যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ মাত্র ০.২৫ শতাংশ পয়েন্ট সুদের হার কমিয়েছে — ঠিক যেমনটা প্রত্যাশিত ছিল, সেই ঘোষণার পরে মার্কিন ডলারের দর আরও বৃদ্ধি পায়। এই ঘোষণা আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই ডোনাল্ড ট্রাম্প মন্তব্য করেন, তিনি আরও বেশি মাত্রায় সুদের হার হ্রাস চান, যাতে করে অনিশ্চিত অবস্থায় থাকা মার্কিন অর্থনীতি কিছুটা সহায়তা পায়।
নিজের বক্তব্যে ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেন, ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বেকারত্ব ও মূল্যস্ফীতি দুটোই বাড়ছে, এবং সরকারি কার্যক্রমে শাটডাউনের কারণে অর্থনৈতিক প্রতিবেদনগুলোর প্রকৃত ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে — যা আগেই রাজনৈতিক প্রভাবের আশঙ্কায় ঘেরা ছিল। তাই, পাওয়েলের মতে, আগামী মাসে আরেকবার সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা খুবই কম।

ট্রেডাররা তাৎক্ষণিকভাবে এই সিদ্ধান্তের প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে — এবং এই প্রতিক্রিয়াটি মিশ্র ছিল। একদিকে, বর্তমান স্তরেই সুদের হার স্থিতিশীল রাখায় সেটি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ফেড অর্থনীতির বর্তমান অবস্থান নিয়ে আতঙ্কিত নয়। অন্যদিকে, সুদের হার আরও হ্রাস না করায় শ্রমবাজার ও সামগ্রিক অর্থনীতি বহিরাগত ঝুঁকির মুখে পড়ে গেল — বিশেষ করে চলমান বাণিজ্যিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে।
পাওয়েলের বক্তব্যকে অনেকটা ফিন্যান্সিয়াল মার্কেটে তৈরি হওয়া প্রত্যাশাগুলোকে কিছুটা শান্ত করার চেষ্টা হিসেবেই দেখা হচ্ছে, যেখানে তাঁর বক্তব্য দেওয়ার আগেই ডিসেম্বর মাসে আরও ২৫ বেসিস পয়েন্ট হার কমার সম্ভাবনা ৯০%-এরও বেশি ছিল। পাওয়েল বলেন, "ডিসেম্বরের বৈঠকে মূল সুদের হার আরও একবার হ্রাস করা হবে — তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।"
ফেডারেল ওপেন মার্কেট কমিটির (FOMC) সদস্যরা ১০-২ ভোটের ব্যবধানে ফেডারেল ফান্ডস রেটের লক্ষ্যমাত্রা ০.২৫ শতাংশ পয়েন্ট কমিয়ে 3.75%–4.00%-এ নামিয়ে আনে। একই সঙ্গে ফেড ঘোষণা দেয় যে তারা ১ ডিসেম্বর থেকে অ্যাসেট-পোর্টফোলিও ধীরগতিতে হ্রাস করার প্রক্রিয়া শেষ করবে — যে প্রক্রিয়া ২০২২ সালে শুরু হয়েছিল । সেই সময় থেকে ফেড $২ ট্রিলিয়নেরও বেশি ট্রেজারি ও মর্টগেজ-ব্যাকড সিকিউরিটিজ বিক্রি করেছে এবং তাদের ব্যালান্সশিট এখন $6.6 ট্রিলিয়নের নিচে নেমে এসেছে — যা ২০২০ সালের পর সর্বনিম্ন।
বুধবারের বৈঠক-পরবর্তী বিবৃতিতে, ফেডের নীতিনির্ধারকরা পুনরায় বলেন যে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার কমেছে এবং সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চাকরি হারানোর ঝুঁকি বাড়ছে। কর্মকর্তারা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে "মাঝারি" হিসেবে উল্লেখ করেন এবং জানান, বছরের শুরু থেকে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে এবং এখনো তা তুলনামূলকভাবে উচ্চ পর্যায়ে রয়ে গেছে।
উপরোক্ত বিষয়গুলোই মার্কিন ডলারকে আরও শক্তিশালী করেছে এবং কারেন্সি মার্কেটে ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাসেটগুলোকে দুর্বল করে ফেলেছে।
EUR/USD পেয়ারের টেকনিক্যাল পূর্বাভাস
বর্তমানে ক্রেতাদের এই পেয়ারের মূল্যকে 1.1645 লেভেল স্পষ্টভাবে ব্রেকআউট করে ঊর্ধ্বমুখী করতে হবে। শুধুমাত্র এর ফলে 1.1668 লেভেল টেস্টের সম্ভাবনা উন্মুক্ত হবে। সেখান থেকে পেয়ারটির মূল্য 1.1696 পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারে, যদিও মার্কেটের বড় ট্রেডারদের সমর্থন ছাড়া তা করা কঠিন হবে। সর্বোচ্চ ঊর্ধ্বমুখী লক্ষ্যমাত্রা থাকবে 1.1725। যদি এই পেয়ারের মূল্য 1.1621 পর্যন্ত নেমে যায়, তাহলে আমি বড় ক্রেতাদের সক্রিয় হওয়ার প্রত্যাশা করবো। যদি কেউ সেখানে সক্রিয় না হয়, তাহলে এই পেয়ারের মূল্যের 1.1602 লেভেল পুনরায় টেস্টের জন্য অপেক্ষা করাই ভালো হবে, অথবা 1.1580 থেকে লং পজিশন ওপেন করার সুযোগ দেখতে হবে।
GBP/USD পেয়ারের টেকনিক্যাল পূর্বাভাস
পাউন্ড ক্রেতাদের প্রাথমিক লক্ষ্য থাকবে এই পেয়ারের মূল্যকে 1.3240 লেভেলে নিয়ে যাওয়া এবং এই রেজিস্ট্যান্স ব্রেক করা। কেবলমাত্র এই লেভেলের ওপরে উঠতেই মূল্যের 1.3270-এর দিকে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা যাবে, যা অতিক্রম করা তুলনামূলকভাবে কঠিন হবে। সবচেয়ে দূরবর্তী ঊর্ধ্বমুখী লক্ষ্যমাত্রা হবে 1.3310 এরিয়া।
অন্যদিকে, যদি এই পেয়ারের মূল্য কমে যায়, তাহলে মূল্য 1.3190 এরিয়ায় থাকা অবস্থায় বিক্রেতারা মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করবে। যদি তারা সফল হয়, তাহলে এই রেঞ্জ ব্রেক করে মূল্য নিম্নমুখী হলে সেটি GBP/USD পেয়ারের বুলিশ পজিশনে বড় ধাক্কা দিতে পারে এবং মূল্য কমে 1.3170-এ পৌঁছাতে পারে — যারপর দরপতনের মাত্রা আরও বিস্তৃত হয়ে মূল্য 1.3140-এর দিকেও নেমে যেতে পারে।