের মূল্যের বলিঙ্গার ব্যান্ডের মধ্যম ও উপরের লাইনের মাঝামাঝি, টেনকান এবং কিজুন লাইনের ওপরে, তবে কুমো ক্লাউডের ভেতরে অবস্থান করছে। লং পজিশন ওপেন করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে D1 টাইমফ্রেমে ক্রেতাদের EUR/USD-এর মূল্যের বলিঙ্গার ব্যান্ডের মধ্যম লাইন 1.1650-এর ওপরে ব্রেক করানো প্রয়োজন। এই ক্ষেত্রে, এই পেয়ারের মূল্য H4-এ বলিঙ্গার ব্যান্ডের মধ্যম ও উপরের লাইনের মাঝখানে, এবং সকল ইচিমোকু লাইনের ওপরে পৌঁছে যাবে — যেটি "প্যারেড অব লাইন্স" পাট্যার্নের মাধ্যমে বুলিশ প্রবণতা গঠনের ইঙ্গিত দেবে। এই পেয়ারের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী মুভমেন্টের লক্ষ্যমাত্রা হবে 1.1690 (H4-এ বলিঙ্গার ব্যান্ডের উপরের লাইন) এবং 1.1730 (D1-এ কুমো ক্লাউডের উপরের সীমা)।