শুক্রবারের ট্রেডের বিশ্লেষণ
EUR/USD পেয়ারের 1H চার্ট
শুক্রবার EUR/USD কারেন্সি পেয়ারের মূল্যের নিম্নমুখী মুভমেন্টের সমাপ্তি ঘটেছে। আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী, ডলারের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা খুবই স্বল্পস্থায়ী ছিল। মধ্যমেয়াদেও মার্কেটের ট্রেডাররা এখনও মার্কিন মুদ্রা কেনার মতো কোনো যথেষ্ট কারণ দেখতে পাচ্ছে না। ট্রেডাররা মাঝে মাঝে ডলারকে সমর্থনকারী যেকোনো একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার প্রতি প্রতিক্রিয়া জানায়, ফলে মাঝে মধ্যে ডলারের মূল্যের কারেকশন দেখা যায়।
তবে এই সকল কারেকশন এখনও খুব দুর্বল পর্যায়ে রয়ে গেছে। গত পাঁচ মাস ধরে একই অবস্থা বিরাজ করছে: হয় ইউরোর দর বাড়ছে, নয়তো একই জায়গায় অবস্থান করছে। শুক্রবার কোনো উল্লেখযোগ্য সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রতিবেদন, মৌলিক প্রেক্ষাপট বা গুরুত্বপূর্ণ খবর প্রকাশিত হয়নি। একমাত্র উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে বেঁধে দেওয়া ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা (যার সময়সীমা অনেক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল)। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, তিনি সিদ্ধান্ত নিতে আরও দুই সপ্তাহ সময় নেবেন, আর অধিকাংশ বিশ্লেষক সঙ্গে সঙ্গে ধরে নিয়েছেন, ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ বাধাতে চান না, তবে একইসঙ্গে নিজেকে শান্তির দূত হিসেবে উপস্থাপন করতে চান। এর ফলে, আমরা ইরানের উদ্দেশ্যে একের পর এক ফাঁকা হুমকি শুনেছি, যেগুলোর বাস্তবায়ন হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। সম্ভবত এই কারণেই ডলার দুর্বল হয়েছে, কারণ নতুন সংঘাতের সম্ভাবনা পরবর্তী দুই সপ্তাহের জন্য প্রশমিত হয়েছে।
EUR/USD পেয়ারের 5M চার্ট
৫ মিনিটের টাইমফ্রেমে শুক্রবার এই পেয়ারের মোট তিনটি ট্রেডিং সিগনাল গঠিত হয়, তবে পুরো দিনজুড়ে এই পেয়ারের মূল্য সাইডওয়েজ রেঞ্জে ছিল। এই পেয়ারের মূল্য দুবার 1.1527 লেভেল থেকে রিবাউন্ড করে এবং একবার সেই লেভেল ব্রেক করে ফেলে। তিন ক্ষেত্রেই এই পেয়ারের মূল্য নির্ধারিত দিকে ২৫ পিপসের বেশি মুভমেন্ট প্রদর্শন করেনি। দৈনিক মোট অস্থিরতার পরিমাণ ছিল ৫২ পিপস।
সোমবারের ট্রেডিংয়ের কৌশল:
ঘণ্টাভিত্তিক চার্টে EUR/USD পেয়ারের মূল্যের সেই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বজায় রয়েছে, যা ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বায়িত্ব নেয়ার পর শুরু হয়েছিল এবং সম্ভবত পরবর্তী প্রেসিডেন্ট না আসা পর্যন্ত এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। শুধুমাত্র ট্রাম্প এখনও মার্কিন প্রেসিডেন্ট, এই বিষয়টিই ডলারের নিয়মিত দরপতন ঘটানোর জন্য যথেষ্ট। এমনকি ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাতের তীব্রতা বাড়লেও মার্কিন মুদ্রার সামগ্রিক অবস্থানে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায়নি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এখনও হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন, আল্টিমেটামের ঘোষণা করেন এবং নতুন করে শুল্ক আরোপ বা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। তাই ট্রেডাররা প্রতিদিন ডলার বিক্রি না করলেও, অন্তত মধ্যমেয়াদে এটি কেনার কথা ভাবছে না।
