বুধবারের ট্রেডিংয়ের পর্যালোচনা:
EUR/USD পেয়ারের 1-ঘন্টার চার্ট

বুধবার EUR/USD কারেন্সি পেয়ারের বেশ আকর্ষণীয় ট্রেডিং পরিলক্ষিত হয়েছে। মনে করিয়ে দেই, গতকাল রাতেই ফেডারেল ওপেন মার্কেট কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল, এবং আমরা আগে থেকেই সতর্ক করে দিয়েছিলাম যে ভোলাটিলিটি বা অস্থিরতার মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি—তবে একইসাথে এটাও বলেছিলাম যে, এই ইভেন্ট ইউরো বা ডলারের মূল্যের বড় কোনো পরিবর্তন ঘটাবে না। শেষ পর্যন্ত আমরা কী দেখলাম? ইউরোপীয় মুদ্রা তীব্র দরপতনের শিকার হয়, কিন্তু ঘন্টাভিত্তিক টাইমফ্রেমে সেই একই সাইডওয়েজ চ্যানেলের মধ্যেই মূল্যের মুভমেন্ট সীমাবদ্ধ ছিল। একইভাবে, দৈনিক টাইমফ্রেমেও এই পেয়ারের মূল্য ফ্ল্যাট রেঞ্জের মধ্যেই রয়ে গেছে। অর্থাৎ, ভোলাটিলিটি তো ছিল, কিন্তু টেকনিক্যাল চিত্রে কোনো পরিবর্তন হয়নি। জেরোম পাওয়েলের বক্তব্যেও ট্রেডারদের জন্য মৌলিকভাবে নতুন কিছু ছিল না, আর ফেডও প্রত্যাশিত সিদ্ধান্তই ঘোষণা করে। আমরা মূলত আবেগ-প্রবণ ট্রেডিংয়ের একটি দারুণ উদাহরণ দেখলাম। বৃহস্পতিবার সকালে দেখা যাচ্ছে, ফেডের বৈঠকের আগে এই পেয়ারের মূল্য যেই অবস্থানে ছিল, ইতোমধ্যেই মূল্য সেখানেই ফিরে এসেছে, যেটা নিয়েও আমরা পূর্বেই সতর্ক করেছিলাম—তড়িঘড়ি করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন নেই।
EUR/USD পেয়ারের 5M চার্ট

৫ মিনিটের টাইমফ্রেমে, বুধবার অত্যন্ত কার্যকর দুইটি ট্রেডিং সিগন্যাল গঠিত হয়েছিল। প্রথমে, এই পেয়ারের মূল্য 1.1655-1.1666 এরিয়া থেকে বাউন্স করেছিল, এরপর 1.1571-1.1584 এরিয়া স্পর্শ করে আবারও বাউন্স করে। যার ফলে, নতুন ট্রেডাররা প্রথমে শর্ট পজিশন এবং পরে লং পজিশন ওপেন করতে পারতেন। দুটি ট্রেডই লাভজনক হতে পারত, যদিও ফেডের বৈঠকের পরে মার্কেটে অনিশ্চিত প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে, এই ট্রেডগুলো কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।
বৃহস্পতিবার কীভাবে ট্রেডিং করতে হবে:
ঘণ্টাভিত্তিক টাইমফ্রেমে EUR/USD পেয়ারের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুরু হওয়ার ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে। নতুন একটি অ্যাসেন্ডিং ট্রেন্ড লাইন গঠিত হয়েছে এবং মার্কিন ডলারের জন্য সামগ্রিক মৌলিক ও সামষ্টিক অর্থনোইতিক প্রেক্ষাপট এখনো প্রতিকূল। ফলে, আমরা 2025 সালে পরিলক্ষিত ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা আবার শুরু হওয়ার প্রত্যাশা করছি। যদিও দৈনিক টাইমফ্রেমে এখনো এই পেয়ারের মূল্য ফ্ল্যাট রেঞ্জের মধ্যে অবস্থান করছে, যা মার্কেটে স্বল্প মাত্রার ভোলাটিলিটি ও লোয়ার টাইমফ্রেমে অযৌক্তিক মুভমেন্টের মূল কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। গতকাল এই পেয়ারের মূল্য ট্রেন্ড লাইনটি ব্রেক করেছিল, তবে এই মুহূর্তে আমরা সেটিকে বিবেচনায় নিচ্ছি না।
বৃহস্পতিবার, নতুন ট্রেডাররা আবারও 1.1655-1.1666 এরিয়া থেকে ট্রেড করতে পারেন। এই এরিয়া থেকে নতুন করে মূল্যের বাউন্স হলে সেটি শর্ট পজিশন ওপেন করার সুযোগ দিতে পারে। তবে, যদি এই পেয়ারের মূল্য এই এরিয়া ব্রেক করে, তাহলে লং পজিশন ওপেন করার সুযোগ সৃষ্টি হবে, যেখানে প্রাথমিকভাবে এই পেয়ারের মূল্যের 1.1745-এর দিকে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা যেতে পারে।
