স্থবির অর্থনীতিতে গতি ফেরাতে একাধিক পদক্ষেপ নিচ্ছে চীন। বেইজিংয়ের এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে আগামী বছর বাজেট ঘাটতি বেড়ে দাঁড়াবে জিডিপির ৪ শতাংশ, যা দেশটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ। একই সময় জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যও প্রায় ৫ শতাংশ বজায় রাখা হবে। গত সপ্তাহে এক বৈঠকে চীনের নেতারা এ বিষয়ে একমত হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। চলতি বছর প্রাথমিকভাবে ৩ শতাংশ বাজেট ঘাটতির লক্ষ্য নেয়া হয়েছিল। চীনের নীতিনির্ধারণী ফোরাম পলিট ব্যুরোর চলতি মাসের বৈঠক ও গত সপ্তাহের সেন্ট্রাল ইকোনমিক ওয়ার্ক কনফারেন্সে (সিইডব্লিউসি) ‘আরো সক্রিয় আর্থিক নীতি’র কথা বলা হয়েছিল। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা না হলেও নতুন বাজেট ঘাটতির পরিকল্পনা সেসব আর্থিক নীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।
গোপনীয়তা বজায় রাখার শর্তে একটি সূত্র জানিয়েছে, জিডিপির অতিরিক্ত এক শতাংশীয় পয়েন্ট প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি ইউয়ান বা প্রায় ১৭ হাজার ৯৪০ কোটি ডলার ব্যয়ের সমতুল্য। এছাড়া বাজেটের বাইরে বিশেষ বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে আর্থিক প্রণোদনার জন্য অর্থ সংগ্রহ করা হবে।
সাধারণত এ ধরনের সিদ্ধান্ত মার্চের আইনসভার বার্ষিক অধিবেশন চলাকালে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত হয় না। তবে অধিবেশনের আগে এ নীতিগুলো পরিবর্তন হতে পারে। এ বিষয়ে চীনের সরকারি কোনো ভাষ্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানোর কথা বলছেন। ফলে অবশ্যম্ভাবীভাবে মার্কিন-চীন বাণিজ্য যুদ্ধ তীব্র হবে। এমন প্রেক্ষাপটে বাজেট ঘাটতি বাড়ানোর পরিকল্পনায় বাড়তি শুল্কের চাপ মোকাবেলার প্রস্তুতিও যুক্ত রয়েছে।
দেশটির একটি সরকারি সংবাদমাধ্যমে সংক্ষিপ্তভাবে সিইডব্লিউসির বৈঠক তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখা, বাজেট ঘাটতির অনুপাত বৃদ্ধি ও আগামী বছর আরো সরকারি ঋণ ইস্যু করা প্রয়োজন। তবে কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি।
গত মাসে সরকারের উপদেষ্টারাও প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অপরিবর্তিত রাখার সুপারিশ করেছিলেন। অর্থাৎ পূর্ব ঘোষিত ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য থেকে সরে আসছে না চীন।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চলতি বছর রিয়েল এস্টেট খাতের মন্দাদশা, স্থানীয় সরকারের উচ্চ ঋণ ও ভোক্তা চাহিদা কমার কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে। এত দিন রফতানি খাতেই কিছুটা প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপ শুরু করলে তা-ও ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।
চীন প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে ৪০ হাজার কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণায় দেশটির শিল্প খাতে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অনেক কোম্পানি শুল্ক থেকে বাঁচতে উৎপাদন কেন্দ্র অন্য দেশে স্থানান্তর করছে।
রফতানিকারকরা বলছেন, বাড়তি শুল্ক মুনাফাকে আরো সংকুচিত করবে। ফলে চাকরি, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শুল্কের কারণে চীনের শিল্প অতিরিক্ত সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে ও মুদ্রাস্ফীতির চাপ বাড়বে।
সিইডব্লিউসি ও পলিট ব্যুরোর বৈঠকের সারাংশে আরো বলা হয়, চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক যথেষ্ট শিথিল মুদ্রানীতির অবস্থান গ্রহণ করবে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সুদহার আরো হ্রাস ও তারল্য বৃদ্ধি সম্পর্কে প্রত্যাশা বেড়েছে।
গত ১৪ বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে অবস্থান গ্রহণ করেছিল, তাতে গৃহস্থালি ও কোম্পানিসহ সরকারের ঋণ পাঁচ গুণ বেড়েছে। একই সময় অর্থনীতির আকার বেড়েছে তিন গুণ।