বুধবারের ট্রেডের বিশ্লেষণ
EUR/USD পেয়ারের 1H চার্ট
আবারও EUR/USD পেয়ারের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ফিরে এসেছে, যেমনটি আমরা পূর্বেই সতর্ক করেছিলাম। প্রথম নজরে মনে হতে পারে যে মার্কেটে আবারও ডলার বিক্রি শুরু করার কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছিল না—দিনজুড়ে কোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি। তবে, আমরা মনে করিয়ে দিতে চাই যে হোয়াইট হাউস থেকে ধারাবাহিকভাবে নতুন শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা আসার প্রবাহ থেমে নেই। ঠিক গতকালই ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের বিরুদ্ধে নতুন করে 25% শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন এবং সন্ধ্যার মধ্যেই তা বাড়িয়ে 50% করেন। মনে রাখতে হবে, ভারত সাশ্রয়ী মূল্যে রাশিয়ান তেল কেনা বন্ধে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, আর ট্রাম্প মস্কোর ওপর চাপ প্রয়োগ করে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে চান। ফলে, রাশিয়া থেকে জ্বালানি কিনছে—এমন প্রতিটি দেশের ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট "নৃশংস" হারে শুল্ক আরোপের হুমকি দিচ্ছেন। অর্থাৎ, ট্রাম্প এক ঢিলে দুই পাখি মারছেন: একদিকে নিজেকে বিশ্ব শান্তিদূত হিসেবে তুলে ধরছেন, অন্যদিকে নতুন আমদানি শুল্কের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বাজেটে অর্থসংস্থান করছেন। এদিকে, মার্কেটের বিনিয়োগকারীরা এখনও ট্রাম্পের এই সুরক্ষাবাদী নীতিমালাকে নেতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করে চলেছে।
EUR/USD পেয়ারের 5M চার্ট
বুধবার ৫ মিনিটের টাইমফ্রেমে একটি ট্রেডিং সিগন্যাল গঠিত হয়—যা নিখুঁত ছিল। ইউরোপীয় ট্রেডিং সেশনের শুরুতে এই পেয়ারের মূল্য 1.1571 লেভেল থেকে বাউন্স করে, যার পর সারাদিন একমুখী ঊর্ধ্বমুখী মোমেন্টাম বজায় ছিল। রাতের মধ্যে এই পেয়ারের মূল্য 1.1655–1.1666 এরিয়ায় পৌঁছায়, যেখানে লং পজিশনগুলো লাভজনকভাবে ক্লোজ করা যেত।
বৃহস্পতিবারের ট্রেডিংয়ের কৌশল:
ঘণ্টাভিত্তিক টাইমফ্রেমে, EUR/USD পেয়ারের মূল্যের চলতি বছরের শুরু থেকে সৃষ্ট ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা পুনরায় শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মার্কিন ডলারের "তাসের ঘর" ভেঙে পড়েছে। আমরা আগেই সতর্ক করেছিলাম যে মার্কিন মুদ্রার দীর্ঘমেয়াদি দর বৃদ্ধির জন্য কোনো শক্তিশালী চালিকা শক্তি নেই, এবং ট্রাম্পের নীতিমালা ঘিরে যে "আত্মবিশ্বাস" তৈরি হয়েছিল, তা নিয়েও আমরা প্রশ্ন তুলেছিলাম। শুক্রবারের ঘটনাগুলো আমাদের অবস্থানকে সঠিক প্রমাণ করেছে।
বৃহস্পতিবার, আবারও EUR/USD পেয়ারের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী মুভমেন্ট অব্যাহত থাকতে পারে। সোমবার ও মঙ্গলবারের বিরতির পর এখন মনে হচ্ছে মার্কেটের ট্রেডাররা আবারও ডলার বিক্রিতে প্রস্তুত। শ্রমবাজারের দুর্বল প্রতিবেদনের পাশাপাশি, আমরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট কর্তৃক আরও একবার নতুন শুল্ক আরোপ এবং হুমকির প্রদানের মতো পদক্ষেপ প্রত্যক্ষ করছি। আজ নতুন লং পজিশন ওপেন করার জন্য এই পেয়ারের মূল্যকে অবশ্যই 1.1655–1.1666 এরিয়া ব্রেক করতে হবে। অন্যদিকে, যদি এই জোন থেকে মূল্যের রিবাউন্ড হয়, তাহলে স্বল্পমেয়াদে শর্ট পজিশন ওপেন করা যেতে পারে, যেখানে লক্ষ্যমাত্রা হবে 1.1571।
