গত সপ্তাহে EUR/USD পেয়ারের মূল্য 1.1800-এর রেজিস্ট্যান্স লেভেল (D1 টাইমফ্রেমে বোলিঙ্গার ব্যান্ডের উপরের লাইন) ব্রেক করতে ব্যর্থ হয়, যার পর বিক্রেতারা মার্কেটে নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং এই পেয়ারের মূল্যকে 1.17 লেভেলের দিকে নিয়ে আসে। তবে তারা এই পেয়ারের মূল্যকে 1.16 লেভেলে বা 1.1690-এর সাপোর্ট লেভেল অতিক্রম করাতে পারেনি (একই টাইমফ্রেমে কুমো ক্লাউডের উপরের সীমা)। শুক্রবার এই পেয়ারের মূল্য 1.1704 লেভেলে পৌঁছানোর পর ট্রেডিং শেষ হয়।

মূলত বেশ দুর্বল ভিত্তির উপর নির্ভর করে গত সপ্তাহে এই পেয়ারের দরপতন ঘটেছে। মার্কিন ডলার সূচক তিন দিন (বুধবার থেকে শুক্রবার) বেশ শক্তিশালী অবস্থানে ছিল, কিন্তু এই ধরনের গতিশীলতাকে সহায়তা করার মতো কোনো বাস্তব পদ্ধতিগত কারণ ছিল না। এখানে মার্কেটের ট্রেডারদের "বিষয়ভিত্তিক" মূল্যায়ন মূল ভূমিকা রেখেছে, যাদের অধিকাংশ মার্কেটের পরিস্থিতিকে ডলারের জন্য "ইতিবাচক" হিসেবে দেখেছেন।
উদাহরণস্বরূপ, যদিও নভেম্বর মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার 4.6%-এ পৌঁছেছে (যা ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের পর সর্বোচ্চ), যা নেতিবাচক সংকেত, তবুও ট্রেডাররা কর্মসংস্থান সৃষ্টি সংক্রান্ত প্রতিবেদনের দিকে বেশি মনোযোগ দিয়েছেন, যেটির ফলাফল প্রত্যাশার চেয়ে সামান্য ইতিবাচক (+64,000 পরিবর্তে +50,000) ছিল।
যদিও এই উপাদানটি তথাকথিত "ইতিবাচক" ছিল, তবুও মার্কেটে কোনো আশাবাদের তৈরি হয়নি। প্রথমেই, কর্মসংস্থানের সংখ্যা 64,000 বৃদ্ধি কিন্তু মার্কিন শ্রমবাজারের অস্থিতিশীলতা নির্দেশ করে। ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রে 212,000 এবং ডিসেম্বরে 307,000টি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছিল।
দ্বিতীয়ত, ব্যুরো অব লেবার স্ট্যাটিস্টিক্সের (BLS) প্রচলিত হিসাব কৌশলগুলো কর্মসংস্থানের প্রকৃত চিত্রকে অতিমূল্যায়ন করতে পারে। ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের মতে, সরকারিভাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ফলাফল হয়তো "অতিরিক্ত আশাবাদী", যার মাপকাঠি বিশেষ করে ৫০,০০০ থেকে ৬০,০০০ কর্মসংস্থান পর্যন্ত অতিরঞ্জিত হতে পারে। এর পেছনে রয়েছে ডিজিটালাইজেশন ও অটোমেশনের হিসাব না থাকা, এবং অস্থায়ী ও ফ্রিল্যান্স ভিত্তিক চাকরির যথাযথভাবে গণনা না হওয়া (যেমন: উবার বা আপওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ)।
এই ভিন্নতা বিবেচনায় ধরলে, প্রকৃত চিত্র অনেক বেশিই হতাশাজনক হতে পারে। কয়েকটি অনুমান অনুযায়ী, এবছরের বসন্ত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বাস্তবে প্রতিমাসে ১৫,০০০ থেকে ২০,০০০ কর্মসংস্থান হ্রাস পাচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে, নভেম্বরের নন ফার্ম পেরোল প্রতিবেদনের ফলাফল মার্কিন ডলারের জন্য সহায়ক নয়, কারণ এতে ডলার শক্তিশালী হওয়ার মতো কোনো পূর্বশর্ত নেই।
