এর আগের দুটি বৈঠকে সুদের হার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর, ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ইসিবি) আজ তাদের পরপর তৃতীয় বৈঠকেও সুদের হার অপরিবর্তিত রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সদ্যপ্রাপ্ত কিছু নতুন প্রতিবেদনে বাণিজ্য উত্তেজনা এবং ফ্রান্সে উদ্ভূত রাজস্ব সংকট কতখানি ক্ষতিসাধন করেছে — তা বোঝার ক্ষেত্রে আরও স্পষ্ট ধারণা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এই সিদ্ধান্তের পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্ডের বক্তব্য আরও ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে, যার মাধ্যমে ভবিষ্যতের নীতি অবস্থানের দিকনির্দেশনা ও ইঙ্গিত পাওয়া যেতে পারে। ইউরোজোনে মুদ্রাস্ফীতির হার এখনো ইসিবি'র ২%-এর লক্ষ্যমাত্রার সামান্য ওপরে অবস্থান করছে, তবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মন্থরতা ক্রমেই দৃশ্যমান হয়ে উঠছে — যা ইসিবি'র নীতিনির্ধারকদের সামনে একটি দ্বিধাগ্রস্ত পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এছাড়া, সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনের পর ফ্রান্সে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বিনিয়োগ ও ভোক্তা ব্যয়ের ওপরও প্রভাব ফেলছে। এই প্রতিকূল পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নিয়ে ইসিবি যেকোনো নীতিগত অবস্থানের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সতর্ক অবস্থানেই থাকতে পারে।
অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করছেন, ইসিবি নতুন করে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে অর্থনৈতিক অবস্থা এবং মুদ্রাস্ফীতির সম্ভাব্য গতিপথ সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা পাওয়ার অপেক্ষা করবে। এটি বিশেষভাবে প্রযোজ্য মজুরি এবং কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফার ক্ষেত্রেও, যা বর্তমান অর্থনৈতিক মন্থরতার প্রেক্ষিতে প্রত্যাশানুযায়ী নাও বৃদ্ধি প্রদর্শন পারে। ইসিবির পরবর্তী বৈঠকটি ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে বলে নির্ধারিত রয়েছে, এবং সে সময় পর্যন্ত সর্বশেষ অর্থনৈতিক প্রতিবেদন সম্ভব হবে।
বেশিরভাগ বিশ্লেষকদের মতে, বৃহস্পতিবারের বৈঠকে ডিপোজিট রেট ২% স্তরেই অপরিবর্তিত থাকবে। অর্থনীতিবিদদের ধারণা, ঋণ নেয়ার ব্যয় ২০২৭ সাল পর্যন্ত এই মাত্রায়ই থাকবে — যদি না ডিসেম্বরে হালনাগাদ পূর্বাভাসে মুদ্রাস্ফীতির হার প্রত্যাশার তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম দেখানো হয়।
এখানে লক্ষ্যনীয় যে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইসিবির কর্মকর্তারা প্রায় প্রতিনিয়ত প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্ডের বক্তব্যকে অনুসরণ করে বলেছেন যে, বর্তমানে ইউরোজোনে বিদ্যমান মুদ্রানীতি "উপযুক্ত স্থলে" রয়েছে।
তবে কিছু ঝুঁকি এখনো রয়ে গেছে। একদিকে আগামী বছর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা থাকলেও, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্যিক দ্বন্দ্ব ইউরোপেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফ্রান্সে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, যেখানে প্রধানমন্ত্রী সেবাস্তিয়েন লেকর্নু ক্রেডিট রেটিং ডাউনগ্রেডের চাপে আছেন, এবং জার্মানিতে একই ধরনের পরিস্থিতি বিরাজ করছে, যেখানে চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জ-এর দল নির্বাচনী জরিপে ডানপন্থী প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে পিছিয়ে রয়েছে — এসবও ইউরোপের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ঝুঁকির সৃষ্টি করছে।
আজ প্রকাশিতব্য ইউরোপীয় প্রধান অর্থনীতিগুলোর তৃতীয় প্রান্তিকের প্রতিবেদনে এইসব প্রভাব অর্থনীতিকে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে — তা বোঝা যাবে। তবে, প্রতিবেদনের ফলাফল যদি আরও নেতিবাচকও হয়, তারপরও আগামী কয়েক মাসে ইসিবি'র পক্ষ থেকে আরেকবার সুদের হার হ্রাসের সম্ভাবনা অত্যন্ত কম বলেই মনে করা হচ্ছে।
EUR/USD পেয়ারের টেকনিক্যাল পূর্বাভাস
বর্তমানে ক্রেতাদের এই পেয়ারের মূল্যকে 1.1645 লেভেল স্পষ্টভাবে ব্রেকআউট করে ঊর্ধ্বমুখী করতে হবে। শুধুমাত্র এর ফলে 1.1668 লেভেল টেস্টের সম্ভাবনা উন্মুক্ত হবে। সেখান থেকে পেয়ারটির মূল্য 1.1696 পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারে, যদিও মার্কেটের বড় ট্রেডারদের সমর্থন ছাড়া তা করা কঠিন হবে। সর্বোচ্চ ঊর্ধ্বমুখী লক্ষ্যমাত্রা থাকবে 1.1725। যদি এই পেয়ারের মূল্য 1.1621 পর্যন্ত নেমে যায়, তাহলে আমি বড় ক্রেতাদের সক্রিয় হওয়ার প্রত্যাশা করবো। যদি কেউ সেখানে সক্রিয় না হয়, তাহলে এই পেয়ারের মূল্যের 1.1602 লেভেল পুনরায় টেস্টের জন্য অপেক্ষা করাই ভালো হবে, অথবা 1.1580 থেকে লং পজিশন ওপেন করার সুযোগ দেখতে হবে।
GBP/USD পেয়ারের টেকনিক্যাল পূর্বাভাস
পাউন্ড ক্রেতাদের প্রাথমিক লক্ষ্য থাকবে এই পেয়ারের মূল্যকে 1.3240 লেভেলে নিয়ে যাওয়া এবং এই রেজিস্ট্যান্স ব্রেক করা। কেবলমাত্র এই লেভেলের ওপরে উঠতেই মূল্যের 1.3270-এর দিকে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা যাবে, যা অতিক্রম করা তুলনামূলকভাবে কঠিন হবে। সবচেয়ে দূরবর্তী ঊর্ধ্বমুখী লক্ষ্যমাত্রা হবে 1.3310 এরিয়া।
অন্যদিকে, যদি এই পেয়ারের মূল্য কমে যায়, তাহলে মূল্য 1.3190 এরিয়ায় থাকা অবস্থায় বিক্রেতারা মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করবে। যদি তারা সফল হয়, তাহলে এই রেঞ্জ ব্রেক করে মূল্য নিম্নমুখী হলে সেটি GBP/USD পেয়ারের বুলিশ পজিশনে বড় ধাক্কা দিতে পারে এবং মূল্য কমে 1.3170-এ পৌঁছাতে পারে — যারপর দরপতনের মাত্রা আরও বিস্তৃত হয়ে মূল্য 1.3140-এর দিকেও নেমে যেতে পারে।