৫ মিনিটের টাইমফ্রেমে ট্রেডিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ লেভেলগুলো হচ্ছে 1.1354-1.1363, 1.1413, 1.1455-1.1474, 1.1527, 1.1571-1.1584, 1.1655-1.1666, 1.1745-1.1754, 1.1808, 1.1851, 1.1908, 1.1970-1.1988. বৃহস্পতিবার ইউরোজোনের বেশ কয়েকটি পূর্ণাঙ্গ ও গুরুত্বপূর্ণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে, যার মধ্যে কিছু প্রতিবেদনের ফলাফল মার্কেটে উল্লেখযোগ্য প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে, জার্মানিতে বেকারত্বের হার, জিডিপি এবং মূল্যস্ফীতি সম্পর্কিত প্রতিবেদনে প্রকাশিত হবে। এছাড়াও, ইউরোজোনের তৃতীয় প্রান্তিকের প্রাথমিক জিডিপি প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে এবং দিনের মধ্যভাগে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (ইসিবি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যা হয়তো ফেডের গতকালের বৈঠকের মতোই নতুন করে আবেগপ্রবণভাবে ট্রেডিং করার প্রবণতা সৃষ্টি করতে পারে।
ট্রেডিং সিস্টেমের মূল নিয়মাবলী:
- সিগনালের শক্তি: যত দ্রুত একটি সিগন্যাল (রিবাউন্ড বা ব্রেকআউট) গঠিত হয়, সিগন্যালটিকে ততই শক্তিশালী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
- ভুল সিগন্যাল: যদি কোনো লেভেলের কাছে দুই বা ততোধিক ভুল ট্রেডিং সিগনাল গঠিত হয়, তাহলে ঐ লেভেল থেকে প্রাপ্ত পরবর্তী সিগন্যালগুলোকে উপেক্ষা করা উচিত।
- ফ্ল্যাট মার্কেট: যখন মার্কেটে ফ্ল্যাট মুভমেন্ট দেখা যায়, তখন পেয়ারগুলোতে একাধিক ভুল সিগন্যাল গঠিত হতে পারে অথবা কোনো সিগন্যাল না-ও গঠিত হতে পারে। মার্কেটে ফ্ল্যাট মুভমেন্টের ইঙ্গিত পাওয়ামাত্র ট্রেডিং বন্ধ করে দেওয়াই ভালো।
- ট্রেডিংয়ের সময়সূচী: ইউরোপীয় সেশন শুরু থেকে মার্কিন সেশনের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ট্রেড ওপেন করুন এবং এরপর সকল ট্রেড ম্যানুয়ালি ক্লোজ করে ফেলুন।
- MACD সিগন্যাল: ঘণ্টাভিত্তিক টাইমফ্রেমে কেবল সেই MACD সিগন্যালগুলোর ওপর ভিত্তি করে ট্রেড করুন, যেগুলো উচ্চ মাত্রার অস্থিরতা এবং ট্রেন্ডলাইন বা ট্রেন্ড চ্যানেলের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া প্রবণতা হিসেবে বিবেচিত।
- নিকটতম লেভেল: যদি দুটি লেভেল খুব কাছাকাছি (৫–২০ পিপসের মধ্যে) অবস্থিত হয়, তাহলে সেগুলোকে সাপোর্ট বা রেজিস্ট্যান্স জোন হিসেবে বিবেচনা করুন।
- স্টপ লস: মূল্য কাঙ্ক্ষিত দিকের দিকে ১৫ পিপস মুভমেন্ট প্রদর্শন করলে, ব্রেকইভেনে স্টপ লস সেট করুন। এতে করে ভুল সিগন্যালের কারণে লোকসানের ঝুঁকি কমে আসে।
চার্টে কী কী রয়েছে:
- সাপোর্ট ও রেজিস্ট্যান্স লেভেল: এই লেভেলগুলো পজিশন ওপেন বা ক্লোজ করার ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে কাজ করে এবং টেক প্রফিট সেট করার ক্ষেত্রেও উপযোগী।
- লাল লাইনসমূহ: চ্যানেল বা ট্রেন্ডলাইন, যা বর্তমান প্রবণতা এবং ট্রেডের সম্ভাব্য দিকনির্দেশনা প্রদান করে।
- MACD ইনডিকেটর (14,22,3): হিস্টোগ্রাম এবং সিগন্যাল লাইন বিশ্লেষণের জন্য একটি অতিরিক্ত ট্রেডিং সিগন্যালের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
নতুন ট্রেডারদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট ও প্রতিবেদন: এই তথ্যগুলো অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডারে পাওয়া যায় এবং মূল্যের মুভমেন্টে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন বা মার্কেট থেকে বেরিয়ে আসুন, যাতে হঠাৎ করে মূল্যের রিভার্সাল বা বিপরীতমুখী হওয়ার প্রবণতা এড়ানো যায়।
ফরেক্স ট্রেডিংয়ে নতুন ট্রেডারদের মনে রাখতে হবে প্রতিটি ট্রেড লাভজনক হবে না। দীর্ঘমেয়াদে ট্রেডিংয়ে সফলতা অর্জনের জন্য একটি সুস্পষ্ট কৌশল গ্রহণ এবং সঠিক মানি ম্যানেজমেন্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।