যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্বকারী দেশ ইসরায়েল এবং ইরানের মধ্যে মিসাইল সংঘাত অব্যাহত রয়েছে। গতকাল কানাডার G7 সম্মেলন থেকে হঠাৎ করে মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রস্থান এই জল্পনা সৃষ্টি হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল–ইরান সংঘাতে আরও সরাসরিভাবে জড়িয়ে পড়তে পারে। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো জোর দিয়ে বলছেন, এই সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান হতে হবে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কে. লেভিট সোমবার জানান, ট্রাম্প "অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার জন্য" ওয়াশিংটনে ফিরে গেছেন, তবে পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই ব্যাখ্যা সংশোধন করে সরাসরি মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির সঙ্গে তার প্রস্থানের সম্পর্ক স্থাপন করেন। মার্কেটের অনেক ট্রেডার এটিকে সংকটের আরও গভীরতর পর্যায়ে প্রবেশের ইঙ্গিত হিসেবে দেখেছে, যেখানে উভয় পক্ষ একে অপরের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে আঘাত হানছে, ফলে জল্পনা বেড়েছে যে যুক্তরাষ্ট্র তাদের আঞ্চলিক সহযোগীকে আরও জোরালোভাবে সহায়তা করতে পারে। অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজেকে নিরপেক্ষ এবং দূরে রাখার কৌশল অবলম্বন করছেন বলে দাবি করছেন, যা ক্রমবর্ধমান অনিশ্চয়তার নেতিবাচক প্রভাব আরও বাড়িয়ে তুলছে।
এই পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে, যেসব জ্বালানিখাতের শেয়ার এবং অপরিশোধিত তেলের মূল্যের পূর্বে কিছুটা কারেকশন হয়েছে, তা আবার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। সামরিক সংঘাত দীর্ঘায়িত হলে এবং তীব্রতা আরও বাড়লে—বিশেষত যদি তেহরান যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত হানে বা উপকূলের সমুদ্রপথ অবরোধ করে (বিশেষ করে যদি পশ্চিমা শক্তিগুলো সরাসরি জড়িয়ে পড়ে)—তবে তেলের দাম ব্যারেল প্রতি $100, $150 বা তার চেয়েও বেশি হয়ে যেতে পারে। এটি পশ্চিমা অর্থনীতি এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যের উপর তীব্রভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি ফেডারেল রিজার্ভকে আবার সুদের হার কমাতে বাধ্য করতে পারে, যা ইতোমধ্যেই ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতিকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে এবং মার্কিন অর্থনীতিকে 1970–80 এর দশকের দ্বিঅঙ্কের মূল্যস্ফীতির যুগে ফিরিয়ে নিতে পারে।
এই ধরনের পরিস্থিতিতে, মার্কিন ডলার "নিরাপদ বিনিয়োগ" হিসেবে অবস্থান হারাতে পারে এবং ডলার-নির্ভর অ্যাসেটে বিনিয়োগের প্রতি আগ্রহ কমে আসবে। সামনের সারিতে থাকবে বিশাল মার্কিন জাতীয় ঋণ, যা ওয়াশিংটনের পক্ষে বিদেশি ঋণদাতাদের ঋণের অর্থ ফেরত দেওয়া প্রায় অসম্ভব করে তুলবে।
এই প্রেক্ষাপটে বলা যায়, মধ্যপ্রাচ্য সংকট নিরসনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে বিশ্বের আরও অনেক দেশ এতে জড়িয়ে পড়তে পারে এবং এর পরিণতিতে একটি নতুন বৈশ্বিক যুদ্ধ শুরু হতে পারে—যার ফলাফল হতে পারে চরম ধ্বংসাত্মক।
আজ মার্কেট থেকে কী প্রত্যাশা করা যায়?
আজ বিনিয়োগকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের রিটেইল সেলস বা খুচরা বিক্রয় প্রতিবেদনের দিকে নজর রাখছে। তবে, এটা মনে রাখা জরুরি যে মার্কেটের ট্রেডারদের পুরো মনোযোগ এখনো মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির দিকে কেন্দ্রীভূত রয়েছে। সেখানে চলমান ঘটনাবলিই ঝুঁকির মাত্রা এবং অ্যাসেট ফ্লো নির্ধারণ করছে। আপাতত বিনিয়োগকারীরা এখনো আশা করছে যে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব, যার ফলে এখন পর্যন্ত স্বর্ণ ও তেলের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়েনি। স্টক, ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং মার্কিন ডলার এখনো সংকুচিত রেঞ্জে কনসোলিডেশন করছে। এই পরিস্থিতি সম্ভবত ফেডের আগামীকালকের নীতিনির্ধারণী সংক্রান্ত বৈঠকের সিদ্ধান্ত আসার পরেও অব্যাহত থাকবে, যেহেতু জেরোম পাওয়েলের কাছ থেকে অভ্যন্তরীণ বা বহিঃর্বিশ্ব পরিস্থিতি সংক্রান্ত অবস্থানে নতুন কোনো বার্তা আসার সম্ভাবনা নেই।
আজকের পূর্বাভাস:
বিটকয়েন
BTC এখনও প্রশস্ত কিন্তু ধীরে ধীরে নিম্নমুখী রেঞ্জে ট্রেড করছে। এখন মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনার কারণে মার্কেটে আরও বাড়তি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে, যা ক্রিপ্টোর চাহিদার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। বিটকয়েনের আরও দরপতন হতে দেখা যেতে পারে। এটির মূল্য $106,733 লেভেল ব্রেক করে নিচের দিকে গেলে বিটকয়েনের মূল্য $104,129 এবং সম্ভবত $100,350 পর্যন্ত নামতে পারে, যা এই স্বল্পমেয়াদি ট্রেন্ডলাইনের নিম্ন সীমানা। বিটকয়েন বিক্রি করার জন্য সম্ভাব্য লেভেল: $106,504.80।
EUR/USD
এই পেয়ারের মূল্য দ্রুতগতিতে ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। ইউরোকে ডলারের বিকল্প হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং এটি ইউরোজোনের অর্থনীতির শক্তিশালী অবস্থার কারণে নয়, বরং মার্কিন ডলারের ওপর আস্থা হারানোর কারণে হয়েছে—বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার শঙ্কায়। মার্কেটের ট্রেডাররা এখন "ডলার মানেই নিরাপদ বিনিয়োগ" —এই দীর্ঘস্থায়ী ধারণা থেকে সরে এসেছে। তবে, যদি ফেড আর্থিক নীতিমালাকে অপরিবর্তিত রাখে, তাহলে মুনাফা গ্রহণের প্রবণতা শুরু হতে পারে, যা EUR/USD-এর মূল্যের কারেকশন ঘটাতে পারে। 1.1540 লেভেলের নিচে দরপতন হলে, তা 1.1420 পর্যন্ত নিম্নমুখী মুভমেন্ট শুরু করতে পারে। এই পেয়ার বিক্রি করার জন্য মূল লেভেল: 1.1535।