নতুন সপ্তাহটি EUR/USD ট্রেডারদের জন্য তথ্যবহুল হতে চলেছে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, আগামী 6–7 মে নির্ধারিত ফেডারেল রিজার্ভের সভা, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভবিষ্যৎ নীতিমালার রূপরেখা নির্ধারণ করবে।
যদিও অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডারে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশের কথা নেই, তবুও FOMC-এর বৈঠক এই সপ্তাহে মনোযোগের মূল কেন্দ্রবিন্দু হতে যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের সমালোচনা করেছেন—ফলে এটি দেখা গুরুত্বপূর্ণ হবে যে ফেড তাদের অবস্থান বা মনোভাব কতটা পরিবর্তন করে, বিশেষ করে নীতিগত শিথিলতার সময়সূচি ও গতি নিয়ে। ট্রাম্পের মন্তব্য বাদ দিলেও, ফেড এখন একটি কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে: একদিকে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির প্রত্যাশা করা হচ্ছে, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি হ্রাস পাচ্ছে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের CPI বা ভোক্তা মূল্য সূচক কমেছে: হেডলাইন ইনফ্লেশন 2.4%-এ পৌঁছেছে, এবং কোর ইনফ্লেশন 2.8%-এ নেমে এসেছে। তবে এটি মূলত শুল্ক আরোপের আগের পরিস্থিতিকে প্রতিফলিত করে, তাই বর্তমানে এই প্রতিবেদনের গুরুত্ব অনেকটাই কম। আরও সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে: ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান থেকে প্রকাশিত জরিপে দেখা যাচ্ছে, ১ বছরের মুদ্রাস্ফীতির প্রত্যাশা 6.5%-এ পৌএছে—যা ১৯৮১ সালের পর সর্বোচ্চ। এদিকে, প্রথম প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হ্রাস পেয়ে 0.3%-এ পৌঁছেছে, ভোক্তা আস্থা সূচক 86.0-তে নেমে এসেছে, এবং ম্যানুফ্যাকচারিং বা উৎপাদন সংক্রান্ত PMI কমে দাঁড়িয়েছে 48.7-এ।
এপ্রিলের ননফার্ম পেরোল প্রতিবেদনের ফলাফল মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে: কর্মসংস্থানের সংখ্যা ছিল 177,000—যদিও 133,000 পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি, তবে এটি পরপর চতুর্থ মাস যেখানে সূচকটি 200,000-এর নিচে রয়েছে। এছাড়া, দুই সপ্তাহ ধরে বেকার ভাতা আবেদনের সংখ্যা বাড়ছে এবং সর্বশেষ সপ্তাহে তা 241,000-এ দাঁড়িয়েছে—যা ফেব্রুয়ারির পর সর্বোচ্চ।
এপ্রিলে নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণার সময় ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল সতর্ক করেছিলেন যে, এই পদক্ষেপ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে মন্থর করবে, বেকারত্ব বাড়াবে এবং মুদ্রাস্ফীতিকে ত্বরান্বিত করবে—এবং তার সেই পূর্বাভাস ইতোমধ্যে আংশিকভাবে সত্য হয়েছে। তবে পাওয়েল এটাও বলেছিলেন যে, ফেড তাড়াহুড়ো করে সুদের হার কমাবে না।
আমার দৃষ্টিতে, ফেড মে মাসের বৈঠকে নীতিগত অবস্থান অপরিবর্তিত রাখবে এবং সতর্ক অবস্থান বজায় রাখবে। তারা অর্থনৈতিক মন্দার ঝুঁকি বাদ দিয়ে মুদ্রাস্ফীতিকে বেশি গুরুত্ব দেবে। কারণ নতুন শুল্ক আরোপের ফলে আমদানি-নির্ভর অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে। যেহেতু চীনের সাথে এখনো কোনো বাণিজ্য আলোচনা শুরু হয়নি, তাই ফেড মে বা জুনে সুদের হার কমাবে না বলেই মনে হচ্ছে।
এই প্রত্যাশা মার্কেটের ট্রেডারদের মনোভাবের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। CME FedWatch অনুযায়ী, মে মাসে ফেডের সুদের হার অপরিবর্তিত রাখার সম্ভাবনা 97%, আর জুনে সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা 35%।
ফেড যদি এই পূর্বানুমান অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তবে ডলার খুব বেশি প্রভাবিত হবে না। একদিকে এই সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে মূল্যায়ন করা হয়ে গেছে, অন্যদিকে ট্রেডাররা ফেডের বিবৃতির শব্দচয়ন এবং পাওয়েলের বক্তব্যের ওপর দৃষ্টি দেবে। যদি ফেড কোনো নেতিবাচক পূর্বাভাস দেয়, তবে ডলারের ওপর চাপ বাড়তে পারে।
মে মাসের ফেডের বৈঠক হবে এ সপ্তাহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারিত ইভেন্ট। তবে এখানে 'নির্ধারিত' শব্দটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ মার্কেটের ট্রেডাররা এখন এমন এক ইভেন্টের অপেক্ষা করছে, যা আনুষ্ঠানিকভাবে নির্ধারিত নয়—কিন্তু প্রত্যাশিত: যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা।
ট্রাম্প গত সপ্তাহে আলোচনায় বসার অভিপ্রায়ের ইঙ্গিত দিয়েছেন। অপরদিকে, চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব মূল্যায়ন করছে। যদি আগামী সপ্তাহেই আলোচনা শুরু হয়, তবে আলোচনার ফলাফল প্রকাশের আগে থেকেই মার্কেটে একটি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে। যদিও পরবর্তী সময়ে আলোচনা অচলাবস্থায় গেলে প্রবণতা উল্টে যেতে পারে (বিশেষত যদি আলোচনা না আগায় বা অচলাবস্থা দেখা যায়), তবুও প্রাথমিকভাবে ডলার শক্তিশালী হতে পারে।
তবে, যদি আলোচনা শুরু না হয়, তবে ডলারের ওপর চাপ বাড়তে পারে, এবং তখন ফেডের সিদ্ধান্তই হবে এ সপ্তাহের মূল অনুঘটক।
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ: EUR/USD
গত সপ্তাহে EUR/USD পেয়ারের মূল্য 1.1260 সাপোর্ট লেভেল টেস্ট করার চেষ্টা করেছিল (4H চার্টে বোলিঙ্গার ব্যান্ডসের নিচের লাইন), তবে মূল্য 1.1300 লেভেলে থাকা অবস্থায় গত সপ্তাহের ট্রেডিং শেষ হয়েছে—টানা চতুর্থ শুক্রবার মূল্য এই রেঞ্জে থাকা অবস্থায় ট্রেডিং ক্লোজ হয়েছে। যদি বিক্রেতারা 1.1260-এর নিচে কনসোলিডেশন ঘটাতে পারে, তবে মূল্য 1.1200-এর দিকে যেতে পারে। অন্যথায়, পেয়ারটি 1.1300–1.1400 রেঞ্জে ট্রেড করতে পারে।