সম্প্রতি ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক সুদের হার কমানোর পরিবর্তে তা বৃদ্ধি করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল, যা ভবিষ্যতে মুদ্রানীতি নমনীয়করণের সংক্রান্ত প্রত্যাশাকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে।

তবে, ইসিবির গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য ফ্রঁসোয়া ভিলরোয়া দ্য গালোসহ ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তারা খুব দ্রুতই এই আলোচনাকে খণ্ডন করে দেন। ভিলরোয়া বলেন যে, ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আসন্ন বৈঠকে এখনই সুদের হার বৃদ্ধির মতো কোনো যৌক্তিক ভিত্তি নেই এবং সুদের হার অপরিবর্তিত রাখার সম্ভাবনাই বেশি।
ফ্রান্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান উল্লেখ করেন যে, বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী সুদের হার স্থির রাখাই সম্ভবত বেশি বিচক্ষণ হবে, তবে একইসঙ্গে তিনি ১৮ ডিসেম্বর নির্ধারিত বৈঠকে মুদ্রানীতিগত সিদ্ধান্ত নমনীয় অবস্থান বজায় রাখার সুপারিশ করেন। তিনি আরও বলেন যে, বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে দেখা যাচ্ছে, নিকট ভবিষ্যতে সুদের হার বৃদ্ধির তেমন কোনো ভিত্তি নেই—যা সাম্প্রতিক কিছু গুজব ও অনুমানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
এই ধরনের বিবৃতিগুলো সাধারণত মার্কেটে স্নায়ুচাপ হ্রাস করার এবং ইউরোর অপ্রত্যাশিত দর বৃদ্ধি প্রতিরোধ করার জন্য হয়ে থাকে, যা ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর রপ্তানির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ইসিবির তাদের পূর্ববর্তী পদক্ষেপগুলোর প্রভাব মূল্যায়নে 'অপেক্ষা এবং পর্যবেক্ষণের' পদ্ধতি অনুসরণ করতে চায় বলে মনে হচ্ছে।
একইসঙ্গে, সম্ভাব্য নীতিমালার পরিবর্তন নিয়ে আলোচনাগুলো ইসিবির গভর্নিং কাউন্সিলের মধ্যে মতপার্থক্যের ইঙ্গিত দেয়। যেখানে 'হকিশ বা কঠোর অবস্থানধারীরা' সুদের হার বৃদ্ধির পক্ষে জোরালো বক্তব্য দিচ্ছে, সেখানে 'ডোভিশ বা নমনীয় অবস্থানধারীরা' বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পক্ষে সমর্থন বজায় রাখার গুরুত্ব তুলে ধরছে।
ভিলরোয়া এই মন্তব্য ইসিবির বোর্ড সদস্য ইসাবেল স্নাবেলের বক্তব্যের পর এসেছে, যেখানে তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন যে ইসিবির পরবর্তী পদক্ষেপ হবে সুদের হার বৃদ্ধি।
গতকাল ইসিবির প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্ডেও ভাষণ দেন, যেখানে তিনি ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিতব্য নতুন অর্থনৈতিক প্রতিবেদন ও মুদ্রানীতিগত পূর্বাভাসের ইঙ্গিত করেন। নতুন পূর্বাভাসের পাশাপাশি, ইসিবির বর্তমান অবস্থানের আরও বিস্তারিত ব্যাখ্যাও তিনি দিয়েছেন। বিনিয়োগকারীরা ঘনিষ্ঠভাবে লক্ষ্য করছে যে ইসিবি বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে কীভাবে মূল্যায়ন করছে এবং ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্তে কোন উপাদানগুলো সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হবে মুদ্রাস্ফীতির গতিপথ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর করা মন্তব্যের প্রতি।
ইসিবি যদি সুদের হার বাড়াতে শুরু করে, তাহলে সেটি ইউরোপীয় অর্থনীতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে। উচ্চ সুদের হার বিনিয়োগ, ভোক্তা ব্যয় এবং সামগ্রিক প্রবৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এর পাশাপাশি, ইউরোর দর বৃদ্ধির মাধ্যমে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর রপ্তানির প্রতিযোগিতা হ্রাস পেতে পারে।
তবে মনে রাখতে হবে, এই পূর্বাভাসগুলো শুধুমাত্র অনুমানমাত্র—অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তিত হতে পারে এবং ইসিবিকে নতুন পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে নীতিমালায় পরিবর্তন আনতে হবে।
বর্তমানে মার্কেটে প্রায় সম্পূর্ণভাবে এই ধারণা গড়ে উঠেছে যে ২০২৬ সালে সুদের হার কমানো হবে না এবং সুদের হার বৃদ্ধির সম্ভাবনা নিয়ে বিশ্লেষকদের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
বর্তমান EUR/USD পেয়ারের টেকনিক্যাল প্রেক্ষাপট অনুযায়ী ক্রেতারা এই পেয়ারের মূল্যকে 1.1710 লেভেলে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এই পেয়ারের মূল্য এই লেভেলে পৌঁছাতে পারলে 1.1725 লেভেলে পৌঁছানোর সম্ভাবনা উন্মুক্ত হবে। সেখান থেকে এই পেয়ারের মূল্য 1.1750-এর দিকে অগ্রসর হতে পারে, যদিও বড় ট্রেডারদের সহায়তা ছাড়া এটি করা কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। চূড়ান্ত লক্ষ্যমাত্রা হবে 1.1777-এর লেভেল।যদি এই ট্রেডিং ইন্সট্রুমেন্টটির মূল্য নিম্নমুখী হয়, তাহলে মূল্য 1.1675 লেভেলের কাছাকাছি থাকা অবস্থায় বড় ক্রেতাদের সক্রিয় পদক্ষেপের প্রত্যাশা করা যায়। যদি সেখানে কোনো উল্লেখযোগ্য ক্রয় কার্যকলাপ দেখা না যায়, তাহলে এই পেয়ারের মূল্যের 1.1650 লেভেলে নেমে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করা বা 1.1615 থেকে লং পজিশন ওপেন করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
GBP/USD পেয়ারের টেকনিক্যাল চিত্র অনুযায়ী, পাউন্ড ক্রেতাদের প্রথমে এই পেয়ারের মূল্যকে 1.3390 লেভেলের নিকটবর্তী রেজিস্ট্যান্স পুনরুদ্ধার করতে হবে। এতে সফল হলে পরবর্তী লক্ষ্যমাত্রা হবে 1.3420—যার উপরে ব্রেকআউট পাওয়া কিছুটা কঠিন হতে পারে। পরবর্তী লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে 1.3440 লেভেল নির্ধারণ করা যেতে পারে। যদি এই পেয়ারের দরপতনের হয়, তাহলে মূল্য 1.3350 লেভেলে থাকা অবস্থায় বিক্রেতারা মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করবে। যদি তারা সফল হয়, তাহলে এই রেঞ্জ ব্রেকডাউনের মাধ্যমে বুলিশ পজিশনগুলো গুরুতরভাবে ধাক্কা খাবে এবং GBP/USD পেয়ারের মূল্য 1.3320-এর নিচে নেমে যেতে পারে, এবং সেখান থেকে 1.3285 পর্যন্ত দরপতনের সম্ভাবনাও তৈরি হবে।