৫ মিনিটের টাইমফ্রেমে বিবেচ্য গুরুত্বপূর্ণ লেভেলগুলো হলো: 1.1198–1.1218, 1.1267–1.1292, 1.1354–1.1363, 1.1413, 1.1455–1.1474, 1.1527, 1.1552–1.1563–1.1571, 1.1655–1.1666, 1.1740–1.1745, 1.1808, 1.1851, 1.1908।
বৃহস্পতিবার ইউরোজোন বা যুক্তরাষ্ট্রে কোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদনের প্রকাশনা বা ইভেন্ট নির্ধারিত নেই। শুধুমাত্র জার্মানির শিল্প উৎপাদন সংক্রান্ত প্রতিবেদন উল্লেখযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
ট্রেডিং সিস্টেমের মূল নিয়মাবলী:
- সিগনালের শক্তি: যত দ্রুত একটি সিগন্যাল (রিবাউন্ড বা ব্রেকআউট) গঠিত হয়, সিগন্যালটিকে ততই শক্তিশালী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
- ভুল সিগন্যাল: যদি কোনো লেভেলের কাছে দুই বা ততোধিক ভুল ট্রেডিং সিগনাল গঠিত হয়, তাহলে ঐ লেভেল থেকে প্রাপ্ত পরবর্তী সিগন্যালগুলোকে উপেক্ষা করা উচিত।
- ফ্ল্যাট মার্কেট: যখন মার্কেটে ফ্ল্যাট মুভমেন্ট দেখা যায়, তখন পেয়ারগুলোতে একাধিক ভুল সিগন্যাল গঠিত হতে পারে অথবা কোনো সিগন্যাল না-ও গঠিত হতে পারে। মার্কেটে ফ্ল্যাট মুভমেন্টের ইঙ্গিত পাওয়ামাত্র ট্রেডিং বন্ধ করে দেওয়াই ভালো।
- ট্রেডিংয়ের সময়সূচী: ইউরোপীয় সেশন শুরু থেকে মার্কিন সেশনের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ট্রেড ওপেন করুন এবং এরপর সকল ট্রেড ম্যানুয়ালি ক্লোজ করে ফেলুন।
- MACD সিগন্যাল: ঘণ্টাভিত্তিক টাইমফ্রেমে কেবল সেই MACD সিগন্যালগুলোর ওপর ভিত্তি করে ট্রেড করুন, যেগুলো উচ্চ মাত্রার অস্থিরতা এবং ট্রেন্ডলাইন বা ট্রেন্ড চ্যানেলের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া প্রবণতা হিসেবে বিবেচিত।
- নিকটতম লেভেল: যদি দুটি লেভেল খুব কাছাকাছি (৫–২০ পিপসের মধ্যে) অবস্থিত হয়, তাহলে সেগুলোকে সাপোর্ট বা রেজিস্ট্যান্স জোন হিসেবে বিবেচনা করুন।
- স্টপ লস: মূল্য কাঙ্ক্ষিত দিকের দিকে ১৫ পিপস মুভমেন্ট প্রদর্শন করলে, ব্রেকইভেনে স্টপ লস সেট করুন। এতে করে ভুল সিগন্যালের কারণে লোকসানের ঝুঁকি কমে আসে।
চার্টের মূল উপাদান:
সাপোর্ট ও রেজিস্ট্যান্স লেভেল: এই লেভেলগুলো পজিশন ওপেন বা ক্লোজ করার ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং টেক প্রফিট সেট করার ক্ষেত্রেও উপযোগী।
লাল লাইনসমূহ: চ্যানেল বা ট্রেন্ডলাইন, যা বর্তমান প্রবণতা এবং ট্রেডের সম্ভাব্য দিকনির্দেশনা প্রদান করে।
MACD ইনডিকেটর (14,22,3): হিস্টোগ্রাম এবং সিগন্যাল লাইন বিশ্লেষণের জন্য একটি অতিরিক্ত ট্রেডিং সিগন্যালের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট ও প্রতিবেদন: এই তথ্যগুলো অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডারে পাওয়া যায় এবং মূল্যের মুভমেন্টে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন বা মার্কেট থেকে বেরিয়ে আসুন, যাতে হঠাৎ করে মূল্যের রিভার্সাল বা বিপরীতমুখী হওয়ার প্রবণতা এড়ানো যায়।
ফরেক্স ট্রেডিংয়ে নতুন ট্রেডারদের মনে রাখতে হবে প্রতিটি ট্রেড লাভজনক হবে না। দীর্ঘমেয়াদে ট্রেডিংয়ে সফলতা অর্জনের জন্য একটি সুস্পষ্ট কৌশল গ্রহণ এবং সঠিক মানি ম্যানেজমেন্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
