এই সপ্তাহে, ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিতব্য প্রতিবেদনের পূর্ণাঙ্গ ফলাফল ওপর ভিত্তি করে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করবে — যার মাধ্যমে ইউরোজোনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতির ওপর মার্কিন শুল্কের প্রভাব নির্ধারণ করার চেষ্টা করা হবে।

এই সপ্তাহে ইউরোজোনের চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের জিডিপির প্রাথমিক পূর্বাভাস প্রকাশিত হবে, যা ইসিবি'র দুই দিনব্যাপী মুদ্রানীতিসংক্রান্ত বৈঠকের ফলাফল ঘোষণার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে প্রকাশিত হতে পারে।
এই প্রাথমিক জিডিপি প্রতিবেদনের ইউরোজোনের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির একটি ব্যারোমিটার হিসেবে বিবেচিত হবে। বিশ্লেষকেরা সূচকটির সামান্য ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিচ্ছেন, তবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং চলমান ভূরাজনৈতিক ঝুঁকির প্রেক্ষাপটে প্রকৃত ফলাফল প্রত্যাশার তুলনায় কম হতে পারে। এই ধরনের ফলাফল ইসিবিকে তাদের আর্থিক নীতিমালা পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করতে পারে এবং অর্থনীতিকে উদ্দীপিত করতে অতিরিক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন তৈরি হতে পারে।
ভবিষ্যতের নীতিনির্ধারণী কর্মপরিকল্পনা বুঝে নেয়ার জন্য ইসিবির সুদের হার সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত এবং ব্যাংকটির প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্ডের পরবর্তী প্রেস কনফারেন্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। সাধারণভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ইসিবির সুদের হার অপরিবর্তিত রাখবে; তবে বিনিয়োগকারীরা গভীরভাবে খেয়াল রাখবেন লাগার্ডের বক্তব্যে মুদ্রানীতির আরও নমনীয় কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায় কিনা।
মুদ্রাস্ফীতি ও এটির হার বৃদ্ধির পূর্বাভাসে পরিবর্তনের মাধ্যমে লাগার্ডের অবস্থানে এই ধরনের ইঙ্গিত পাওয়া যেতে পারে, অথবা অ্যাসেট ক্রয় কর্মসূচির বিস্তারিত বিশ্লেষণের মাধ্যমেও ইঙ্গিত পাওয়া যেতে পারে। যদি ইসিবি অর্থনীতিকে অতিরিক্ত প্রণোদনা দেওয়ার প্রস্তুতির ইঙ্গিত দেয়, তাহলে ইউরো ও ইউরোপীয় অ্যাসেটের দরপতন ঘটাতে পারে। বিপরীতে, আরও হকিশ বা কঠোর অবস্থান মার্কেটে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
এই সপ্তাহে প্রকাশিতব্য অক্টোবর মাসের মুদ্রাস্ফীতির প্রতিবেদন প্রায় সমান গুরুত্ব বহন করবে, যা ইসিবির বৈঠকের পরদিন প্রকাশিত হবে। গত মাসে ইউরোজোনের মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল 2.2%, এবার সেটি কমে 2.1%-এ পৌঁছানোর পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। এদিন ইসিবি তাদের ব্যাংক ঋণ জরিপ প্রকাশ করবে, যা বাস্তব অর্থনীতিতে মুদ্রানীতি কতটা কার্যকরভাবে সফল হচ্ছে, তা মূল্যায়নে সহায়ক হবে।
বর্তমানে, শ্রমবাজার দৃঢ় অবস্থানে থাকলেও ভোক্তা আস্থা বেশ দুর্বল রয়েছে। GDP প্রতিবেদনে এবার স্পষ্টভাবে দেখা যাবে যে ব্যক্তিগত খরচের পুনরুদ্ধারের ধারাবাহিকতা বজায় আছে কিনা। দুর্বল অভ্যন্তরীণ চাহিদা, বহির্বিশ্বের চাপ এবং উৎপাদন খাতে উৎপাদন সক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার না হওয়ার প্রেক্ষাপটে, অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করছেন যে পূর্বাভাস অনুযায়ী বিনিয়োগ কার্যক্রমের দ্রুত পুনরুদ্ধার নাও হতে পারে — যা অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক সংকেত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
EUR/USD পেয়ারের টেকনিক্যাল পূর্বাভাস
বর্তমানে ক্রেতাদের লক্ষ্য হবে এই পেয়ারের মূল্যকে 1.1650 লেভেলে পুনরুদ্ধার করা। শুধুমাত্র এর পরই এই পেয়ারের মূল্যের 1.1675 লেভেলে পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা সম্ভব হবে। সেখান থেকে এই পেয়ারের মূল্য 1.1725-এর দিকে অগ্রসর হতে পারে, তবে বড় ট্রেডারদের সমর্থন ছাড়া এটি করা বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে। চূড়ান্ত লক্ষ্যমাত্রা হবে 1.1755 লেভেল। অন্যদিকে, যদি এই পেয়ারের মূল্য কমে যায়, তাহলে মূল্য 1.1620 লেভেলের আশেপাশে থাকা অবস্থায় উল্লেখযোগ্য ক্রয় কার্যক্রমের প্রত্যাশা করা হচ্ছে। যদি বড় ক্রেতারা সেখানে সক্রিয় না হয়, তাহলে ধৈর্য ধরে 1.1600 লেভেল পুনরায় টেস্ট হওয়ার জন্য অপেক্ষা করাই ভালো হবে অথবা 1.1580 লেভেল থেকে লং পজিশন ওপেন করার সুযোগ খোঁজা যেতে পারে।
GBP/USD পেয়ারের টেকনিক্যাল পূর্বাভাস
পাউন্ডের ক্রেতারা এই পেয়ারের মূল্যের নিকটতম রেজিস্ট্যান্স 1.3335 ব্রেক করানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। শুধুমাত্র এই লেভেল ব্রেকআউটের মাধ্যমেই মূল্যের 1.3355 লেভেলের দিকে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা সম্ভব হবে — তবে মূল্যের এই লেভেলের উপরে ওঠা যথেষ্ট কঠিন হতে পারে। চূড়ান্ত লক্ষ্যমাত্রা থাকবে 1.3385 লেভেল। অন্যদিকে, যদি এই পেয়ারের মূল্য কমে যায়, তাহলে মূল্য 1.3305 লেভেলের আশেপাশে থাকা অবস্থায় বিক্রেতারা আবারও নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করবে। যদি তারা এতে সফল হয়, তাহলে এই রেঞ্জের ব্রেক করে মূল্য নিম্নমুখী হলে সেটি GBP/USD পেয়ারের বুলিশ পজিশনে বড় ধাক্কা দিতে পারে এবং মূল্য 1.3280 পর্যন্ত নেমে যেতে পারে, সেখান থেকে সম্ভাব্যভাবে 1.3250-এর দিকেও দরপতন হতে পারে।