একই কথা নভেম্বর মাসের ভোক্তা মূল্য সূচক বা CPI প্রতিবেদনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, যা একই সপ্তাহে প্রকাশিত হয়েছিল। এতে দেখা যায় বার্ষিক ভিত্তিতে ভোক্তা মূল্যস্ফীতির হার কমে ২.৭%-এ এসেছে (অক্টোবরে ছিল ৩.০%), এবং মূল সূচক ২.৬%-এ নেমে এসেছে (গত মাসে ছিল ৩.০%)।
যদিও ট্রেডাররা এই প্রতিবেদনগুলোর ফলাফলের প্রতি তুলনামূলক সহনশীলভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে এবং টেকনিক্যাল ফ্যাক্টরের কথা বলেছে (যেমন সাময়িক শাটডাউনের প্রভাব), তথাপি নভেম্বরের CPI-এর কাঠামো আরও স্পষ্টভাবে দেখায় যে, মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির গতি ক্রমাগত ধীরগতির দিকে যাচ্ছে, বিশেষ করে মূল এবং চাহিদা-সংবেদনশীল উপাদানগুলোর মধ্যে।
সংস্থানির্ভর পরিষেবা খাত— যেমন: আবাসন, ভাড়া ও স্বাস্থ্যসেবা—যেগুলো স্থানীয় চাহিদা ও মজুরির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত, সেখানে মুদ্রাস্ফীতির বৃদ্ধির গতি হ্রাস পাওয়ার অর্থ হলো অর্থনীতির অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে যাচ্ছে।
এখানে আবারও ননফার্ম পেরোল প্রতিবেদনের দিকে নজর দেওয়া যায়, যেখানে ঘণ্টাপ্রতি আয় খুবই দুর্বল বৃদ্ধির সংকেত দিয়েছে—মাসিক ভিত্তিতে মাত্র ০.১% (যা ২০২৪ সালের জুলাইয়ের পর সর্বনিম্ন) এবং বাৎসরিক ভিত্তিতে ৩.৫% (২০২১ সালের মে মাসের পর সর্বনিম্ন)।
এই সবকিছু মিলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, মার্কেটের ট্রেডাররা গত সপ্তাহের প্রধান প্রতিবেদনগুলোর ফলাফল ভুলভাবে মার্কিন ডলারের পক্ষে ব্যাখা করেছে। আপাতত, শ্রমবাজার ও মূল্যস্ফীতির সূচকগুলো অপেক্ষাকৃত ফেডের মাঝারি "হকিশ বা কঠোর" অবস্থানকে সমর্থন করলেও, বাস্তবে এই প্রতিবেদনগুলোর ফলাফল "ডোভিশ বা নমনীয়" নীতির পক্ষেই দাঁড়ায়, সুতরাং মুদ্রানীতি নমনীয় করলেই পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে।
এই কারণেই EUR/USD পেয়ারের বিক্রেতারা মূল্যকে 1.16 লেভেলের দিকে নিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়েছে, যদিও গত সপ্তাহে এই পেয়ারের মূল্য নিম্নমুখী প্রবণতা বিরাজ করেছে। ঠিক একই কারণে, আজ EUR/USD পেয়ারের ক্রেতারা আবারও মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেয়েছে, যা সামগ্রিক মার্কিন ডলার দুর্বলতার প্রেক্ষিতে ঘটেছে।
মার্কিন গ্রীনব্যাকের জন্য মৌলিক প্রেক্ষাপট এখনো নেতিবাচক রয়েছে—CPI এবং NFP প্রতিবেদনের ফলাফলের বৈপরীত্য এখনো ডলারের মৌলিক ভিত্তিকে পুনর্নির্মাণে ব্যর্থ হয়েছে। সে কারণে দরপতনের সময় লং পজিশন ওপেন করা এখনো প্রাসঙ্গিক রয়ে গেছে।
টেকনিক্যাল দৃষ্টিকোণ থেকে, বর্তমানে দৈনিক চার্টে এই পেয়ারের মূল্য বোলিঙ্গার ব্যান্ডের মধ্যবর্তী ও উপরের লাইনের মধ্যে অবস্থান করছে, এবং ইচিমোকু সূচকের সব লাইনগুলোর উপরে রয়েছে, যেখানে ইতোমধ্যে বুলিশ "প্যারেড অব লাইন্স" সংকেত গঠিত হয়েছে। কারেক্টিভ বাউন্সগুলোকে কাজে লাগিয়ে এখন লং এন্ট্রি নেওয়ার সুযোগ রয়েছে, যেখানে মূল্যের 1.1750-এর (H4 টাইমফ্রেমে বোলিঙ্গার ব্যান্ডের উপরের লাইন) এবং 1.1800-এর (D1 টাইমফ্রেমে বোলিঙ্গার ব্যান্ডের উপরের লাইন) দিকে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করাযায়।