সোমবার EUR/USD পেয়ারের মূল্য বাড়তে পারে কারণ ডিসেন্ডিং ট্রেন্ডলাইন ইতোমধ্যে ব্রেক হয়ে গেছে এবং ইতোমধ্যে অনুকূলজনক সকল কারণ ডলারের মূল্যের উপর প্রভাব বিস্তার করে ফেলেছে।
৫ মিনিটের টাইমফ্রেমে পর্যবেক্ষণযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ লেভেলগুলো হলো: 1.1132–1.1140, 1.1198–1.1218, 1.1267–1.1292, 1.1354–1.1363, 1.1413–1.1424, 1.1474–1.1481, 1.1527, 1.1561–1.1571, 1.1609, 1.1666, 1.1704, 1.1802। সোমবার জার্মানি, ইউরোজোন এবং যুক্তরাষ্ট্রে জুন মাসের পরিষেবা ও উৎপাদন খাতের PMI সূচক প্রকাশিত হবে। যদিও এই প্রতিবেদনগুলো খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়, তবে এগুলোর ফলাফল প্রভাবে মার্কেটে তাৎক্ষণিকভাবে সামান্য প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।
ট্রেডিং সিস্টেমের মূল নিয়মাবলী:
- সিগনালের শক্তি: যত দ্রুত একটি সিগন্যাল (রিবাউন্ড বা ব্রেকআউট) গঠিত হয়, সিগন্যালটিকে ততই শক্তিশালী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
- ভুল সিগন্যাল: যদি কোনো লেভেলের কাছে দুই বা ততোধিক ভুল ট্রেডিং সিগনাল গঠিত হয়, তাহলে ঐ লেভেল থেকে প্রাপ্ত পরবর্তী সিগন্যালগুলোকে উপেক্ষা করা উচিত।
- ফ্ল্যাট মার্কেট: যখন মার্কেটে ফ্ল্যাট মুভমেন্ট দেখা যায়, তখন পেয়ারগুলোতে একাধিক ভুল সিগন্যাল গঠিত হতে পারে অথবা কোনো সিগন্যাল না-ও গঠিত হতে পারে। মার্কেটে ফ্ল্যাট মুভমেন্টের ইঙ্গিত পাওয়ামাত্র ট্রেডিং বন্ধ করে দেওয়াই ভালো।
- ট্রেডিংয়ের সময়সূচী: ইউরোপীয় সেশন শুরু থেকে মার্কিন সেশনের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ট্রেড ওপেন করুন এবং এরপর সকল ট্রেড ম্যানুয়ালি ক্লোজ করে ফেলুন।
- MACD সিগন্যাল: ঘণ্টাভিত্তিক টাইমফ্রেমে কেবল সেই MACD সিগন্যালগুলোর ওপর ভিত্তি করে ট্রেড করুন, যেগুলো উচ্চ মাত্রার অস্থিরতা এবং ট্রেন্ডলাইন বা ট্রেন্ড চ্যানেলের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া প্রবণতা হিসেবে বিবেচিত।
- নিকটতম লেভেল: যদি দুটি লেভেল খুব কাছাকাছি (৫–২০ পিপসের মধ্যে) অবস্থিত হয়, তাহলে সেগুলোকে সাপোর্ট বা রেজিস্ট্যান্স জোন হিসেবে বিবেচনা করুন।
- স্টপ লস: মূল্য কাঙ্ক্ষিত দিকের দিকে ১৫ পিপস মুভমেন্ট প্রদর্শন করলে, ব্রেকইভেনে স্টপ লস সেট করুন। এতে করে ভুল সিগন্যালের কারণে লোকসানের ঝুঁকি কমে আসে।
চার্টের মূল উপাদান:
সাপোর্ট ও রেজিস্ট্যান্স লেভেল: এই লেভেলগুলো পজিশন ওপেন বা ক্লোজ করার ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং টেক প্রফিট সেট করার ক্ষেত্রেও উপযোগী।
লাল লাইনসমূহ: চ্যানেল বা ট্রেন্ডলাইন, যা বর্তমান প্রবণতা এবং ট্রেডের সম্ভাব্য দিকনির্দেশনা প্রদান করে।
MACD ইনডিকেটর (14,22,3): হিস্টোগ্রাম এবং সিগন্যাল লাইন বিশ্লেষণের জন্য একটি অতিরিক্ত ট্রেডিং সিগন্যালের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট ও প্রতিবেদন: এই তথ্যগুলো অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডারে পাওয়া যায় এবং মূল্যের মুভমেন্টে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন বা মার্কেট থেকে বেরিয়ে আসুন, যাতে হঠাৎ করে মূল্যের রিভার্সাল বা বিপরীতমুখী হওয়ার প্রবণতা এড়ানো যায়।
ফরেক্স ট্রেডিংয়ে নতুন ট্রেডারদের মনে রাখতে হবে প্রতিটি ট্রেড লাভজনক হবে না। দীর্ঘমেয়াদে ট্রেডিংয়ে সফলতা অর্জনের জন্য একটি সুস্পষ্ট কৌশল গ্রহণ এবং সঠিক মানি ম্যানেজমেন্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।