যুদ্ধবিরতি চুক্তি চলাকালীনও লেবাননের ওপর আক্রমণ করেছে ইসরায়েল। মধ্যপ্রাচ্যের এমন ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে গতকাল বেড়েছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম। এছাড়া চীনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও কারখানাগুলোর কার্যক্রম বৃদ্ধির তথ্য পাওয়া গেছে। এটিও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় ভূমিকা রেখেছে বলে জানিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্ট। গতকাল স্পট মার্কেটে এর দাম বেড়েছে ৭৫ সেন্ট বা ১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। প্রতি ব্যারেলের মূল্য স্থির হয়েছে ৭২ ডলার ৫৯ সেন্টে। অন্যদিকে জ্বালানি তেলের মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম গতকাল বেড়েছে ৭০ সেন্ট বা ১ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। ব্যারেলপ্রতি মূল্য পৌঁছেছে ৬৮ ডলার ৭০ সেন্টে।
ইউবিএস বিশ্লেষক জিওভান্নি স্টাউনোভো বলেন, ‘এতদিন পর্যন্ত চীনের চাহিদা নিয়ে উদ্বেগ অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজারকে প্রভাবিত করেছিল। দেশটিতে প্রত্যাশার তুলনায় ভালো অর্থনৈতিক ডাটা জ্বালানি তেলের দাম সমর্থন করছে।’
তিনি জানান, প্রণোদনা পদক্ষেপগুলো চীনের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। আগামী মাসগুলোয় এমন পদক্ষেপ দেশটির চাহিদা বাড়ায় প্রভাব ফেলবে।
একটি বেসরকারি সমীক্ষায় দেখা গেছে, চীনের কারখানাগুলোর কার্যক্রম নভেম্বরে পাঁচ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল। এতে চীনের কোম্পানিগুলোর আস্থা বেড়েছে। যদিও ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে থাকা বাণিজ্য বিরোধ বাড়তে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
এদিকে সিরিয়ার পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আইজির মার্কেট স্ট্র্যাটেজিস্ট ইয়েপ জুন রং বলেন, ‘এ অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে জ্বালানি তেলের বাজারে প্রভাব পড়তে পারে।’
প্রসঙ্গত, ইসরায়েল ও লেবাননের মধ্যে বুধবার একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়েছিল। কিন্তু উভয় পক্ষ একে অন্যকে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলের দুটি আক্রমণে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। অন্যদিকে সিরিয়ায় বেড়েছে বিমান হামলা।
গত সপ্তাহে ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ সংঘাতে জ্বালানি তেলের সরবরাহ কমার আশঙ্কা হ্রাস ও আগামী বছর জ্বালানি তেলের উদ্বৃত্ত বেশি হতে পারে, এমন পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল। এ কারণে সে সময় ব্রেন্ট ও ডব্লিউটিআইয়ের দাম কমেছিল ৩ শতাংশের বেশি।
এদিকে গত শুক্রবার রয়টার্স জ্বালানি তেলের মাসভিত্তিক মূল্য জরিপে জানায়, আগামী বছর ব্রেন্টের দাম গড়ে ব্যারেলপ্রতি ৭৪ ডলার ৫৩ সেন্ট হতে পারে।
অন্যদিকে এশিয়ার দেশগুলোয় জ্বালানি তেল আমদানি গত মাসে কিছুটা বেড়েছে। এলএসইজির তথ্যানুযায়ী, নভেম্বরে এশিয়ায় অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি ২ কোটি ৬৪ লাখ ২০ হাজার ব্যারেল হতে পারে, অক্টোবরে যা ছিল দৈনিক গড়ে ২ কোটি ৬১ লাখ ১০ হাজার ব্যারেল।