মার্কিন শুল্কের জবাবে চীনের পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণের খবরের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় সূচকের ফিউচার হ্রাস পেয়েছে। Euro Stoxx 50 ফিউচার 0.1% কমেছে, যখন S&P 500 এবং নাসডাক 100 ফিউচার 0.2% থেকে 0.3% হ্রাস পেয়েছে। মার্কিন ডলার দুর্বল হয়েছে, কারণ বিনিয়োগকারীরা অনুমান করছে যে চীনের পাল্টা শুল্ক আরোপের ফলে বাণিজ্য যুদ্ধে ব্যাপক নেতিবাচক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
শি জিনপিং প্রশাসন দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের 10% শুল্কের পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ করেছে। পাশাপাশি, চীন গুগলের বিরুদ্ধে অ্যান্টিট্রাস্ট তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে, যেখানে বাজার নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত আইনের সম্ভাব্য লঙ্ঘনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। চীনের স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ফর মার্কেট রেগুলেশন থেকে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
চীন মার্কিন কয়লা এবং তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (LNG) রপ্তানির ওপর 15% শুল্ক আরোপ করেছে। পাশাপাশি, তেল ও কৃষি যন্ত্রপাতির ওপর 10% শুল্ক বসানো হয়েছে।
মার্কিন অর্থনীতির মূল খাতগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করে এই পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়েছে, যা মার্কিন উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। শুল্ক বৃদ্ধির ফলে ভোক্তা পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি হতে পারে এবং প্রভাবিত শিল্পগুলোর চাকরি হারানোর ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। তদুপরি, গুগলের বিরুদ্ধে তদন্ত, যা ইতোমধ্যে বাজার আধিপত্য নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে, প্রযুক্তি খাতে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। এটি স্পষ্ট যে বেইজিং অভ্যন্তরীণ বাজার এবং স্থানীয় কোম্পানিগুলোকে সুরক্ষা দিতে চায়, যা প্রযুক্তি খাতে নতুন আইনি ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে।
চীনের প্রতিক্রিয়াগুলো এমনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে তাদের নিজস্ব অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা না লাগে, তবে একাধিক খাতে প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়। যদিও ট্রেডারদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া অপেক্ষাকৃত দুর্বল ছিল—বিশেষ করে ট্রাম্প যখন চীনা প্রেসিডেন্টের সাথে আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন—তারপরও ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের ওপর চাপ বজায় রয়েছে।
এছাড়াও, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কানাডা এবং মেক্সিকোকে এক মাসের শুল্ক অব্যাহতি দিয়েছেন, যেখানে 25% শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়েছে। এই বিলম্বগুলো আরও দৃঢ়ভাবে ইঙ্গিত দেয় যে ট্রাম্প শুল্ককে আলোচনার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন, তবে তিনি আমেরিকান অর্থনীতিকে সরাসরি ক্ষতির সম্মুখীন করতে চান না।
এই পরিস্থিতির পর, অনেক বিশ্লেষক ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের ক্ষেত্রে মাঝারি-মেয়াদী বুলিশ কৌশলে ফিরে গেছেন, যদিও স্বল্প-মেয়াদী পূর্বাভাস অনিশ্চয়তার কারণে কিছুটা অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
বেইজিংয়ের পদক্ষেপের সরাসরি প্রতিক্রিয়ায় West Texas Intermediate (WTI) অপরিশোধিত তেলের দাম 1.9% হ্রাস পেয়েছে, পাশাপাশি প্রাকৃতিক গ্যাসের দামও কমেছে। হংকং-এ তালিকাভুক্ত চীনা স্টকগুলো 3% বৃদ্ধি পেয়েছে।
কর্পোরেট খাতের আপডেট:
মঙ্গলবার UBS Group AG-এর শেয়ারের দর বৃদ্ধি পেয়েছে, কারণ এই সুইস ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান $3 বিলিয়ন মূল্যের শেয়ার বাইব্যাকের ঘোষণা দিয়েছে। BNP Paribas-এর শেয়ারের মূ্ল্যও বেড়েছে, কারণ প্রতিষ্ঠানটি ট্রেডিং থেকে আয় বৃদ্ধির খবর প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে, Vodafone Group Plc-এর শেয়ারের মূল্য কমেছে, কারণ কোম্পানিটি জার্মানিতে বাজার পরিস্থিতি অবনতির বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে।
ইউয়ান মার্কিন-চীন বাণিজ্য যুদ্ধের মধ্যে চীনা অর্থনৈতিক নীতির প্রভাবের কারণে অব্যাহতভাবে দুর্বল হচ্ছে। এদিকে, শিকাগো ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অস্টান গুলসবি উল্লেখ করেছেন যে ট্রাম্প প্রশাসনের কারণে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা বিবেচনায় রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সুদের হার কমানোর বিষয়ে সতর্কভাবে এগিয়ে যেতে হবে।
আজ, ফেডারেল রিজার্ভের প্রতিনিধিদের মধ্যে রাফায়েল বস্টিক, মেরি ডালি এবং ফিলিপ জেফারসনের বক্তব্য প্রত্যাশিত রয়েছে।
S&P 500-এর টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ:
S&P 500-এর এখনো শক্তিশালী চাহিদা রয়েছে। আজ ক্রেতাদের প্রধান লক্ষ্য হবে নিকটতম রেজিস্ট্যান্স $5986 ব্রেক করা। সূচকটির দর এই লেভেল অতিক্রম করলে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বজায় থাকবে এবং $6003 পর্যন্ত মূল্য বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হবে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মূল্য $6024 লেভেলে ধরে রাখা, যা ক্রেতাদের নিয়ন্ত্রণ আরও শক্তিশালী করবে।
যদি ঝুঁকি গ্রহণের মনোভাব কমে যাওয়ার কারণে মার্কেটের সূচকটির দর নিম্নমুখী হয়, তাহলে ক্রেতাদের অবশ্যই $5967 লেভেলের রেজিস্ট্যান্সে সক্রিয় হতে হবে। সূচকটির দঢ় এই লেভেল ব্রেক করলে এটি দ্রুত $5951 এবং সম্ভবত $5933 পর্যন্ত নেমে যেতে পারে।