বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে সাইবার নিরাপত্তা জোরদারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে। তবে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের ৫১ শতাংশ ব্যাংক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারে ‘ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা ও নৈতিক উদ্বেগকে’ গুরুতর প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। গবেষণা অনুযায়ী, গ্রাহকের তথ্য সুরক্ষা, অ্যালগরিদমিক ন্যায্যতা এবং ডাটা ব্যবহারে স্বচ্ছতার অভাব ব্যাংকগুলোর মধ্যে সতর্কতা তৈরি করছে।
গতকাল রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম মিলনায়তনে আয়োজিত ‘ব্যাংকিং সাইবার নিরাপত্তায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা: বাংলাদেশ প্রসঙ্গ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। বিআইবিএমের অধ্যাপক শিহাব উদ্দিন খান গবেষণাটি উপস্থাপন করেন।
জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এআই বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় বাধা হলো উচ্চ খরচ। প্রায় তিন-চতুর্থাংশ বা ৭৩ শতাংশ ব্যাংক কর্মকর্তা এ খরচকে ‘খুব গুরুত্বপূর্ণ’ (৩৮ শতাংশ) ‘অথবা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ (৩৫ শতাংশ) বলে মনে করেন। পাশাপাশি এআই প্রযুক্তির জন্য বিশেষজ্ঞ ও দক্ষ কর্মীর অভাবও একটি বড় সমস্যা। মোট ৪৮ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, এআই দক্ষতা বা এক্সপার্টাইজের ঘাটতি খুব গুরুত্বপূর্ণ (২৭ শতাংশ) বা ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ (২১ শতাংশ)।
এআই অবকাঠামোগত প্রস্তুতির দিক থেকেও ব্যাংকগুলো এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। জরিপে দেখা গেছে, ৬৯ শতাংশ ব্যাংক নিজেদের ‘আংশিক প্রস্তুত’ বলে মত দিয়েছে। মাত্র ১১ শতাংশ সম্পূর্ণ প্রস্তুত বলে জানিয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় কৃত্রিম বুদ্ধিমতা গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো বিকাশমান পর্যায়ে রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭৩ শতাংশ ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের ব্যবস্থাপনা এরই মধ্যে এআই বাস্তবায়ন নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করেছে। ৭০ শতাংশ ব্যাংক আগামী কয়েক বছরে এআই সক্ষমতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে। গবেষকরা মনে করেন, ডাটা প্রাইভেসি ও নৈতিক ঝুঁকির আশঙ্কা দূর করতে সক্ষম হলে ব্যাংক খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভবিষ্যতের সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থার সবচেয়ে কার্যকর স্তম্ভ হয়ে উঠবে।
জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যাংকগুলোর একটি বিশাল অংশ—প্রায় ৬৮ শতাংশ এআই অ্যাডপশনের জন্য কোনো আনুষ্ঠানিক নীতি বা নির্দেশিকা নেই বলে জানিয়েছে। মাত্র ৩২ শতাংশ ব্যাংকের সুনির্দিষ্ট নীতি রয়েছে। এআই গ্রহণের ক্ষেত্রে মাত্র ১১ শতাংশ ব্যাংক নিজেদের সম্পূর্ণ প্রস্তুত বলে দাবি করেছে। ব্যাংক খাতে দুর্যোগ পুনরুদ্ধার পরিকল্পনায় এআইয়ের ব্যবহার প্রায় নেই ৯৫ শতাংশ ব্যাংকের।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার বলেন, ‘ব্যাংক খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার এখন আর বিলাসিতা নয়, বরং একটি অপরিহার্য নিরাপত্তা কৌশল। এআই প্রযুক্তি সাইবার হুমকি শনাক্ত, বিশ্লেষণ ও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সহায়তা করে, যা ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করে তোলে।’